ডাকাতির সময় এক দুষ্কৃতীকে চিনে ফেলায় খুন সিপিএম নেতা
বাড়িতে ডাকাতির সময়ে দুষ্কৃতীদের এক জনকে চিনে ফেলেছিলেন পরিবারের কর্তা। চিৎকার করে সে কথা বলেও উঠেছিলেন। তারপরেই তাঁকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে খুন করেছে দুষ্কৃতীরা। ক্ষীরোদ চৌধুরী (৪৬) নামে ওই ব্যক্তি সিপিএমের গাজল লোকাল কমিটির সদস্য। মালদহের গাজল ১ গ্রাম পঞ্চায়েতেরও সিপিএম সদস্য ছিলেন স্থানীয় কদুবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ক্ষীরোদবাবু। বুধবার রাত দেড়টা নাগাদ ওই ডাকাত দল তাঁর বাড়ি থেকে নগদ টাকা ছাড়াও লক্ষাধিক টাকার সোনার গয়না, বাসন লুঠ করে পালিয়েছে।
এই ঘটনার পরে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। দলের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, “জেলায় আইন শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। আমাদের লোকাল কমিটির সদস্যকে বাড়িতে ঢুকে গুলি করে খুন করল দুষ্কৃতীরা। জেলায় কারও নিরাপত্তা নেই। দুষ্কৃতীরা যে কাউকে বাড়িতে ঢুকে খুন করে যেতে পারে বলে মনে হচ্ছে।” এলাকার প্রভাবশালী নেতা ক্ষীরোদবাবুকে হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৪ ঘণ্টা ধরে ৩৪ ও ৮১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভও দেখানো হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “দুষ্কৃতীদের ১৫-২০ জনের একটি দল দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকেছিল। সম্ভবত ক্ষীরোদবাবু তাদের একজনকে চিনতে পেরেছিলেন। তার পরে তাঁকে বুকে গুলি করে খুন করা হয়।” তিনি বলেন, “দুষ্কৃতীদের দলটি সম্পর্কে বেশ কিছু সূত্রে মিলেছে। তিন জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।” পুলিশ কুকুর নিয়ে গিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। ফরেন্সিক এবং সিআইডির বিশেষজ্ঞদেরও ডাকা হয়েছে।
ক্ষীরোদবাবুর বাড়ির এক তলায় চালের গুদাম। পাশে চালকল। এলাকায় তাঁর একটি মদের দোকানও রয়েছে। বাড়ির দোতলায় চারটি শোওয়ার ঘর, ঠাকুরঘর, রান্নাঘর এবং শৌচাগার রয়েছে। দোতলা অবশ্য এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকাটি একটু ফাঁকা ফাঁকা। খানিক দূরে দূরে একটা করে বাড়ি। ক্ষীরোদবাবুর বাড়ি লাগোয়া বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কেটে মই তৈরি করে তা বেয়ে দুষ্কৃতীরা ওই দিন রাতে দোতলার নির্মীয়মাণ অংশে ওঠে। তার পরে ঘরের দরজা ভেঙে ঢোকে ভিতরে। বাড়িতে ক্ষীরোদবাবু, তাঁর স্ত্রী এবং মেয়ে ছাড়াও ছিলেন তাঁর এক মামা নিতাই বিশ্বাস ও নিতাইবাবুর ছেলে। নিতাইবাবু বলেন, “একটি ঘরে আমি আর ছেলে ঘুমোচ্ছিলাম। হঠাৎ কিছু শব্দ পেয়ে ঘুম ভাঙতেই দেখি ৭ থেকে ৮ জন আমাদের ঘিরে রয়েছে। তাদের হাতে পাইপগান এবং ধারালো অস্ত্র ছিল। আমার দুই হাত বেঁধে, ছেলেকে পাশে বসিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে ওরা পাশের ঘরে যায়।” সেই ঘরে ছিলেন ক্ষীরোদবাবুর ছোট মেয়ে চন্দ্রা। গাজল শ্যামসুখী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী চন্দ্রা বলেন, “দিদির ১০ ভরি সোনার গয়না এবং বাবার ব্যবসার ২ লক্ষ টাকা আমার ঘরের আলমারিতে ছিল। দুষ্কৃতীরা আলমারির চাবি নিয়ে নেয়। সেই সময় বাবা উঠে এসে ঘরে ঢুকে একজনকে চিনে ফেলেন।” চন্দ্রা বলেন, “বাবা তখন সেই ব্যক্তিকে বলে ‘তোর অবস্থা খুব খারাপ হবে’। এর পরে ওরা আমাকে আর মাকে শৌচাগারে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষণ পরে গুলির শব্দ পাই। পরে শৌচাগারের প্লাস্টিকের দরজা ভেঙে বাইরে আসি।” এর পরে ওই পরিবারের লোকজনের চিৎকার চেঁচামেচিতে আশেপাশের প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। পুলিশ এসে দেখতে পায় ক্ষীরোদবাবুর দেহটি তাঁর শোওয়ার ঘরে তোশক, চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে। ওই সিপিএম নেতার পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, ডাকাতদলের সকলেরই মুখ খোলা ছিল। একজনেরই মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল। তবে এই দিন রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.