সম্মেলন-পর্ব মিটে গেলেও গোষ্ঠী-কোন্দল ভোগাচ্ছে সিপিএমকে! কয়েকটি জেলায় সম্পাদকমণ্ডলী তৈরি হয়ে গেলেও জেলা নেতৃত্বের মধ্যে ‘বিভাজন’ প্রকট। আবার কলকাতা, পূর্ব মেদিনীপুর, হুগলির মতো জেলায় দলের অভ্যন্তরীণ বিবাদের জন্যই নতুন জেলা সম্পাদকমণ্ডলী গড়তে সমস্যা হচ্ছে বলে সিপিএম সূত্রের খবর। তিনটি জেলাতেই সাংগঠনিক ভাবে সিপিএম অবশ্য এখনও ‘দুর্বল’ জায়গায়।
কলকাতা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে জেলা সম্পাদক বদল হওয়ার কথা। কিন্তু কলকাতা জেলার নতুন সম্পাদকের জন্য কোনও নাম নিয়েই ‘সর্বসম্মতি’ গড়ে উঠছে না। জেলা সম্পাদকমণ্ডলী তৈরির ক্ষেত্রেও আলাদা আলাদা গোষ্ঠীর ‘আধিপত্য’ বজায় রাখার লড়াই ঘোরালো হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জেলা সম্পাদকমণ্ডলী নির্বাচনের জন্য জেলা কমিটির বৈঠকের দিনও ক্রমশ পিছোচ্ছে। আগামী সপ্তাহে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের আওতায় বিভিন্ন সংগঠনকে নিয়ে একটি কর্মসূচি রয়েছে। সিপিএমের কলকাতা জেলা নেতৃত্বের একাংশ চাইছেন, ওই কর্মসূচি মিটে যাওয়ার পরে সম্পাদকমণ্ডলী তৈরিতে হাত দিতে।
পূর্ব মেদিনীপুরে জেলা সম্পাদকমণ্ডলী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে ‘লক্ষ্মণ শেঠ-প্রশ্ন’ই। তমলুকের প্রাক্তন সাংসদের জামিনের আবেদনের শুনানি চলছে। রাজ্য সম্মেলনেই তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে রাজ্য কমিটি থেকে। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুরে ‘কোণঠাসা’ সিপিএমের যে সংগঠন রয়েছে, তা মূলত লক্ষ্মণবাবুর দৌলতেই। তাঁর স্ত্রী তমালিকা পণ্ডা শেঠ এ বারও হলদিয়া পুরভোটে প্রার্থী। শেঠ-দম্পতিকে বাদ দিয়ে জেলা সম্পাদকমণ্ডলী গড়লে ‘ঝুঁকি’ নেওয়া হয়ে যাবে, নাকি তাঁদের রেখে দিলে জনমানসে ‘ভাবমূর্তি’ আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই দোলাচলে আটকে রয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব! আগামী মাসের গোড়ায় হলদিয়া ও পাঁশকুড়ায় পুরভোট মিটে গেলে জেলা সম্পাদকমণ্ডলী গঠন হোক, চাইছে দলের একাংশ। রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর আজ, শনিবারই দলীয় কর্মসূচিতে তমলুক যাওয়ার কথা। সেই অবসরে বিষয়টি নিয়ে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর এক প্রস্ত কথা হতে পারে।
হুগলির মূল সমস্যা অনিল বসুই। ‘সাসপেন্ড’ হওয়া অনিলবাবুকে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে না-রাখারই কথা। কিন্তু শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েও জেলায় দলের একাধিক কর্মসূচিতে তিনি যোগ দিয়েছেন। সরাসরি বিমানবাবুর বিরুদ্ধে তোপ দেগে বসা অনিলবাবুকে জেলা নেতৃত্ব থেকে ছেঁটে ফেলার ‘ঝুঁকি’ সুদর্শন রায়চৌধুরীরা নেবেন কি না, দলের অন্দরেই তা এখনও স্পষ্ট নয়। দলের একাংশের বক্তব্য, অনিলবাবুর বিষয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পঞ্চায়েত ভোটে তার প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা ভেবে দেখা হোক। আবার অন্য একাংশের বক্তব্য, আরামবাগেও এখন অনিলবাবুর সেই ‘দাপট’ নেই। ফলে, উভয় সঙ্কটে রয়েছে সিপিএম! |