আইপিএল শুরুর মুখে যদি কাউকে জিজ্ঞেস করা হত, সবথেকে হাইভোল্টেজ ম্যাচ কী কী, তা হলে দু’টো ম্যাচ থাকতই। ৫ মে-র ইডেন। ১৯ মে-র সুব্রত রায় সহারা স্টেডিয়াম। ইডেনের পর এ বার ফিরতি লড়াই শনিবার। আর দাদা বনাম খান ফিকে হতে হতেও হঠাৎ উত্তেজনার আবহ পেয়ে গেল।
কেকেআর জিতে গেলে প্রথম দুই টিমের মধ্যে শেষ করতে পারবে। সেক্ষেত্রে প্রথম কোয়ালিফায়ার্সে হেরে গেলেও ফাইনাল খেলার দ্বিতীয় সুযোগ পাবেন গৌতম গম্ভীররা। পুণে ওয়ারিয়র্সের জন্য এমন কোনও হীরক খনি অপেক্ষা করে নেই। তাদের আইপিএল অভিযান অনেক আগেই দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। এখন পড়ে আছে শুধু সম্মানরক্ষার অন্তিম লড়াই। শেষ ম্যাচ জিতে যদি টানা আট ম্যাচ হারের লজ্জায় ইতি টানা যায়।
এটা ক্রিকেটীয় হিসেব। আবেগের হিসেব অন্য। এক দিকে ওয়াংখেড়ের বিতর্কে দগ্ধ কেকেআর মালিক। অন্য দিকে টানা হারে বিপর্যস্ত পুণে অধিনায়ক। দু’জনের আইপিএল অবস্থানে কোনও মিল নেই। কেকেআর শেষ চারে পৌঁছে গিয়ে প্রথম দুই টিমের মধ্যে থাকার লক্ষ্য নিয়ে নামছে। পুণের অভিযান অনেক আগে থেমে গিয়েছে। কিন্তু বিতর্ক আর মাথার ওপর এসে পড়া ঝড় মিলিয়ে দু’জনে ফের কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে উদয় হচ্ছেন পুণের মাঠে।
ম্যাচের আগে প্রথম স্ট্রোকটা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নিলেন। যখন উপস্থিত জনা দশেক সাংবাদিককে অবাক করে দিয়ে পুণে ক্লাবে প্র্যাক্টিসে নামার আগে তিনি চলে এলেন সাংবাদিক সম্মেলন করতে। জনপ্রিয় মত হচ্ছে, পুণের এই ম্যাচে একটা বাড়তি আবেগের জায়গা তৈরি থাকা উচিত। যেহেতু সাধারণ ধারণা হল, এটাই সৌরভের ফেয়ারওয়েল ম্যাচ। স্বয়ং সৌরভ এ দিন সেটাকে আবার সংশয়ের পৃথিবীতে ঠেলে দিলেন। সামনের বছর থেকে কি তা হলে আপনি মেন্টর? সৌরভ বলে দিলেন, “আমি জানি না মিস্টার সুব্রত রায় কী বলেছেন। জানি না উনি এটা টিভি ইন্টারভিউতে বলেছেন না কোথায় বলেছেন। আমি যতদূর জানি, প্লেয়ার হিসেবে আমার সঙ্গে পুণে ওয়ারিয়র্সের চুক্তি তিন বছরের।”
কী দাঁড়াল? না, সৌরভের কথায় প্লেয়ার হিসেবে পুণে ওয়ারিয়র্সের সঙ্গে তাঁর চুক্তি আরও এক বছর থাকছে। তাঁর উপর ছাড়লে, ক্রিকেটার হিসেবে শনিবারই তাঁর বিদায়ী ম্যাচ খেলতে নামছেন কি না বলা যাচ্ছে না। পুণে ফ্র্যাঞ্চাইজি কী ভাবে দাদার দুসরার মোকাবিলা করে সেটাই এখন দেখার। শাহরুখ খান? ওয়াংখেড়ে বিতর্কের পর তাঁকে কি পুণের মাঠে দেখা যাবে শনিবার? জিজ্ঞেস করায় এক কেকেআর কর্তা বললেন, “এখানে কেন আসবে না? এসআরকে আসছে না, এ রকম খবর অন্তত আমাদের কাছে নেই।” |
সৌরভকে জিজ্ঞেস করা হল শাহরুখ-বিতর্ক নিয়ে। সৌরভ বললেন, “মুম্বইয়ের ঘটনা থেকে আমি অনেক দূরে। মন্তব্য করব কী ভাবে?’’ আপনি কি মনে করেন এই ঘটনা আইপিএলের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে? পুণে অধিনায়ক অর্থপূর্ণ ভাবে যোগ করলেন, “আশা করব যেন না ফেলে।” শনিবার কি ইডেনের বদলা ম্যাচ? এ বার সৌরভ, “একেবারেই না। ক্রিকেটে ও রকম বদলা-টদলা বলে কিছু হয় না। এটা আর একটা ম্যাচ। দু’দলই চেষ্টা করবে জেতার।” শেষ ম্যাচের আগে তাঁর জন্য সুসংবাদ-দুঃসংবাদ দুটোই রয়েছে। সুসংবাদ হচ্ছে মাইকেল ক্লার্ক-কে পাওয়া যাবে এই ম্যাচে। আর দুঃসংবাদ হচ্ছে, স্টিভ স্মিথ অসুস্থ এবং শনিবার অনিশ্চিত।
কিন্তু পুণের এমন ভাঙা হাট যে কে থাকছে আর কে থাকছে না তা নিয়ে আর কেউ খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছে না। তুলনায় কেকেআর শিবির তাদের মালিককে নিয়ে বিতর্কের মধ্যেও অনেক বেশি চনমনে। ‘অপশনাল’ প্র্যাক্টিস ছিল বলে ব্রেট লি-জাক কালিসরা বিশ্রাম নিলেন। মনোজ তিওয়ারির হাল্কা জ্বর রয়েছে গত কাল থেকে। তাই তিনিও আসেননি। রাতে মনোজ বললেন, জ্বরটা আছে। কিন্তু এখনও খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তার মতো কিছু নয়। গৌতম গম্ভীর কিন্তু প্র্যাক্টিসে এলেন। শুধু এলেনই না, দেবব্রত দাস, মনবিন্দর বিসলাদের নিয়ে পড়ে রইলেন। নেটে টানা বল করে যাওয়া ওয়াসিম আক্রমের সঙ্গে বার বার আলোচনা করলেন। মালিকের অপমানের জবাব কি তা হলে মাঠে দিতে চায় কেকেআর? শুনে দলের এক সদস্য বললেন, “ওয়াংখেড়েতে তো মুম্বইকে হারিয়ে এসেছি। ওটাই আসল জবাব। এই ম্যাচটা জিততে হবে প্রথম দুই টিমের মধ্যে থাকা নিশ্চিত করতে।”
সৌরভ আবার বলছিলেন, এই ম্যাচ থেকে একটা জিনিসই পেতে পারেন। জিতে শেষ করলাম। এ দিন দুপুরে পুণে ক্লাবে প্র্যাক্টিসের সময়েও দেখা গেল বেশ কিছু উৎসাহীর ভিড়। অটোগ্রাফ নিতে এখনও তারা ছুটে আসছে। মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তুলে রাখছে। সে সব দেখে সৌরভ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঢুকে গেলেন নেটে ব্যাট করতে। এই উৎসাহের বলয়টাই আজ কত অন্য রকম হতে পারত যদি না মাঝপথে তাঁর টিম দিগভ্রষ্ট হয়ে পড়ত! মুম্বইকে মুম্বইতে হারিয়ে যখন শুরু করেছিলেন, কে জানত ১৯ মে-র মহারণের আগে লিখতে হবে, তাঁরা শুধু যাত্রাভঙ্গই করতে পারেন। নাইটদের হারিয়ে তাদের প্রথম দুইয়ে থাকার রাস্তায় কাঁটা বিছিয়ে দিতে পারেন। নিজেদের রাস্তা কোনও চিচিং ফাঁক জাদুমন্ত্রেও খোলার উপায় নেই! |