|
|
|
|
মেধাবী, দুঃস্থদের পড়ানোই নেশা ডিজিপি ‘স্যারের’ |
স্বপন সরকার • পটনা |
দু’টো শব্দের প্রতি তাঁর অসম্ভব টান, ‘ছাত্র’ আর ‘পড়ানো’। এই যে এখন তিনি একটি রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তা, তবুও। পুলিশের যাবতীয় পেশাদারি দায়িত্ব সামলেই যিনি যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে আইআইটিতে পড়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন মেধাবী, গরিব ছাত্রদের। বিহারের ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ অভয়ানন্দ। ১৯৭৭ সালের আইপিএস। দীর্ঘদিন পুলিশের চাকরি করতে গিয়ে কি হাঁপিয়ে উঠলেন? ডিজিপি-র উত্তর, “না, এটা আমার নেশা। যারা মেধাবী অথচ আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া, পড়াতে চাই তাদের। এখানে থাকা-খাওয়া-পড়ায় কোনও খরচ লাগে না।”
কখনও গুরুত্বপূর্ণ মিটিং-এ হয়তো ব্যস্ত, কিংবা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে চলছে তাঁর বৈঠক। এর মধ্যেই বাজল
|
ডিজিপি অভয়ানন্দ
ছবি: অশোক সিংহ |
মোবাইল। অন্য প্রান্ত থেকে ছাত্রের ফোন। সব সময় যে কথা বলতে পারেন, এমনটা নয়। কখনও বলেন, ‘‘ব্যস্ত।’’ কখনও বা তার মধ্যেই ছাড়িয়ে দেন পদার্থবিদ্যার কোনও জট। ছাত্ররা সকলেই আইআইটি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। তারা ‘রহমানি সুপার ৩০’-র ছাত্র। ছাত্ররা সকলেই মেধাবী এবং গরিব। ছাত্র নির্বাচনের কাজটি সারা বছর যারা ঘুরে ঘুরে করে সেই ‘সেন্টার ফর সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি অ্যান্ড লিডারশিপ’-এর প্রধান কৃষ্ণমূর্তি সিংহ বলেন, “আমাদের ছ’টি কেন্দ্রের ৮৮ জন ছাত্রের মধ্যে এ বার ৫১ জন আইআইটি পড়ার সুযোগ পেয়েছে।” এই কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ‘শিক্ষক’ অভয়ানন্দ। পটনা বাদে বাকি পাঁচটি কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। আজ আইআইটি-র ফল প্রকাশের পরে ডিজিপি-র মন্তব্য, “এখানে যারা পড়ে তাদের না আছে ঘর, না অর্থ। বাকিরাও যদি এমন কাজে এগিয়ে আসেন, তাতে ছাত্ররা উপকৃত হবেন।”
ছেলেমেয়ে আইআইটি-র স্নাতক। তাঁদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব থেকেই পড়ানোর হাতেখড়ি। নিজে পদার্থবিদ্যার ছাত্র। পদার্থবিদ্যা এবং গণিতেই তাঁর দখল। বাবা জগদানন্দ ছিলেন রাজ্যের ২৮তম ডিজিপি। ছেলে ৪৮তম। স্ত্রী নূতন, চিকিৎসক। পারিবারিক আইপিএস পরম্পরা নিয়ে মজা করে অভয়ানন্দ বলেন, “ছেলেমেয়েরা নিজেরাই বলেছে, এ বার আর আইপিএস নয়। আমরা পরিবর্তন চাই।” অভয়ানন্দের কথায়, “ছেলেমেয়ে আইআইটিতে সুযোগ পাওয়ার পরে মনে হল এখন কাদের পড়াব?” তখন অভয়ানন্দ আই জি (আর্থিক অপরাধ)। ১০টা-৫টা কাজ ছিল। মনে হয়েছিল, বাকি সময়টা যারা মেধাবী অথচ সামর্থ্যহীন তাদের আইআইটি-র জন্য প্রশিক্ষণ দেবেন।
২০০২ সাল। আনন্দকুমারের সঙ্গে গড়লেন পটনার বিখ্যাত সুপার-৩০। ৩০ জন ছাত্রকে নিয়ে গড়ে তোলা হয় আইআইটি প্রস্তুতির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। পরবর্তী ক্ষেত্রে আনন্দ কুমারের সঙ্গে ‘বিচ্ছেদ’। ২০০৮ সালে গড়ে ‘সুপার-৩০’ ভেঙে গড়ে ওঠে অভয়ানন্দের ‘রহমানি সুপার-৩০’। আজই আইআইটি-জয়েন্টের ফল বেরিয়েছে। অভয়ানন্দ ও আনন্দকুমার, বিহারের দুই ‘সুপার-৩০’ এ বারও মাত করেছে। অভয়ানন্দের ৮৮ তে ৫১। আর আনন্দের ৩০-এ ২৭। |
|
|
|
|
|