জন্ম হারের ক্ষেত্রে এ বার আমেরিকার শ্বেতাঙ্গ শিশুদের পিছনে ফেলে দিল এশীয়, লাতিন আমেরিকান, আর আফ্রিকান বংশোদ্ভূত শিশুরা। আমেরিকার সাম্প্রতিক জনগণনা থেকে এমন তথ্যই জানা গিয়েছে। এই দেশের ইতিহাসে এই ঘটনা নজিরবিহীন।
২০১০ থেকে ২০১১-র জুলাই পর্যন্ত করা জনগণনার সমীক্ষা বলছে, ‘মিশ্র জাতির’ শিশুর জন্মহার বেড়ে হয়েছে ৫০.৪ শতাংশ। মার্কিন শ্বেতাঙ্গ শিশুর জন্মহার কমে দাঁড়িয়েছে, ৪৯.৬ শতাংশ।
জনগণনা ব্যুরোর জাতিগত পরিসংখ্যান বিভাগের প্রাক্তন প্রধান এবং হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ববিদ রডরিক হ্যারিসন বলছেন, “এটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা। মিশ্র জন্মহার বৃদ্ধির ফলে এই প্রজন্ম তাদের বড়দের তুলনায় বৈচিত্রের সঙ্গে অনেক বেশি মানিয়ে নিতে পারবে।” ‘পপুলেশন রেফারেন্স ব্যুরো’-র সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্ক মাথের মনে করছেন, “আমেরিকায় হিসপানিক (লাতিন আমেরিকান বংশোদ্ভূত) অভিবাসীদের জনসংখ্যার বেশিটাই তরুণ প্রজন্ম। ফলে জন্মহার আরও বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।”
এই প্রবণতা বজায় থাকলে ২০৪০-এ পৌঁছে মার্কিন শ্বেতাঙ্গরাই সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে, এমন সম্ভাবনাও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এত দ্রুত সেটা হবে না বলে এখন জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। অভিবাসন আইন ক্রমশ কঠিন হওয়ায় এবং মার্কিন অথর্নীতি দুর্বল হয়ে পড়ায় কিছুটা হলেও লাতিন আমেরিকা, এশিয়া বা আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের আমেরিকায় আসা কমছে।
৩৪ বছরের নার্সিসা মার্সেলিনো যেমন পশ্চিম ভার্জিনিয়ার মার্টিনসবার্গে ১০ আর ৫ বছরের দুই মেয়েকে নিয়ে থাকেন। ২০০০ সালে মেক্সিকো থেকে তিনি আমেরিকা এসেছিলেন। মার্টিনসবার্গে ফলের বাগানে কাজ করার জন্য প্রচুর অভিবাসী নেওয়া হয়। এখানে ২০০০ থেকে ২০০৫-এ হিসপানিক জনসংখ্যা ১৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৮ শতাংশ হয়। কিন্তু ২০০১-এ তা এক ধাক্কায় কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩.৩ শতাংশ। গত দশকে আমেরিকার ৩০টিরও বেশি শহর এলাকায় হিসপানিক জনসংখ্যার হার দ্রুত বাড়লেও ২০১১ থেকে তা কমতে শুরু করেছে। অঞ্চলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে লেকল্যান্ড, ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলাইনা, আটলান্টা, লাস ভেগাস, ফিনিক্স এই সব এলাকায় নির্মাণশিল্পের জোয়ারে অভিবাসীদের সংখ্যা বেড়েছিল। কিন্তু কাজের সুযোগ কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিবাসীদের আসা কমেছে।
মার্সেলিনো বাড়ি থেকে খাবার বিক্রি করেন। আর স্বপ্ন দেখেন কোনও এক দিন অভিবাসন অফিসাররা তাঁকে আমেরিকায় বাস করার জন্য আইনি সম্মতি দেবেন। কিন্তু বৈধতা দেওয়ার বদলে তাঁকে যদি আমেরিকা থেকে ধীরে ধীরে বের করে দেওয়া হয়? “তাতেও খুব খারাপ কিছু হবে না। কারণ আমার বাচ্চারা এখানে জন্মেছে। ওদের জন্য এখানেই বেশি সুযোগ।”
আর এই ‘সুযোগ’ নিয়েই উঠছে কিছু প্রশ্ন। কারণ আমেরিকায় সংখ্যালঘুদের শিক্ষার বিষয়টিও যথেষ্ট বিতর্কিত। যাঁরা ‘পুরনো মার্কিন’, তাঁরা কি এমন একটি প্রজন্মকে শিক্ষিত করে তোলার জন্য পয়সা ঢালতে চাইবেন, যাঁরা দেখতে ‘মার্কিন’ নন? তাঁদের সঙ্গে সামাজিক লেনদেনের বিষয়েও কি সমস্যা হবে না? জানতে চাইছেন নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিবাসন বিদ্যার সহ-অধিকর্তা মার্সেলো সুয়ারেজ ওরোজকো।
যে দেশ বর্ণবৈষম্য, দাসপ্রথা, গৃহযুদ্ধ এবং নাগরিকের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের মতো বিতর্কিত বিষয় পেরিয়ে এসেছে, মিশ্র জাতির জন্মহার বৃদ্ধি সেই দেশের জন্য এখন নতুন চিন্তার বিষয়। |