কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পার দুঃসময় যেন কিছুতেই কাটিবার নয়। একটি বিপদ কিছুটা প্রশমিত হইতে না হইতে আর একটি বিপদ উপস্থিত হইতেছে। সবে যখন তিনি দলীয় ‘হাই কমান্ড’-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করিয়া দলে ও রাজ্যে নিজের হৃত রাজনৈতিক জমি পুনরুদ্ধারের আয়োজন করিতেছেন, তখনই সুপ্রিম কোর্টের ছাড়পত্রে বলীয়ান সি বি আই খনি-কেলেঙ্কারির পুরানো অভিযোগেই ইয়েদুরাপ্পা, তাঁহার দুই পুত্র ও জামাতার বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালাইল। বিচলিত, বিপর্যস্ত ইয়েদুরাপ্পা বিজেপি নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার প্রতিজ্ঞা ভুলিয়া তড়িঘড়ি আগাম জামিনের আবেদন করিয়াছেন।
দুর্নীতির দায়ে মুখ্যমন্ত্রী কিংবা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের অভিযুক্ত হওয়া, বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালেই গ্রেফতার হইয়া কারাবাস (যেহেতু ছাড়া থাকিলে তাঁহারা সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাট করিতে বা সাক্ষীদের প্রভাবিত করিতে পারেন) ইদানীং ভারতীয় গণতন্ত্রে দস্তুর হইয়া উঠিয়াছে। কেন্দ্রে লোকপাল এবং রাজ্যে-রাজ্যে লোকায়ুক্ত নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা লইয়া অতএব সংশয়ের অবকাশ নাই। সরকারি পদে থাকিয়া দুর্নীতিতে লিপ্ত হওয়া, জনসাধারণের গচ্ছিত সম্পদকে ব্যক্তিগত মুনাফার জন্য ব্যবহার করা, রকমারি আর্থিক অনিয়মে লিপ্ত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সহিত যোগসাজশে বিপুল হিসাববহির্ভূত সম্পত্তির অধিকারী হওয়ার বহু ঘটনাই বিগত কয়েক দশকে দেশবাসীর গোচরে আসিয়াছে। যখন এই সব রাজনীতিক দলীয় নেতৃত্বের কাছে কাঁটা হইয়া উঠিয়াছেন, তখন প্রায়শ ওই দুর্নীতির অভিযোগগুলিকে তাঁহাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করিয়া তাঁহাদের অপসারিত করা হইয়াছে। অন্যথায় নেতৃত্বের তরফে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত রাজনীতিকের সমর্থনে দাঁড়াইতেই দেখা যায়। অন্ধ্রপ্রদেশে যেমন নিহত কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী রাজশেখর রেড্ডির পুত্র জগন্মোহন রেড্ডি পিতার পদাধিকার ও ক্ষমতা ভাঙাইয়া সাড়ে তিনশো কোটি টাকার সম্পদ হস্তগত করিয়াও দলে একঘরে হন নাই। যখন তাঁহার মুখ্যমন্ত্রিত্বের উচ্চাকাঙ্ক্ষা হাইকমান্ডের পরিকল্পনার সহিত বিরোধে অবতীর্ণ হইল, তখনই সি বি আই তাঁহার বিরুদ্ধে তদন্তে নামিল।
ইয়েদুরাপ্পাকে লইয়া বিজেপির ভাবনার মধ্যে দুইটি বিষয়ে সংশয় ছিল। এক, কর্নাটক একমাত্র দক্ষিণী রাজ্য যেখানে ইয়েদুরাপ্পার সাহায্যে বিজেপি ‘খাতা খুলিতে’ পারিয়াছে। দুই, রাজ্যে প্রভাবশালী লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের অবিসংবাদী নেতা হিসাবে ইয়েদুরাপ্পার কোনও বিকল্প নাই। তাই সদানন্দ গৌড়াকে অভিযুক্ত ইয়েদুরাপ্পার স্থলে মুখ্যমন্ত্রিত্বে বরণ করিলেও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্যের লিঙ্গায়ত ভোটব্যাংক হাতছাড়া করিতে চাহে নাই। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মনোভাব ও বাধ্যবাধকতা বুঝিয়া ইয়েদুরাপ্পাও তাহাদের বিরুদ্ধে নানা সময়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়িতেছিলেন। কিন্তু এখন সি বি আই তাঁহার পিছনে পড়িয়াছে, তাঁহার শহরের ও গ্রামের বাড়িতে তল্লাশি চলিতেছে, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হইতেছে। ইহা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে জেহাদে নামার সময় নয়, বরং নেতৃত্বের আশ্বাস ও ভরসা পাওয়ার লগ্ন। কর্নাটকে বিজেপির ভবিষ্যৎ কী হইবে, উত্তর ভারতের হিন্দি বলয়ের দল হিসাবেই বিজেপি পরিচিত হইবে কি না, সেই সকল প্রশ্নের উত্তরই নির্ভর করিয়া থাকিবে ইয়েদুরাপ্পার রাহুমুক্তির উপর। আগামী বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত সদানন্দ গৌড়ার গদি তাই নিরাপদ। |