এ বার আর রোগীর পরিজন নয়, ওয়ার্ড-মাস্টারদের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বিরোধে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। সমস্যায় পড়লেন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। জুনিয়র ডাক্তাররা একাধিক ওয়ার্ড-মাস্টারের নামে ‘খারাপ ব্যবহারে’র অভিযোগ করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দেন। তারপরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শুদ্ধধন বটব্যাল বলেন, “ভুল বোঝাবুঝি থেকে একটা সমস্যা হয়েছিল। আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধানের চেষ্টা চলছে।”
মেদিনীপুর মেডিক্যাল সূত্রের খবর, গোলমালের সূত্রপাত ডেথ-সার্টিফিকেট ইস্যু করা নিয়ে। সাধারণত, ডেথ-সার্টিফিকেটে আরএমও (রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসার) বা ইএমও-র (ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার) সই থাকে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সিনিয়র ডাক্তারদের অনুপস্থিতিতে হাউসস্টাফেরাই ওই সার্টিফিকেটে সই করে দেন বলে অভিযোগ। বিশেষ করে, রাতের দিকে মেডিক্যালে সিনিয়র ডাক্তারদের খুঁজে পাওয়াই অসম্ভব হয়ে ওঠে। হাউসস্টাফ ও ইনটার্নরাই চিকিৎসা পরিষেবার দেখভাল করেন। রাতে কারও মৃত্যু হলেও তাঁরাই ডেথ-সার্টিফিকেটে সই করেন। কিন্তু এই অবস্থা পাল্টাতে চেয়ে ‘তৎপর’ হয়েছিলেন একাংশ ওয়ার্ড-মাস্টার। যার জেরেই এই ঘটনা। মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, একাংশ ওয়ার্ড-মাস্টার সিদ্ধান্ত নেন, এ বার থেকে আরএমও বা ইএমও-র সই না-থাকলে তাঁরা ডেথ-সার্টিফিকেট ‘ইস্যু’ করবেন না। কারণ, এ ক্ষেত্রে পরে কোনও সমস্যা হলে তাঁদেরই তার জের সামলাতে হবে। বুধবার রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যালে এক রোগীর মৃত্যু হয়। রাত ১০ টা ১৫ নাগাদ কর্তব্যরত ওয়ার্ড-মাস্টার ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য আরএমও-র খোঁজ করেন। কিন্তু তাঁর দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ।
একাংশ ওয়ার্ড-মাস্টারের বিরুদ্ধেই সরব হন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের দাবি, রেজিস্ট্রেশন নম্বর রয়েছে, ডেথ-সার্টিফিকেটে এমন যে কেউই সই করতে পারেন। দাবি উড়িয়ে এক ওয়ার্ড-মাস্টার বলেন, “রেজিস্ট্রেশন নম্বর রয়েছে, এমন হাউসস্টাফ সই করতেই পারেন। কিন্তু, সে ক্ষেত্রে সার্টিফিকেটে আরও একটি কাউন্টার-সই থাকা চাই। সেটি আরএমও বা ইএমও-কে করতে হয়।” বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অজিত মাইতি নামে এক ওয়ার্ড-মাস্টারকে ‘ঘেরাও’ করে রাখা হয় বলেও অভিযোগ। ওয়ার্ড-মাস্টারদের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের এই ‘বিরোধে’ ব্যাহত হয় চিকিৎসা পরিষেবাও। বৃহস্পতিবার সন্ধের পর থেকেই অনেক ওয়ার্ডে সময়মতো ডাক্তাররা পৌঁছননি বলে রোগীর পরিবারের লোকজনদের অভিযোগ। শুক্রবার সকালে এ নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলেন হাসপাতাল সুপার যুগল কর। পরে সুপার বলেন, “পরিষেবা এখন স্বাভাবিকই রয়েছে। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।” ঘটনার জেরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বিড়ম্বনায় পড়েছেন। সিনিয়র ডাক্তাররা কী এখন সময়মতো আসছেন? অধ্যক্ষের বক্তব্য, “আসছেন। এ ক্ষেত্রে কোনও অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হয়।” তাঁর কথায়, “এখানে এ বার ডিজিট্যাল অ্যাটেডেন্টস ব্যবস্থা চালু করারও চেষ্টা চলছে।” |