|
|
|
|
ক্ষতিপূরণ দাবি করে গোলমাল নাগরাকাটায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মালবাজার |
কুকুরের কামড়ানোর ঘটনা নিয়ে মারপিটের জেরে পুলিশকর্মীদের নিগ্রহ ও থানায় ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটল। বৃহস্পতিবার রাত ১১টা নাগাদ ডুয়ার্সের নাগরাকাটা থানায় ঘটনাটি ঘটেছে। হামলাকারীরা চেয়ার-টেবিল আছড়ে ভেঙে, কিছু নথিপত্র লণ্ডভণ্ড করে দেয় বলে পুলিশের অভিযোগ। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে থানার মধ্যে থেকেই কংগ্রেসের নাগরাকাটার ব্লক সভাপতি তথা ইনটাক অনুমোদিত চা শ্রমিক সংগঠন ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্সের (এনইউপিডব্লু) নেতা অমরনাথ ঝা ও তাঁর ৬৯ জন অনুগামীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত হয়েছে দুটি ছোট গাড়ি, একটি বাইক ও সাইকেল। পুলিশের অভিযোগ, ধৃতরা যানবাহনে চড়েই থানায় জড়ো হন। শুক্রবার ধৃতদের জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে পাঠানো হলে তাঁদের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। সরকারি আইনজীবী সুব্রত সাহা বলেন, “আগামী ২৩ মে ধৃতদের ফের আদালতে হাজির করে সেদিনই পুলিশকে কেস ডায়েরি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।” জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে অমরনাথ ঝা-এর নেতৃত্বে শ’খানেক লোক নাগরাকাটায় থানায় গিয়ে ভাঙচুর চালান। পুলিশকে নিগ্রহ করেন। খবর পেয়ে এসডিপিওর নেতৃত্বে পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। তখনও ভাঙচুর চলছিল। সব কিছুই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব সন্দেহ করছেন। কংগ্রেসের তরফে নাগরাকাটা থানার ওসির অপসারণ চেয়ে আগামী ২২ মে পুলিশ সুপার দফতর এবং ২৬ মে নাগরাকাটা থানা ঘেরাও অভিযান হবে। পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত বুধবার দুপুরে। নাগরাকাটার চ্যাংমারি চা বাগানে কুকুরের কামড়ে এতোয়া ইন্দোয়ার নামে এক ব্যক্তি জখম হন। এতোয়া জন বার্লার অনুগামী বলে পরিচিত। এতোয়ার অভিযোগ, কুকুরটি এনইউপিডব্লু সদস্য ভীম টোপ্পোর। ভীমের কাছে ক্ষতিপূরণ চান জন বার্লার অনুগামীরা। তা দিতে চাননি ভীম। এর পরেই দু’পক্ষের মারপিট হয়। থানায় গিয়ে উভয় তরফেই অভিযোগ জানানো হয়। একটি অভিযোগে অমরনাথবাবুর নামও ছিল। তা নিয়ে মামলা হয়েছে খবর পেয়ে রাতে অনুগামীদের নিয়ে অমরনাথবাবু থানায় যান। তার পরেই ভাঙচুর, পুলিশকর্মী নিগ্রহের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। রাত ১২টা নাগাদ থানায় উপস্থিত সব নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে বিভিন্ন থানার লকআপে পাঠিয়ে দেয় পুলিশ। এদিন আদালতে যাওয়ার পথে অমরনাথবাবু দাবি করেন, “কি মামলা দায়ের হয়েছে সেটা জানতে থানায় যাই। পুলিশকে বলি মিথ্যে মামলা যখন দায়ের করেছেন তখন আমাদের গ্রেফতার করুন। আমরা আত্মসমর্পণ করব। তখনই পুলিশরা আমাদের মারধর শুরু করলেন। কেউ কেউ মদ্যপও ছিলেন মনে হয়।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহন বসুর অভিযোগ, “সিপিএমের আমল থেকে নাগরাকাটা থানার মধ্যেই মদের আসর বসে। রাজ্যে ‘পরিবর্তন’ এলেও এখনও নাগরাকাটা থানা সিপিএমের মদতে চলছে। সে জন্যই এ ষড়যন্ত্রে আমাদের নেতা-কর্মীদের জড়ানো হয়েছে। ” এদিন আদালতে দাঁড়িয়ে জেলা কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি বিশ্বরঞ্জন সরকার পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁর অভিযোগ, “নাগরাকাটার ওসি কংগ্রেসের কাউকে দেখলেই খেপে যান। না হলে কুকুর কামড়ানোর একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস নেতাদের নামে মিথ্যে মামলা দায়ের হবে কেন? নেতারা খোঁজ নিতে গেলে লাঠিপেটা করে তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে।” নাগরাকাটার ওসি সমর দাস জানা, গণতান্ত্রিক দেশে সকলেরই বাক্ স্বাধীনতা রয়েছে। ওসি বলেন, “আমি সরকারি নিয়ম মেনে কাজ করি। কাউকে তোয়াজ করি না। কেউ ভাল বলেন। কেউ খারাপ। যে সব অভিযোগ করা হচ্ছে তা কী কেউ দেখেছেন? যা ঘটেছে সবই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানেন ও দেখেছেন।” মালবাজারের এসডিপিও অরিন্দম সরকার জানান, থানায় বেআইনি ভাবে জড়ো হয়ে ভাঙচুর চালানোর ঘটনা দেখা গিয়েছে। তাঁর কথায়, “যে ভাবে ভাঙচুর চলছিল তা ঠেকাতে যতটুকু বাহিনী দরকার তা দিয়েই প্রতিরোধ করা হয়েছে। ততক্ষণে চেয়ার-টেবিল নথি তছনছ হয়ে যায়।” |
|
|
 |
|
|