জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফল বেরিয়েছে বৃহস্পতিবার। কিন্তু ওই প্রবেশিকা পরীক্ষায় মেডিক্যালের ফল ঘিরে বিভ্রান্তির জেরে শুক্রবার দিনভর ধুন্ধুমার কাণ্ড হল জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের দফতরে। ওই বিভ্রান্তির ধাক্কায় মানসিক চাপ সহ্য করতে না-পেরে এক পরীক্ষার্থী আত্মঘাতী হয়েছেন বলেও অভিযোগ। প্রতিবাদে সরব হয়েছে কংগ্রেসের
ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদ এবং আরএসপি-র ছাত্র সংগঠন পিএসইউ। জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড অবশ্য বিভ্রান্তির দায় স্বীকার করেনি। তাদের বক্তব্য, মেডিক্যালের ফলাফল নিয়ে বিভ্রান্তি বা সংশয় ‘অমূলক’।
মেডিক্যালে ভর্তি হওয়ার জন্য যাঁরা পরীক্ষা দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে ফলপ্রকাশের ২৪ ঘণ্টা পরেও ওয়েবসাইটে নিজেদের ফল দেখতে পারেননি। জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট জায়গায় নিজেদের রোল নম্বর এবং অন্য প্রয়োজনীয় তথ্য টাইপ করার পরেও জানতে পারেননি, তাঁরা সফল না অকৃতকার্য। ওই পরীক্ষার্থীরা বোর্ডের ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট জায়গায় নিজেদের রোল নম্বর টাইপ করলে ‘ইনএলিজিব্ল’ বা ‘ইনভ্যালিড’ লেখা ফুটে উঠছে।
|
আত্মঘাতী সায়ন্তন শীল |
জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের ওয়েবসাইটে নিজেদের রোল নম্বর টাইপ করে যে-সব পরীক্ষার্থী ‘ইনএলিজিব্ল’ বা ‘ইনভ্যালিড’ বার্তা পেয়েছেন, তাঁদের উদ্বেগ চরমে পৌঁছয়। সায়ন্তন শীল নামে নবদ্বীপের এক পরীক্ষার্থী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আত্মঘাতী হন। তাঁর বাবা সমীর শীলের অভিযোগ, রোল নম্বর টাইপ করে ‘ইনভ্যালিড’ লেখা ফুটে ওঠায় উৎকণ্ঠা সহ্য করতে না-পেরে সায়ন্তন আত্মহত্যা করেছেন। বিভ্রান্তির জেরে উদ্বিগ্ন ছাত্রছাত্রীদের অনেকে এ দিন সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরে জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভ শুরু হয় বেলা ১০টা নাগাদ। তা গড়ায় বচসা, ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতি পর্যন্ত। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের কর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে গোলমাল আরও বাড়ে। পরে বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান ভাস্কর গুপ্তের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় বিকেলের দিকে।
পরে ভাস্করবাবু জানান, জয়েন্ট এন্ট্রান্সে মেডিক্যালের পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৪১ হাজার ছাত্রছাত্রী। তাঁদের মধ্যে তিন হাজারের কিছু
বেশি ছাত্রছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছেন।
তাঁরা ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট জায়গায় রোল নম্বর টাইপ করলেই নিজেদের র্যাঙ্ক জানতে পারবেন। কিন্তু যাঁরা উত্তীর্ণ হতে পারেননি, তাঁদের রোল নম্বরের ক্ষেত্রে ‘ইনএলিজিব্ল’ বা ‘ইনভ্যালিড’ বার্তাই আসবে। ভাস্করবাবুর কথায়, “এই নিয়ে সংশয়ের কোনও জায়গা নেই। এসসি অথবা এসটি লেখা থাকলে পড়ুয়ারা বুঝতে পারেন। তা হলে ইনএলিজিব্ল বা ইনভ্যালিড লেখা থাকলেই বা তাঁরা বুঝবেন না কেন যে, তাঁরা অকৃতকার্য হয়েছেন?”
ভাস্করবাবুর অভিযোগ, ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকেরা অনেকে এ দিন তাঁর হাত ধরে টানাটানি করেন। তাঁর চশমা খুলে নেওয়ারও চেষ্টা হয়। এক সময় জনতা বেশ মারমুখী ছিল। বোর্ড-প্রধান বলেন, “কয়েক জন গুন্ডা বিক্ষোভ দেখাতে এলে কী করার থাকে?” তিনি জানান, অভিভাবকদের চার জনের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। ওই প্রতিনিধিরা তিন হাজার পরীক্ষার্থীর মেধা-তালিকা দেখতে চেয়েছেন। তাঁদের বলা হয়েছে, সাত দিনের মধ্যে সব পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র ইন্টারনেটে আপলোড করা হবে। তার পরেও কেউ ফলাফল জানতে না-পারলে যোগাযোগ করতে হবে বোর্ডের সঙ্গে।
রাজ্য সরকারের শরিক কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদ বোর্ডের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয়। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কৌস্তুভ বাগচির বক্তব্য, “অসফল পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ‘ডিসকোয়ালিফায়েড’ লিখলেই চলত। তা না-করে অদ্ভুত কথা লেখা হয়েছে কেন? লোকে প্রকৃত তথ্য জানতে গেলে তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারই বা করা হল কেন?” পাঁচ দিনের মধ্যে জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড বিভ্রান্তির অবসান ঘটাতে না-পারলে ছাত্র পরিষদ মুখ্যমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর দ্বারস্থ হবে। পিএসইউয়ের রাজ্য সম্পাদক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের মনোভাব লজ্জাজনক এবং ছাত্রবিরোধী। জয়েন্টের ফলাফলে স্বচ্ছতা চাই আমরা। ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিচার চাই।” |