শুকনো বাতাস ঠেলে সরিয়ে মেঘ ঢুকছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। আর সেই মেঘের দৌলতেই অবশেষে অবসান হল তাপপ্রবাহের। সেই সঙ্গে বৃষ্টির পূর্বাভাসও দিল আবহাওয়া দফতর।
বহুপ্রতীক্ষিত বর্ষণের দূত হয়ে শুক্রবার ঝড় বয়ে গিয়েছে পানাগড়ে, হুগলির কোনও কোনও জায়গায় এবং কলকাতাতেও। বৃষ্টি হয়েছে বর্ধমান শহর, কাটোয়া, কালনার কিছু এলাকা এবং শ্রীরামপুরে। ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হয় কলকাতার কিছু এলাকাতেও। রাতে দিল্লি থেকে আসা জেট লাইটের বিমান ঝড়ের দাপটে নামতে না-পেরে এক ঘণ্টা চক্কর কাটে মহানগরীর উপরে। কমবেশি চক্কর কাটতে হয় আরও দু’টি বিমানকে। আজ, শনিবার দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। তার ফলে অস্বস্তি আরও অনেকটা কমে যাবে বলে তাদের আশ্বাস। |
বুধবার তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছিল কলকাতাও। সেই সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের অন্য ১০টি জেলা এবং উত্তরবঙ্গের তিন জেলায় তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। কলকাতা থেকে বৃহস্পতিবার তাপপ্রবাহের সতর্কতা তুলে নিয়েছিল আবহাওয়া দফতর। কিন্তু গাঙ্গেয় দক্ষিণবঙ্গের অন্যত্র ওই দিনও তাপপ্রবাহ চলে। শুক্রবার অবশ্য গোটা পশ্চিমবঙ্গ থেকেই তাপপ্রবাহের সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়েছে।
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় পাঁচ ডিগ্রি বেশি হলে আবহবিজ্ঞানের ভাষায় তাকে বলা হয় তাপপ্রবাহ। আগের দিনের চেয়ে আরও কিছুটা কমে এ দিন কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে দু’ডিগ্রি বেশি। অঙ্কের হিসেবে এটা তাপপ্রবাহ নয়। অস্বস্তিসূচকও ৬৯ থেকে নেমে এ দিন হয়েছে ৬২ ডিগ্রি। কিন্তু সেটাও এই সময়ের স্বাভাবিকের থেকে সাত ডিগ্রি বেশি। গত চার দিন কলকাতার অস্বস্তিসূচক ৬৮-৬৯ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। ফলে ঘাম ঝরেছে কুলকুল করে। হাঁসফাঁস দশায় অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকেই। তার পরেই শুক্রবার মেঘবাহিনীর অভিযান শুরু হয়ে যায়। বর্ধমান শহর, কালনা, কাটোয়ায় বৃষ্টি হয়েছে। সন্ধ্যায় ঝড় আসায় রাজবাঁধ ও পানাগড়ের মধ্যে রেললাইনের ওভারহেড তারে গাছ পড়ে যায়। তার জেরে পানাগড় স্টেশনে আটকে পড়ে মিথিলা এক্সপ্রেস। ধানবাদগামী কোলফিল্ড এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে যায় মানকরের আগে। রাজবাঁধে দাঁড়িয়ে পড়ে একটি মালগাড়ি। আসানসোলের ডিআরএম জগদানন্দ ঝা জানান, প্রায় এক ঘণ্টা পরে ফের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। বর্ধমান-হুগলিতে যখন বৃষ্টি নেমেছে, কলকাতার তৃষ্ণা মেটানোর মতো বর্ষণেও দেরি হবে না আশায় আছেন নগরবাসী।
দহনের মধ্যেই আবহাওয়ার হঠাৎ এমন পরিবর্তন হল কী ভাবে?
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, ফের সক্রিয় নিম্নচাপ অক্ষরেখার সৃষ্টি হয়েছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। তার প্রভাবেই পরিমণ্ডলে মেঘ ঢুকছে হুহু করে। সেই মেঘ ইতিমধ্যেই রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে ছড়িয়ে গিয়েছে। তার জেরে ঝাড়খণ্ড-ওড়িশা থেকে আসা শুকনো বাতাস পিছু হটতে শুরু করেছে। তাই বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। |