হিন্দমোটরে জলাভূমি পরিদর্শন করল রাজ্য সরকার গঠিত বিশেষ কমিটি। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্য সরকার ওই কমিটি গঠন করে। বৃহস্পতিবার সকালে কমিটির পাঁচ সদস্য হিন্দমোটরে আসেন। ওই দলে ছিলেন কমিটির চেয়ারম্যান তথা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সদস্য-সচিব সন্দীপন চক্রবর্তী, আহ্বায়ক অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র, জলাভূমি বিশেষজ্ঞ ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ এবং দেবল রায়।
জলা ভরাট করে উত্তরপাড়ার লোহারপুল থেকে ডানকুনির দিল্লি রোডের ধার পর্যন্ত ফ্লাই অ্যাস, ঘেঁস, মাটি ফেলে রাস্তা তৈরির অভিযোগ উঠেছিল। বেশ কিছুটা অংশের রাস্তা তৈরিও হয়ে গিয়েছে। এ দিন সেই জায়গাটি পরিদর্শন করেন কল্যাণবাবুরা। হিন্দমোটর জলাভূমির অন্যান্য অংশও খুঁটিয়ে দেখেন তাঁরা। জলাভূমির নানা অংশের ছবি তুলে রাখেন। অনেক ক্ষেত্রেই নানা ভাবে জলাভূমি বোজানো বা জলার গতি রুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তাঁদের অভিমত। সমস্ত বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দেবেন বলে তাঁরা জানান।
বছর কয়েক আগে হিন্দমোটর কারখানার ৩১৪ একর জমি বিক্রি করে দেওয়া হয় একটি বেসরকারি সংস্থাকে। ওই জমির বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে জলাভূমি। ওই সংস্থাটি সেখানে হাইটেক সিটি এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (সেজ) তৈরির কাজে হাত লাগায়। অভিযোগ ওঠে, জলাভূমি ভরাট করে কংক্রিটের জঙ্গল তৈরি করা হচ্ছে। সেই নিয়ে বিতর্ক দানা বাধে। ওই জলাভূমি ভরাটের প্রতিবাদে ‘গণ উদ্যোগ’ নামে একটি সংগঠন আন্দোলনে অংশ নেয়। অনশনও করেন আন্দোলনকারীরা। |
ইতিমধ্যে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘ফোরাম ফর ইউম্যান লিগ্যাল এন্ড ইকোলজিক্যাল রাইট’ এবং ‘দিশা’ নামে দু’টি সংগঠন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় জলাভূমি সংরক্ষণ করা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে রিট পিটিশন করে। এর পরে অবশ্য হিন্দমোটরের ওই রাস্তা তৈরির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। প্রকল্পের কাজও থমকে গিয়েছে। দিশার তরফে কুনাল ঠাকুর জানান, চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জয়নারায়ণ পটেল এবং বিচারপতি সম্বুদ্ধনাথ চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি তৈরি করে সংশ্লিষ্ট সমস্ত জলাভূমি পরিদর্শন করে রিপোর্ট দিতে। হাইকোর্টের নির্দেশে ১২ জনের ওই কমিটি গড়ে রাজ্য সরকার। এর আগে হাওড়ার জয়পুর বিল পরিদর্শন করেন কমিটির সদস্যেরা।
শ্রীরামপুরে নিকাশি ব্যবস্থার সহায়ক হিসেবে হিন্দমোটর জলাভূমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসন সূত্রের খবর, উত্তরপাড়া, হিন্দমোটর, মাখলা, কোন্নগর, বালির বিস্তীর্ণ এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা এই জলাভূমির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। বর্ষার সময়ে কানাইপুর পঞ্চায়েত, উত্তরপাড়া এবং রঘুনাথপুর পঞ্চায়েতের অতিরিক্ত জল এখানে এসে পড়ে। পরিদর্শক কমিটি জানায়, হাইকোর্টকে তাঁরা রিপোর্ট জমা দেবেন। |