|
|
|
|
গ্যাংটকের মুখে ১০ ঘণ্টা অবরোধ |
কিশোর সাহা • শিলিগুড়ি |
সিকিমের বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখায় পাহাড়ি রাস্তায় প্রায় ১০ ঘণ্টা আটকে থাকলেন কয়েক হাজার পর্যটক। শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে গ্যাংটকে ঢোকার মুখে রানিপুলের কাছে ৩১ (এ) জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন সিকিমের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রছাত্রীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবিতে ওই অবরোধ হয়। সেখানে দু’দিকে থমকে যায় সব যানবাহন। কলকাতা সহ রাজ্যের অন্তত ৩ হাজার পর্যটক আটকে পড়েন।
স্কুল কলেজে গরমের ছুটি পড়ায় পাহাড়ে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। তার মধ্যেই এই ঘটনার খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে রাজ্য সরকার। যেখানে অবরোধ হয়েছে, সেখানে পর্যাপ্ত খাবার ও জলের ব্যবস্থাও ছিল না বলে অভিযোগ করেছেন পর্যটকেরা। তবে পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে বার্তা পেয়ে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয় সিকিম সরকার। এর পরে রাত ৯টা নাগাদ অবরোধ ওঠে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে মাঝ রাত গড়িয়ে যায়। রাতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “খবর পেয়েই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করাতে পদক্ষেপ করা হয়েছে। রাতে পৌঁছে পর্যটকদের যাতে আরও কোনও অসুবিধেয় পড়তে না-হয়, সে জন্য আমাদের রাজ্যের পর্যটন সচিবকে সবরকম সাহায্য করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” শিলিগুড়ির হোটেলগুলোকেও অনুরোধ করা হয়েছে, বেশি রাতে পর্যটকেরা পৌঁছলে তাঁদের যাতে অসুবিধা না হয়, তা দেখতে।
পাশাপাশি, রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশে দার্জিলিঙের এসপি কুণাল অগ্রবাল গ্যাংটকের পুলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে পর্যটকদের সাহায্য করতে অনুরোধ করেন। সিকিম পুলিশের এক কর্তা জানান, স্থানীয় থানাগুলিকে নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাতে সিকিম পুলিশের সাহায্য পেলেও দিনভর হয়রানির কথা ভুলতে পারছেন না যাদবপুরের বাসিন্দা অমল ঘোষ। স্ত্রী সুপর্ণা ও দেড় বছরের ছেলেকে নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে গ্যাংটকে বেড়াতে যাচ্ছিলেন তিনি। সকালে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে এনজেপিতে পৌঁছে গাড়ি নিয়ে রানিপুলের কাছে গিয়ে আটকে পড়েন। অমলবাবু বলেন, “একরত্তি ছেলেটাকে সারা দিন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। রানিপুলে হোটেল খুঁজেছি। কিন্তু ৫ হাজার টাকা চাইল একটা ছোট্ট ঘরের জন্য।” রাত ১০টা নাগাদ গ্যাংটকে পৌঁছেছেন অমলবাবুরা। একই অভিজ্ঞতা বাগুইহাটির সন্দীপ দত্ত, স্বপ্না দেবীরও।
উল্টো দিকে, গ্যাংটক থেকে যাঁরা শিলিগুড়ি ফিরে ট্রেন কিংবা বিমান ধরার জন্য রওনা হয়েছিলেন, তাঁদেরও দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। অনেকে রাংতা, রুমটেক হয়ে সিংতাম পৌঁছে শিলিগুড়ির পৌঁছোনোর চেষ্টা করেন। সুশান্ত মির্ধার এই দিন এনজেপি থেকে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস ধরে কলকাতা ফেরার কথা ছিল। তিনি বলেন, “টিকিটের টাকাটা নষ্ট হল। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা হল, এখন নতুন করে ফেরার ট্রেনের টিকিট পাব কী করে? তা ছাড়া রাতে হোটেলে থাকতেও বাড়তি খরচ হবে।” ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, “পর্যটকেরা যাতে ঠিক সময়ে ফিরতে পারেন, তাই বেলা ১১টা থেকে আমরা নানা স্তরে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু লাভ হয়নি। সন্ধ্যায় রাজ্য তৎপর হওয়ার পরে সিকিম সরকারও আসরে নামে। না হলে কী যে হত, তা ভাবতেই পারছি না। সিকিমে এমন অবরোধের ঘটনা সাধারণত দেখা যায় না। আশা করি এর পুনরাবৃত্তি হবে না।” |
|
|
|
|
|