|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
বিবেক কি অস্বস্তি বোধ করবে না |
এ বারের বহুরূপী-র (সম্পা: প্রভাতকুমার দাস) অর্ধেক জুড়ে বাদল সরকারকে নিয়ে বিশেষ ক্রোড়পত্র। তাঁকে স্মরণ করাহয়েছে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে, ফলে নাট্যব্যক্তিত্ব হিসেবে বাদলবাবুর প্রায়-এক সমগ্রের আভাস সংখ্যাটিতে। নিছক বাঙালি নাটককারের পরিচয় ছাপিয়ে তাঁর ভারতীয় সত্তার খোঁজ রচনাদি জুড়ে। যেমন প্রতিভা অগ্রবাল লিখেছেন ‘১৯৬৭ সালের একদিন দুপুরে বাদল সরকারের সঙ্গে যে নাটকীয় পরিচয় হয়েছিল তা ওঁনার শেষ দিন পর্যন্ত বজায় ছিল। ওঁনার দশটি নাটকের অনুবাদ আমি করেছি। অনামিকা তা মঞ্চস্থ করেছে। উনি রাম শ্যাম যদু-র নির্দেশনা করলেন। অনামিকা এবং নাট্য শোধ সংস্থান যখনই তাঁকে আমন্ত্রণ করেছেন তখনই তিনি এসেছেন।’ এ ছাড়াও লিখেছেন শ্যামল ঘোষ প্রবাল দাশগুপ্ত ভবেশ দাশ দেবাশিস মজুমদার বিশ্বজিৎ রায় পঙ্কজ মুন্সী অসিত বসু তীর্থঙ্কর চন্দ প্রমুখ। সঙ্গে চমৎকার কিছু ছবি। আর আছে প্রয়াত তারাপদ মুখোপাধ্যায়কে নিয়েও একগুচ্ছ রচনা। অন্যান্য নিবন্ধের মধ্যে জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র প্রসঙ্গে অশোক মিত্র প্রশ্ন তুলেছেন ‘সংগীতের আঙ্গিক নিয়ে যে পরীক্ষা এই সৃষ্টির সমগ্র অবয়ব জুড়ে বিস্তৃত তা নিয়ে বাঙালি বিবেক কি আদৌ অস্বস্তিবোধ করবে না?
অসময়ের নাট্যভাবনা-য় (সম্পা: রঙ্গন দত্তগুপ্ত) এ বার স্বামী বিবেকানন্দের কর্মকাণ্ড। সম্পাদক জানিয়েছেন ‘প্রবন্ধের বিষয় হিসাবে উঠে এসেছে এমন কিছু ভাবনা... যেমন বিবেকানন্দর মধ্যে এতদিন আমরা পুরুষোচিত নানা জ্ঞানের সমাহার দেখেছি। এবার আলো পড়েছে তাঁর সত্তার অন্য একটি দিকেও। যেখানে বিবেকানন্দ যেন দাঁড়িয়ে মায়ের আশ্রয় নিয়ে। পুরুষের ধীশক্তির সঙ্গে সেখানে নিখুঁত অনুপাতে মিশেছে নারীর সংবেদনশীলতা।’ পাশাপাশি শান্তনু চক্রবর্তীর প্রবন্ধে স্বামীজি আলোচিত হয়েছেন জনপ্রিয় সংস্কৃতির এক আইকন হিসেবে, রচনাটিতে রয়েছে তাঁকে ঘিরে তৈরি-হওয়া নানা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবনার ভাঙচুরেরও কথাও। স্বামীজির ব্যক্তিত্ব অবলম্বনে রচিত কয়েকটি নাটকও সংখ্যাটিতে, যেমন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের ‘বহুরূপে সম্মুখে তোমার...’। ‘দুই দশকের ওপর এই দেবতুল্য নায়কের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে আমাকে অভিনেতা হিসেবে। তাকে যাতে খানিকটা মানুষের মত করে তোলা যায় অভিনয়ে সেই চেষ্টাই করেছি। কিন্তু বলাবাহুল্য সে লড়াইটা এতই অকিঞ্চিৎকর যে খুব একটা সে কাজে সফল হয়েছি বলে নিজের বিশ্বাস হয় না।’ লিখছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর গত তিন দশকের লেখালেখির সংকলন চরিত্রের সন্ধানে (সপ্তর্ষি, ১৫০.০০)। মোট ২৬টি লেখা। শিশির ভাদুড়ী, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোজ মিত্র, তুলসী চক্রবর্তীর স্মৃতি-মূল্যায়ন আছে, আছে নিজের জীবন, বীজের জীবন ‘অপু থেকে গঙ্গাচরণ’-এর মতো প্রবন্ধে। এবং সৌমিত্রের স্পষ্টভাষণ: ‘এই পচনশীল রাজ্যে সবই যেখানে মৃতপ্রায় সেখানে মুমূর্ষু বাংলা ছবিতে কেন ভালো অভিনেতা-অভিনেত্রী আসছে না এই অভিযোগ শুনতে আমার ভালো লাগে না। যেন জীবনের আর সব ক্ষেত্রে দারুণ দারুণ মানুষ আসছে!’ সংকলনটি সুদর্শন। কিন্তু লেখাগুলির প্রকাশতথ্য নেই কেন? এই সাম্প্রতিক সংস্করণে যে কয়েকটি প্রবন্ধ সংযোজিত সে কথাও প্রকাশক উল্লেখ করেননি। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখার সংকলনে এমন অবহেলা কিন্তু প্রত্যাশিত নয়। |
|
|
|
|
|