বাস কম। অফিস পৌঁছনো বা বাড়ি ফিরতে অন্য যানবাহন পেতেও নাকাল হতে হয় নিয়মিত। অথচ সেই সেক্টর ফাইভেই চাকরি করেন শহরের অফিসযাত্রীদের একটা বড় অংশ, উপার্জনের নিরিখে যাতায়াতের জন্য দরকারে বেশি ভাড়া দেওয়াটাও যাঁদের কাছে সমস্যা নয়। তাঁদের কথা ভেবেই তথ্যপ্রযুক্তি তালুকে এসি দোতলা বাস চালাতে চায় রাজ্য সরকার। শুক্রবার মহাকরণে বিভিন্ন নামী তথ্যপ্রযুক্তির সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এই পরিকল্পনার কথা জানান রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র।
সেক্টর ফাইভ এবং নিউ টাউনে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার সংখ্যা বাড়ছে ক্রমশ। বাড়ছে বিনিয়োগও। ই এম বাইপাস দিয়ে শহরের দক্ষিণ অংশে যাতায়াতকারী কিছু বাসরুট থাকলেও তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন তথ্যপ্রযুক্তির কর্মীরা। সিএমসি লিমিটেড সংস্থার প্রশাসনিক কো-অর্ডিনেটর বিশ্বজিৎ রাহা বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে কর্মীদের কাউকে কাউকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। গ্রীষ্মে বা বর্ষায় সমস্যাটা তীব্রতর হয় ওঁদের কাছে।”
মুশকিল আসানের লক্ষ্যে কিছু দিন আগে রাজ্য সরকারের শরণাপন্ন হয়েছিল বেশ কিছু সংস্থা। সিএমসি ছাড়াও কগনিজেন্ট টেকনোলজি সলিউশনস ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, টাটা টেলিসার্ভিসেস লিমিটেড, এরিকসন ইন্ডিয়া গ্লোবাল সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড, টাটা কনসাল্টেন্সি লিমিটেড, টিসিএস এসার্ভ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, লেক্সমার্ক ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড, জেনপ্যাক্ট ইন্ডিয়া এবং উইপ্রো লিমিটেড সরকারের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠায়। তার প্রেক্ষিতেই এ দিনের বৈঠক ডাকেন পরিবহণমন্ত্রী।
জেনপ্যাক্ট-এর প্রশাসনিক প্রধান কৃষ্ণনীল গোস্বামী বলেন, “সেক্টর ফাইভ-নিউ টাউন অঞ্চলে আইটি-তে লক্ষাধিক কর্মী আছেন। বাসের স্বল্পতার পাশাপাশি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা হয়েছে কলেজ মোড়ের যানজট নিয়েও।” তিনি জানান, সিগন্যাল এবং স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে যান নিয়ন্ত্রণ করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ-প্রশাসন।
তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির তরফে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে, ব্যারাকপুর থেকে সেক্টর ফাইভ হয়ে এবং বালি হল্ট থেকে নারকেলবাগান হয়ে নিউ টাউনের ইউনিটেক পর্যন্ত সকাল-সন্ধ্যা নিয়মিত বাস-পরিষেবা চালু করা হোক। এই দুই রুটে সকাল ৯টা থেকে সওয়া দশটার মাঝে তিনটি, সন্ধ্যায় সাড়ে ছ’টা থেকে আধ ঘণ্টা অন্তর দু’টি বাস চালানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বারাসত থেকে নারকেলবাগান হয়ে সেক্টর ফাইভ রুটে সকাল ৯টা ও ১০টায় এবং সাঁতরাগাছি, বেহালা চৌরাস্তা ও গড়িয়া এই তিন জায়গা থেকে সকাল সওয়া ন’টায় সেক্টর ফাইভ হয়ে ইউনিটেক যাওয়ার এবং এই তিন রুটে সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় ফিরতি বাস চালানোর আবেদন করা হয়েছে সরকারকে দেওয়া ওই লিখিত প্রস্তাবে।
মহাকরণ সূত্রের খবর, পরিস্থিতি খতিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সিটিসি-র চেয়ারম্যান শান্তিলাল জৈনকে দায়িত্ব দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। শান্তিবাবু বলেন, “আমি সেক্টর ফাইভ এবং বানতলার পরিস্থিতি দেখে এসেছি। বিভিন্ন স্তরে কথাও হয়েছে।” সায়েন্স সিটি এবং বানতলার মাঝে সকাল সাড়ে আটটা থেকে এগারোটা এবং বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত আধ ঘণ্টা অন্তর বিশেষ বাস চালানোর সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শান্তিবাবু বলেন, “জামশেদপুরের কারখানায় নামী একটি সংস্থা এসি দ্বিতল বাসগুলি তৈরি করছে। প্রতিটির দাম পড়ছে প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা। ওরা বাংলাদেশে এমন ৩০০টি বাস রফতানি করবে। আমরা প্রাথমিক ভাবে এ রকম ২০টি বাস নিতে চাই। সেগুলিই চালানো হবে আইটি সেক্টরে।” |