বন্ধ থাকা রানওয়েতে আবার নেমে আসছিল বিমান। কলকাতার এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) টাওয়ার থেকে অফিসার দেখতে পেয়ে ঘুরিয়ে দিলেন সেই বিমানের মুখ। শুক্রবার দুপুরে কলকাতা বিমানবন্দরের যে রানওয়েতে বিমানটি নেমে আসছিল, সেখানে তখন কাজ করছিলেন জনা ১৫ মানুষ। শ্রমিক, অফিসার, ইঞ্জিনিয়াররা তো ছিলেনই, রানওয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল রোলার, এক্সক্যাভেটরের মতো বড় গাড়ি। ছিল ছোট জিপও। সামান্যতম হিসেবের হেরফের হলে বড়সড় দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকত কলকাতা।
এর আগেও এক বার ভুল করে একটি বিমান নিয়ে কলকাতা বিমানবন্দরের বন্ধ রানওয়েতে নেমে এসেছিলেন পাইলট। কয়েক মাস আগের সেই ঘটনায় বিমানবন্দরের এক মহিলা অফিসার রানওয়ে থেকে শ্রমিকদের বার করে দিয়ে তড়িঘড়ি জিপ চালিয়ে বেরিয়ে যান। দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান কয়েকশো মানুষ। এ দিন জেট এয়ারওয়েজের পোর্ট ব্লেয়ার-কলকাতা উড়ানটি অবশ্য রানওয়ের চার মাইল উপর থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে উড়ে যায়।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, সম্প্রতি প্রধান রানওয়েতে কিছু গর্ত দেখা গিয়েছে। তা নিয়ে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তাই বর্ষা আসার আগেই এখন প্রায় প্রতিদিনই (বৃহস্পতিবার ছাড়া) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত প্রধান রানওয়ে বন্ধ রেখে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। শুক্রবারেও সকাল থেকে কাজ শুরু হয়। নিয়মিত পরিষেবা বন্ধ রাখলে নোটাম (নোটিস টু এয়ারমেন) জারি করা হয়। সেই খবর বিমান সংস্থা মারফত পৌঁছয় পাইলটের কাছে। শুক্রবার জেট-এর যে পাইলট এই ভুল করেন, তিনি এ দিন সকালে মুম্বই থেকে বিমান নিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন। তার পরে সকাল ১০টা ২০ মিনিটে তিনি যখন কলকাতা থেকে পোর্ট ব্লেয়ার উড়ে যান, তত ক্ষণে নোটাম জারি করে প্রধান রানওয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বিষয়টি পাইলটের অজানা ছিল না।
এ দিন বেলা ৩টে ৩৬ মিনিটে রানওয়ের খুব কাছে চলে আসে জেট-এর বিমানটি। দ্বিতীয় রানওয়ের পশ্চিম প্রান্ত থেকে তার নামার কথা ছিল। খালি চোখে রানওয়ে দেখতে পেলে তবেই পাইলটের নামার কথা। নেমে আসার প্রায় দেড় মিনিট আগে এটিসি থেকে পাইলটকে জিজ্ঞাসা করা হয়, “রানওয়ে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন?” পাইলট জানান, দেখতে পাচ্ছেন। দিক নির্ণয়ের হিসেবে ভুলের জন্যই এই কাণ্ড ঘটে। এক অফিসারের কথায়, “সমান্তরাল দুই রানওয়ের জন্য খালি চোখে মাঝেমধ্যেই মনে হয় বিমান বুঝি ভুল রানওয়েতে নামছে। নিশ্চিত হতে সাহায্য নিতে হয় সারফেস মুভমেন্ট রেডারের। এ দিনও টাওয়ারের অফিসার প্রথমে ভাবেন তাঁর ভুল হচ্ছে। কিন্তু রেডারের সাহায্য নিতেই তিনি বুঝতে পারেন, ভুল করছেন পাইলট। ঘটে যেতে পারে বড় দুর্ঘটনা।” সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক করা হয় পাইলটকে। সতর্কবার্তা পাঠানো হয় রানওয়েতে কর্মরত অফিসারদেরও। তাঁরাও রানওয়ে খালি করার তোড়জোড় শুরু করেন। পাইলট যখন মুখ ঘুরিয়ে ফের উঠে যান, তখন মাটি থেকে বিমানের দূরত্ব মাত্র চার মাইল। চক্কর কেটে তিরিশ মিনিট পরে তিনি নেমে আসেন দ্বিতীয় রানওয়েতে। |