মুখোমুখি...
দিদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ? প্রশ্নই ওঠে না
পত্রিকা: ‘৮:০৮-এর বনগাঁ লোকাল’ ছবিতে আপনি অনেক দিন বাদে নায়কের ভূমিকায়। কামব্যাক হল তা হলে?
তাপস: না, কামব্যাক ফিল্ম কেন বলব? আর চলেই বা গেলাম কবে। মাঝে মাঝে বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছি। তফাত একটাই। এখানে মুখ্য চরিত্রে। এখন থেকে ঠিক করেছি বাছাই ছবিতে কাজ করব। ‘৮:০৮-এর বনগাঁ লোকাল’ তেমনই একটা ছবি।

পত্রিকা: অনন্ত দাস আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদে নামে। আপনার কখনও মনে হয়েছে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া উচিত?
তাপস: একজন সুস্থ চেতনার নাগরিক ও সাংসদ হিসেবে কখনই বলতে পারি না সংবিধানকে অগ্রাহ্য করে আইন হাতে তুলে নেওয়া উচিত। কিন্তু হ্যাঁ, তরুণ বয়সে যখন রক্ত গরম ছিল নানা ঘটনা দেখে মনে হয়েছে আইন হাতে তুলে নিই। কত বার দেখেছি রাস্তায় ছেলেরা মেয়েদের দেখে অশালীন আচরণ করছে, কত বার দেখেছি রাস্তাঘাটে বৃদ্ধ মানুষদের সম্মান করা হচ্ছে না, কত বার দেখেছি রাস্তায় বসে জুয়া সাট্টা খেলছে, মদ খাচ্ছে লোকজন। এমন সব সময়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে ইচ্ছে করেছে। কিন্তু নিইনি। অনন্ত দাস যা পারে আমরা তা পারি না।

পত্রিকা: অনন্ত দাস না হয় প্রতিবাদ করে। সাংসদ তাপস পাল তো সংসদে প্রায় কথাই বলেন না।
তাপস: হয়তো আপনারা আমাকে সব সময় দেখতে পান না, আমি যখন কথা বলি তখন হয়তো টেলিভিশন খোলা থাকে না। কিন্তু আমি বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছি বারবার। সামাজিক ব্যবস্থা, দূষণ, সেন্সর বোর্ড, নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্রের উন্নতি, সেখানে বন্যা হলে কী ভাবে তার প্রতিকার করা যায় তা নিয়ে। মাত্র কয়েক দিন আগে কৃষ্ণনগর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রস্তাব দিয়েছি। সাংসদদের প্রশ্ন করার কিছু নিয়ম আছে। প্রশ্ন করতে গেলে সকাল সাড়ে ৮টায় একটা আবেদন জমা দিতে হয়। অনেকেই সেই আবেদন জমা দেন। তার মধ্যে লটারি হয়। সেই সময় লটারিতে নাম না উঠলে কথা বলা যায় না। আবার কোনও প্রশ্ন যেটা ভেবেছি করব বলে, অন্য কেউ করে ফেললে সেই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করা যায় না। জিরো আওয়ারেও কথা বলে থাকি বিভিন্ন বিষয়ে।

পত্রিকা: সেন্সর বোর্ড নিয়ে কী ধরনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন?
তাপস: প্রতিবাদ নয়। আর্জি। সেন্সর বোর্ড যে ছবিতে পশুপাখি ব্যবহার বন্ধ করতে চাইছে, সেটা আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়। ধরুন গ্রামের পটভূমিকায় একটা ছবি হচ্ছে, সেখানে একটি লোক গরুর গাড়ি চেপে গান গাইতে গাইতে যাচ্ছে, কিংবা চাষিরা মাঠে হাল বলদ নিয়ে চাষ করছে এমন দৃশ্য যদি বন্ধ করা হয় তা হলে সিনেমার গল্প, মেজাজ সবই নষ্ট হয়ে যাবে। পশুপাখিকে যন্ত্রণা না দিয়ে তো ব্যবহার করা যেতেই পারে। সেন্সর বোর্ডকে এ কথা আমি বারবার বলেছি। সিনেমায় যদি এত সেন্সরের কাঁচি চলে বা বিধিনিষেধ থাকে তা হলে টিভিতে থাকবে না কেন? সেখানে এমন সব প্রাপ্তবয়স্ক বিজ্ঞাপন দেখানো হয় যা দেখে সাত-আট বছরের ছেলেমেয়েরা বাপ-মাকে যা নয় তাই জিজ্ঞেস করছে। তাদের কৌতূহল থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু সেন্সর এই সব বিজ্ঞাপন বন্ধ করবে না কেন? এ প্রশ্ন, এ প্রতিবাদ বারবার করেছি। এখন আমার বক্তব্য নিয়ে ওরা ভাবনাচিন্তা করছে।

পত্রিকা: আজ যদি আপনাদের দলনেত্রী এবং এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও কাজ ন্যায্য না মনে হয় প্রতিবাদ করবেন?
তাপস: আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে প্রতিবাদী অনন্ত দাসকে দেখেছি। ওঁর কাছ থেকে রাজনৈতিক জীবনের দীক্ষা নিয়েছি। বাবা-মা যেমন আমার মহাগুরু, উনিও তেমনি আমার রাজনীতির গুরু মা। দিদি যে সিদ্ধান্ত নেন তা ঠিক হচ্ছে মনে করেই নেন। তাই দিদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ? প্রশ্নই ওঠে না।

পত্রিকা: ধরুন আপনার নিজের দলের ভেতর কোনও অন্যায় হল, প্রতিবাদ করবেন না?
তাপস: আমাদের দল কাজ করে একটি ছত্রছায়ার নীচে। সেই মহাছত্রের নাম আবারও বলছি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলে কেউ অন্যায় করলে যথাবিধি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা তিনিই নেবেন।
পত্রিকা: মাঝখানে মেয়ে সোহিনীকে নিয়ে একটি ছবি প্রযোজনা করবেন ঠিক করেছিলেন, সে কাজের কী হল?
তাপস: এখন সে কাজ স্থগিত রেখেছি। মেয়ে আরও খানিকটা সময় চেয়েছে। এখন ও মুম্বইতে।


পত্রিকা: এখন নতুন পরিচালকেরা অন্য ধরনের বাংলা ছবি বানাচ্ছেন। সেখানে কাজ করার কথা ভাবছেন?

তাপস: বাংলা ছবির ধরন বদলাচ্ছে ভাল কথা। দর্শক সিনেমা দেখে আনন্দ পাচ্ছেন সেটাও ভাল কথা। কিন্তু আমি জোরজার করে কোনও পরিচালকের ছবিতে ঢুকতে তো পারি না। তাঁদের যদি মনে হয়, আমাকে ডাকবেন। ৩০ বছরের ওপর বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছি। কোনও দিন গ্রুপিজম করিনি তো। গ্রুপিজম মানে কূটনীতি করে রোল পাওয়া। সেটা আমার সম্ভব নয়।

পত্রিকা: কেউ কি গ্রুপিজম করেন?
তাপস: আমি কারও নাম করে কিছু বলতে চাই না।

পত্রিকা: আর কোন ছবিতে অভিনয় করছেন?
তাপস: রাজ চক্রবর্তীর পরিচালনায় ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের একটি ছবিতে। সে ছবিতে একটা সামাজিক বক্তব্য আছে। নিছকই একটা বিনোদনের সিনেমা নয়। এবং আমার চরিত্রের একটা বিশেষ মাত্রা আছে। এ ছাড়া আমার ছবির জগতের গডফাদার পরিচালক তরুণ মজুমদারের ‘দুর্গেশনন্দিনী’ সিরিয়ালে অন্যতম মুখ্য চরিত্র বীরেন্দ্র সিংহ চরিত্রে অভিনয় করছি। ২০১৩ সালে টেলিকাস্ট শুরু হবে।

পত্রিকা: আর শতাব্দী রায়ের সঙ্গে আপনার ইনিংস?
তাপস: শতাব্দীর পরিচালনায় ‘ওম শান্তি’ ছবিটির কাজ শেষ হয়েছে। রিলিজের মুখে। ‘পরিবর্তন’ ছবিটিও রিলিজ করবে। জুলাই মাসে ‘বৃদ্ধাশ্রম’ নামে একটি ছবির কাজ শুরু হবে। পরিচালক শতাব্দী। ছবিতে প্রধান বৃদ্ধ মানুষটির চরিত্রে অভিনয় করছি আমি। তার পর যাত্রা শুরু হবে অক্টোবর থেকে। মহলা শুরু হবে তার মাস দু’য়েক আগে থেকেই। আমাদের ইনিংস তো আমাদের কাজ। রাজনীতি আর সংস্কৃতি। এই দুটোতে মেলে বলেই একসঙ্গে এত কাজ করতে পারি। যাত্রায় জুটি হিসেবেও এখন আমরা রীতিমতো জনপ্রিয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.