|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা
প্রকল্পে দেরি
|
ভাসার আশঙ্কা |
কৌশিক ঘোষ |
দু’বছরেও শেষ হল না নিকাশি-প্রকল্পের কাজ। নির্ধারিত সময়সীমার পরেও কেটে গিয়েছে বছরখানেক, কাজ শেষ হয়নি। তার ফলে জলভাসির আশঙ্কা এ বছরও।
জোড়াসাঁকো-সহ বড়বাজারের বিস্তীর্ণ এলাকার জমা জল নিকাশির জন্য কলকাতা পুরসভা জগন্নাথ ঘাটে একটি পাম্পিং স্টেশন নির্মাণ প্রকল্প করেছিল ২০০৯-এ। ২০১১-র প্রথম দিকে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুরসভার বক্তব্য, প্রযুক্তিগত সমস্যায় তা সম্ভব হয়নি। এ বছর বর্ষার আগেও কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না বলে পুরসভার নিকাশি দফতর থেকে জানানো হয়েছে।
মেয়র পারিষদ (নিকাশি) রাজীব দেব বলেন, “জোড়াসাঁকো অঞ্চলে জল জমার সমস্যা মেটাতেই এই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু পরে কাজ করতে গিয়ে পুর-কর্তৃপক্ষ প্রযুক্তিগত সমস্যায় পড়েন। সেগুলি ঠিক করতেই সময় লাগে। আশা করছি, এ বছর বর্ষার পরেই পাম্পের কাজ শেষ হবে।”
পাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করার আগে কী কী সমস্যা হতে পারে সে ব্যাপারে পুরসভা সমীক্ষা করেনি কেন?
|
|
নিকাশি দফতরের এক আধিকারিক জানান, সমীক্ষা করেই কাজ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু মাটির গভীরে কী রয়েছে তা সব সময় সমীক্ষা বা ওপরের মাটির নমুনা পরীক্ষা করে বোঝা যায় না। এ ক্ষেত্রে সে ধরনের সমস্যাই হয়েছে। নদীর ধারের এই অংশে মাটির নীচে বালি বেশি থাকায় তার ব্যবস্থা করতে হয়। এ ছাড়াও কাজ করার সময়ে আশপাশের পুরনো বাড়ির কাঠামো যাতে নষ্ট না হয় সে ব্যাপারেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। এখানকার অনেক বাড়িই, বিশেষ করে জগন্নাথ ঘাট ‘হেরিটেজ’ তালিকাভুক্ত। ফলে বিভিন্ন দিকে সাবধানতা বজায় রেখে কাজ করতে গিয়ে
দেরি হয়।
জোড়াসাঁকো ও বড়বাজারের কিছু অঞ্চল নিচু হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই জল জমে যায়। জমা জল নামতেও দেরি হয়। জোড়াসাঁকো এবং কাছের এলাকা থেকে জল জমার সমস্যা নিয়ে বহু অভিযোগ পুরসভায় জমা পড়ে। পুর-কর্তৃপক্ষ জানান, এই সমস্যা সমাধানে প্রথমে তারাসুন্দরী পার্কে পাম্পিং স্টেশন নির্মাণের কথা ভাবা হয়। কিন্তু জায়গার অভাবে সেখানে তা করা যায়নি। পরে জগন্নাথ ঘাটে পাম্প বসানোর পরিকল্পনা হয়। প্রকল্পের খরচ ধরা হয় ন’কোটি টাকা। এই স্টেশনে জমা জল বের করার জন্য মোট তিনটি পাম্প বসানো হবে। জল নিকাশির জন্য দু’টি ১৫ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প চালানো হবে। বাড়তি পাম্পটি বিকল্প হিসেবে রাখা হবে। |
|
জোড়াসাঁকো এবং বড়বাজার এলাকায় জমা জল কী ভাবে বেরোয়?
পুরসভার নিকাশি বিভাগের মুখ্য বাস্তুকার অমিত রায় জানান, জোড়াসাঁকো এলাকার জল মূলত রবীন্দ্র সরণি ব্রিক স্যুয়ারের মাধ্যমে কলুটোলা এবং আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড হয়ে সোজা চলে যায় পামার বাজার পাম্পিং স্টেশনে। অন্য দিকে বড়বাজার পোস্তা এলাকার জল রবীন্দ্র সরণি, কলুটোলা, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড হয়ে সরাসরি যায় পামার বাজার পাম্পিং স্টেশনে। এ ছাড়াও, বড়বাজারের সামান্য অংশের জল রবীন্দ্র সরণি হয়ে বিডন স্ট্রিট এবং আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড হয়ে পামার বাজার পাম্পিং স্টেশনে গিয়ে পড়ে। কিন্তু সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, রবীন্দ্র সরণি এবং কলুটোলার ব্রিক স্যুয়ারের অবস্থা খুব খারাপ। এই দু’টি স্যুয়ার লাইনে পলি পড়ে যাওয়ায় জমা জল বেরোতে সমস্যা হয়। বিডন স্ট্রিট স্যুয়ার লাইনের অবস্থাও তথৈবচ। সেই কারণেই কলকাতা পুরসভা এই তিনটি স্যুয়ার লাইনকে জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশনে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ইতিমধ্যে কলুটোলা এবং বিডন স্ট্রিটে কাজ হয়েছে। কিন্তু রবীন্দ্র সরণির ব্রিক স্যুয়ার সংস্কার শুরু করা যায়নি বলে পুরসভা থেকে জানানো হয়েছে। অমিতবাবু বলেন, “রবীন্দ্র সরণির জল পাম্প করে নদীতে ফেললে এ রাস্তায় জমে থাকা জলের পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে। স্যুয়ার লাইন পলিমুক্ত হলে বাকি জমা জলও দ্রুত বেরোবে। সে জন্যই জগন্নাথ ঘাটে পাম্প বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।”
|
ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী ও ফাইল ছবি |
|
|
|
|
|