|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৩... |
|
নিজেকে ভাঙার নাট্যযাত্রা |
নাটক সমগ্র ১ ও ২, ব্রাত্য বসু। আনন্দ, দু’খণ্ড ৬৫০.০০ |
বঙ্কিমচন্দ্রের সমসময়ের এক বাঁকা কলম একটি পদ্য লিখেছিল। তার শেষ অংশটি এই রকম: ‘সহজেই বুঝিয়াছে; ওগো সম্পাদক
সব হলো বাকি কেন বাংলা নাটক?’
এর মধ্যে কটাক্ষ আছে, কিন্তু তার চেয়েও বেশি আছে বোধ হয় একটি নির্মম সত্য, নাটক পড়ার অভ্যেস বাঙালির গড়ে ওঠেনি সে ভাবে। নাট্যে বাঙালির যত আগ্রহ, নাটকে তার বোধ হয় সিকিও নয়। এর একটা কারণ, নাটক মঞ্চে নাট্য হয়ে ওঠা পর্যন্ত মঞ্চদৃশ্য কল্পনা করে নিয়ে পাতা ওল্টাতে হয় পাঠককে।
এই প্রেক্ষিতটাকে মেনে নিয়েই নাট্যযাত্রা শুরু ব্রাত্য বসুর। ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ অ্যাকাডেমিতে তাঁর প্রথম নাটক ‘অশালীন’-এর প্রথম অভিনয়। এটি প্রথম ‘পোস্ট মডার্নিস্ট’ বাংলা নাটক কি না সে তাত্ত্বিক তকমা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু এ কথা ঠিক যে, সমসময়ের সঙ্গে নাট্যভাষার যে দুস্তর ব্যবধান গড়ে উঠছিল তখন তাকে ভেঙেচুরে নাটকে নতুন ভাষার জন্ম দিয়েছিলেন ব্রাত্য। ‘অশালীন’-এ সুজন চরিত্রটির সংলাপে ভিতর ও বাহিরের সেই দ্বন্দ্ব ঘোচানোর চেষ্টা ছিল: ‘আমরা বর্ণ দিয়ে অক্ষর, অক্ষর দিয়ে শব্দ, শব্দ দিয়ে বাক্য সাজাচ্ছি। কী দারুণ হচ্ছে এই সাজানোটা, না? কী শীতল, মার্জিত, সুচারু ভঙ্গিতে আমরা বুঝে নিতে চাইছি মানুষের সভ্যতাকে, পৃথিবীকে। একবারও ভেবে দেখছি না, এই কনস্ট্রাকশনের ফাঁক দিয়ে ফসকে গলে বেরিয়ে যাচ্ছে আমাদের পরম মুহূর্তগুলো, অনুভূতির বিশুদ্ধ নিশ্বাসগুলো।’ ‘অশালীন’ থেকে ‘রুদ্ধসংগীত’ ব্রাত্য বসুর সতেরোটি বড় নাটকে সময় তার যাবতীয় উত্তাপ নিয়ে উঠে এসেছে মঞ্চে, কিন্তু কোথাও সেই সমসাময়িকতা পরম মুহূর্তগুলো ক্ষুণ্ণ করেনি। এর সঙ্গে ন’টি ছোট নাটক মিলিয়ে নাটকসমগ্রের দু খণ্ড গত দেড় দশকের বাংলা নাটকের উল্লেখযোগ্য অধ্যায়কে ধরে রাখল। সে অধ্যায়ের নিহিত কথাটি বিষয়ের প্রায় বৈপ্লবিক বৈচিত্র। অসমবয়সি সমকামী আকর্ষণ কিংবা প্রায় পিতা-কন্যার বয়সব্যবধানে দাঁড়ানো পুরুষ-নারীর প্রেম, মিডিয়ার পেজ ফোর আর তার নেপথ্যের খেলা কিংবা নানা মাত্রার রাজনীতি বার বার নিজেকে ভেঙে বেরোন এই তরুণ নাট্যকার।
সেই যাত্রা এখনও অব্যাহত। তারই পাঠ্য-ইতিহাস এই সমগ্র, প্রথম অভিনয়-পঞ্জি ও গ্রন্থপঞ্জির সুগ্রথিত অনুষঙ্গ-সহ। |
|
|
|
|
|