মাত্র আট বছর আগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলের ঘরে যে সংস্থার জন্ম, সেই ফেসবুকই আজ বিশ্ব শেয়ার বাজারে ইতিহাস গড়ল। শুক্রবারই মার্কিন স্টক এক্সচেঞ্জ ন্যাসডাকে লেনদেন শুরু হল বিশ্বে সর্বাধিক ব্যবহৃত সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটটির শেয়ারের। আর তার সঙ্গেই প্রথম ছাড়া শেয়ার দরের ভিত্তিতে আমেরিকার বাজারে প্রথম তিনে জায়গা করে নিল মার্ক জুকেরবার্গের তৈরি এই সংস্থা।
নথিভুক্তির পরই প্রতি শেয়ারের দর দাঁড়ায় ৪২ ডলার। প্রথম ৩০ সেকেন্ডে লেনদেন হয়েছে ৮.২ কোটি শেয়ার। আর পাঁচ মিনিটে ১০ কোটি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেনদেনের চাপের কারণে সাময়িক ভাবে অকেজো হয়ে পড়ে ন্যাসডাকের ওয়েবসাইটটিও। শেয়ার দরের ভিত্তিতে সংস্থার মোট মূল্যায়ন দাঁড়িয়েছে ১০,৪০০ কোটি ডলার। আর নিজের কিছু শেয়ার বিক্রি করে জুকেরবার্গের আয় হয়েছে ১১০ কোটি।
ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে সংস্থার সদর দফতর থেকেই ঘণ্টা বাজিয়ে ন্যাসডাকে ফেসবুকের লেনদেন শুরু করেন জুকেরবার্গ। এই উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সারা রাতই সংস্থার কর্মীরা পালন করেছেন ‘হ্যাকাথন’। অর্থাৎ অন্যান্য দিনের মতো অফিসের কাজ না করে, নিজের ইচ্ছেমতো উদ্ভাবনী মূলক কাজ করেছেন তাঁরা। |
ঘণ্টা বাজিয়ে ন্যাসডাকে শেয়ার লেনদেনের সূচনা করছেন ফেসবুক
কর্ণধার জুকেরবার্গ (তির চিহ্নে দেখানো)। ছবি: এএফপি |
যা হয়তো পরবর্তী কালে ফেসবুকেরই অংশ হয়ে উঠবে। ঠিক যে ভাবে আবিষ্কার হয়েছিল ওয়েবসাইটির বিশ্ববিখ্যাত ‘লাইক’ বোতামটি।
২০০৩ সালে শুধুমাত্র হার্ভার্ড-এর বন্ধুদের জন্যই ‘ফেসম্যাশ’ নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেন জুকেরবার্গ। ছাত্রছাত্রীদের ছবি এবং নাম দিয়ে তৈরি ওয়েবসাইটটি নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে। বন্ধ করে দেওয়া হয় ওয়েবসাইটটি। কিন্তু তত দিনে ভাবনাচিন্তাকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন জুকেরবার্গ। পরের বছর ফেব্রুয়ারিতেই আনলেন নতুন ওয়েবসাইট ‘দ্য ফেসবুক’। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২০ বছর। এর পর পড়াশোনায় ইতি টেনে ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে পাকাপাকি আস্তানা গাড়েন জুকেরবার্গ। হার্ভার্ড দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তী কালে আমেরিকা-সহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক। বাড়তে থাকে জনপ্রিয়তাও। ২০০৫-এ নাম পাল্টে হয় শুধুই ফেসবুক।
এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি জুকেরবার্গকে। বিশ্বে সবচেয়ে কম বয়স্ক ধনকুবের হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ২০১২-র এপ্রিলে ছাপিয়ে গিয়েছে ৯০ কোটি। আর এর সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে এসেছে বিজ্ঞাপন। বর্তমানে সংস্থার মোট আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে বিজ্ঞাপন থেকে।
তবে, এই যোগাযোগের ক্ষেত্র যে গুণগ্রাহীরা চিরদিনই বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন, তা নিয়ে প্রথম থেকেই সচেতন গত সোমবারে ২৮ বছরে পা দেওয়া জুকেরবার্গ। যে কারণেই ফেসবুকের ‘লগ-ইন পেজ’-টিতে সংস্থার সদর্প ঘোষণা ‘সাইন আপ- ইট্স ফ্রি অ্যান্ড অলওয়েজ উইল বি।’ |