১০০ বছরের বুকে পেসমেকার বসল!
ব্যাটারি অচল হয়ে পুরনো পেসমেকার বিকল হয়ে গিয়েছিল ব্যারাকপুরের কুলেশ সরকারের। হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। বাড়ির লোকজন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসকেরা যখন পরীক্ষা করে জানালেন, ফের অস্ত্রোপচার করে নতুন পেসমেকার বসানো ছাড়া বিকল্প পথ নেই, পরিবারের সকলেরই তখন প্রায় হাল ছেড়ে দেওয়া অবস্থা। হাল ছাড়েননি শুধু কুলেশবাবু নিজে। বলেছিলেন, ‘‘শেষ দেখে ছাড়ব।’’ তাঁকে ভরসা জুগিয়েছিলেন সল্টলেকের কাছে ওই বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও। অস্ত্রোপচার করে নতুন পেসমেকার বসানোর পরে কুলেশবাবু এখন দিব্যি সুস্থ। হেঁটেচলে বেড়াচ্ছেন। জানাচ্ছেন, এ বার তাঁর জীবনের নতুন ‘ইনিংস’ শুরু হল।
চিকিৎসকেরা জানান, বয়স্ক মানুষের অস্ত্রোপচারে নানা ধরনের ঝুঁকি থাকে। প্রথমত, অ্যানাস্থেশিয়ার পরিমাণ। যা কম হলে ব্যথা লাগতে পারে, বেশি হলে জ্ঞান না-ও ফিরতে পারে। পাশাপাশি, বয়সের কারণে শরীরের অন্য নানা অঙ্গ বিকল হতে শুরু করায় অপারেশন টেবিলে কী হবে, তা আগে থেকে আঁচ করা খুব মুশকিল। কুলেশবাবুর অস্ত্রোপচার করেছেন যে চিকিৎসক, সেই শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “চামড়া এত পাতলা হয়ে গিয়েছিল যে, সেলাই করাই কঠিন। প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছিল, সেলাই বোধহয় ছিঁড়ে যাবে। তবু আমরা চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি। বয়সের কথা মাথায় রেখে অ্যান্টিবায়োটিকের পরিমাণও কমাতে হয়েছিল। অনেক সময়ে সে জন্য ক্ষত শুকোনোর ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়। ওঁর ক্ষেত্রে সেটা হয়নি।” চিকিৎসক-দলের দক্ষতার পাশাপাশি রোগীর নিজের মানসিক জোরও এ ক্ষেত্রে অনেকটা সাহায্য করে বলে জানিয়েছেন তিনি।
|
কুলেশ সরকার |
অস্ত্রোপচারের তিন দিন পরে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন কুলেশবাবু। তাঁর ছেলে প্রদীপ সরকারের কথায়, “যখন জেনেছিলাম বাবাকে ফের ওটি-তে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন মনে হয়েছিল, বোধহয় আর কোনও আশা নেই। এখন চোখের সামনে বাবাকে সুস্থ হয়ে ঘুরতে দেখে আমরাই আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি। আসলে বাবা তো স্বাধীনতা-সংগ্রামী ছিলেন। তাই কঠোর নিয়মকানুন মেনে চলেছেন সারা জীবন।”
শতায়ু ব্যক্তির বুকে পেসমেকার বসানোকে বিরল বলেই মনে করছেন হৃদ্রোগ চিকিৎসকেরা। চিকিৎসক বিশ্বকেশ মজুমদার বলেন, “৯০ বা তার কাছাকাছি বয়সে অস্ত্রোপচারের কথা প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু ১০০ বছরে কাজটা খুব ঝুঁকির। এ সব ক্ষেত্রে রক্ত ফুসফুসে জমাট বেঁধে হঠাৎ মৃত্যুও হতে পারে। তা ছাড়া, এই বয়সে টানা কয়েক দিন বিছানায় শুয়ে থাকতে হলে ফের সেই ব্যক্তিকে ওঠানো খুব সমস্যার। নিউমোনিয়া বা অন্য নানা ধরনের সংক্রমণেরও ভয় থাকে।”
১০০ পেরোনো ব্যায়ামবীর মনোহর আইচ বলেছিলেন, “শরীর একটা যন্ত্র, তাকে শৃঙ্খলার সঙ্গে না চালালে সে বিগড়ে যাবে, এটা সবাই জানে। কিন্তু অনেকেই সেটা মানে না। যারা মানে না, তাদের কপালে ভোগান্তি থাকে।” কুলেশ সরকারের পরিবারের সদস্যদের দাবি, তিনিও বরাবর এই শৃঙ্খলার জীবনই যাপন করে এসেছেন। তাই ১০০ বছরেও তাঁর বুকের বল কমেনি। |