উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
ডানলপ মোড়
বিলম্বের সংযোগ
নির্ধারিত সময়ের পরে এক বছর পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও কাজ শেষ হয়নি। ঘটনাস্থল বরাহনগরের ডানলপ মোড়।
এই মোড়ের উপর দিয়েই তিন বছর আগে শুরু হয়েছিল একমুখী উড়ালপুলের কাজ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, তিন বছর পার হয়ে গেলেও কাজ শেষ হয়নি। অথচ, গুরুত্বপূর্ণ এই চারমাথার মোড়ে প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রিতার জেরে তাঁদের ভোগান্তি হচ্ছে। যদিও প্রশাসনের দাবি, অগস্ট মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।
কিন্তু দু’বছরের একটি প্রকল্প শেষ করতে এত দিন সময় লাগছে কেন?
ডানলপের অংশে শুধু উড়ালপুলের কাজই নয়, চলছে আরও দু’টি সরকারি প্রকল্পের কাজ। কিন্তু সমন্বয়ের চূড়ান্ত অভাবে উড়ালপুল তৈরির কাজ আজও শেষ হল না বলে অভিযোগ উঠেছে। ডানলপ মোড়ের যানজট দূর করতে ২০০৯-এ ৬৪০ মিটারব্যাপী দু’লেনের উড়ালপুল তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। এই প্রকল্পের ব্যয় ৪১ কোটি টাকা। এই উড়ালপুল চালু হলে শুধু দক্ষিণেশ্বর থেকে সিঁথির মোড়ের দিকে যাতায়াত করা যাবে। প্রশাসনের দাবি, উড়ালপুল তৈরি হলে এই মোড়ের যানজট সমস্যা নিয়ন্ত্রিত হবে।
কিন্তু কয়েকটি সমস্যার জেরে কাজ শুরু করতে দেরি হয়। পূর্ত দফতরের ভারপ্রাপ্ত এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সিদ্ধার্থ মণ্ডলের দাবি, উড়ালপুল তৈরির সময়ে ডানলপ এলাকায় এক দিকে পিডব্লিউডি রোড এবং বিটি রোডের তলা দিয়ে বিদ্যুৎ, জল সরবরাহ, নিকাশি-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী পাইপলাইন ছিল। সেগুলিকে অন্যত্র সরিয়ে কাজ শুরু করতেই সময় লাগে। এর পাশাপাশি উড়ালপুল তৈরির উপাদানের ঘাটতি এবং একাধিক নির্বাচনের কারণে প্রকল্প শেষ করতে দেরি হয় বলে পূর্ত দফতরের দাবি।
কিন্তু এখন তো সে সব সমস্যা নেই। তা হলে উড়ালপুলের কাজ কেন শেষ হচ্ছে না? পূর্ত দফতরের বক্তব্য, উড়ালপুলের মাঝের অংশের সংযোগের কাজ হবে ঠিক ওই চারমাথার সংযোগস্থলে। যে প্রক্রিয়ায় ওই মাঝের অংশ যুক্ত করা হবে তা সময়সাপেক্ষ। ফলে দীর্ঘ ক্ষণ রাস্তা বন্ধ রাখা প্রয়োজন। কিন্তু ওই মোড় দিয়ে প্রতি দিন অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করেন। পাশাপাশি, এই রাস্তায় গাড়ির চাপও প্রবল। ফলে রাস্তা বন্ধ রাখা কিংবা অন্য রাস্তা দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া মুশকিল। সম্প্রতি ব্যারাকপুর মহকুমা ও পুলিশ প্রশাসন এবং পূর্ত দফতরের মধ্যে আলোচনা হয়। বর্তমানে দ্রুত গতিতে সেতুর কাজ চলছে।
ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক অজয় পাল বলেন, “পিডব্লিউডি রোড এবং বিটি রোড থেকে উড়ালপুলের অনেকটা কাজই হয়েছে। শুধু ডানলপ মোড়ের উপরের অংশের কাজ বাকি। সেই অংশের দূরত্ব অনেক। কয়েকটি পিলারের উপরে দাঁড়িয়ে থাকবে সেতুটি।” তাঁর কথায়: “কলকাতার মধ্যে এই উড়ালপুলের ক্ষেত্রেই দূরত্ব সর্বাধিক। সে কাজ রাতারাতি সম্ভব নয়। তাই সময় লাগছে। তবে রাস্তার এক দিক বন্ধ করে কাজ হবে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটকে তা বলা হয়েছে। সাময়িক যানজট হলেও উড়ালপুলের কাজ দ্রুত শেষ করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা রামু মুখোপাধ্যায় বলেন, “তিন বছর ধরে কাজের জেরে চার দিকে ধুলোবালি। হাঁটাচলা করা দায় হয়ে উঠেছে। যানজটে জেরবার হচ্ছি। কবে যে কাজ শেষ হবে, কে জানে।” কিন্তু এই প্রকল্পের প্রাথমিক সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও কেন কাজ শেষ করা গেল না? জবাবে পূর্ত দফতরের দাবিকে সমর্থন করে অজয়বাবু বলেন, “ভূগর্ভে জল সরবরাহকারী পাইপলাইন থেকে শুরু করে অনেকগুলি জিনিসের স্থানান্তর সময়সাপেক্ষ বিষয় ছিল। দীর্ঘসূত্রিতার জন্য গাফিলতিও আছে। এই উড়ালপুল তৈরির মধ্যেই ভারপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারের বদলি হয়। সে কারণে বেশ কিছুটা দেরি হয়। তবে এ বার কাজ দ্রুত শেষ করা হবে।”
সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির মধ্যে সমন্বয়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে মহকুমাশাসক বলেন, “সমন্বয়ের অভাব নয়, দু’বছরের সময়সীমার মধ্যে ওই ধরনের এলাকায় উড়ালপুল তৈরি করা মুশকিল। সমস্যা যা ছিল মিটে গিয়েছে। অন্য দু’টি সরকারি প্রকল্পের কাজও চলছে। এ বারে দ্রুত উড়ালপুলের কাজ শেষ করার চেষ্টা হচ্ছে।”

ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.