সকাল ৯টা বাজার আগেই তপ্ত হয়ে উঠছে বাতাস। বেলা ১২টার আগেই রাস্তায় বার হওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ঘরেও স্বস্তি নেই। তাপমাত্রার পারদ ছুঁয়েছে ৪০-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া এমন বিরূপ হয়ে ওঠায় গাজল থেকে হিলি রাজ্য সড়কের দু’পাশের গাছ কেটে ফেলার পরেও নতুন করে গাছ রোপণ না-করাকে দায়ী করছেন জেলার বাসিন্দারা। ২০০৬ সালে রাস্তা চওড়া করার কাজ শুরু হলে রাজ্য সড়কের দু’পাশের প্রায় ৬ হাজার শতাব্দী প্রাচীন গাছ কেটে ফেলা হয়। জেলার বাসিন্দাদের অভিযোগ, সে সময়ে ঠিক হয়েছিল কেটে ফেলা গাছের পরিবর্তে বন দফতর ২০ হাজার গাছ রোপণ করবে। সে জন্যই বন দফতরকে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। সে কাজ না-হওয়ায় আবহাওয়া অসহ্যকর হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবেশপ্রেমী সংস্থাগুলি। বালুরঘাটের পরিবেশপ্রেমী সংস্থার সম্পাদক তূহিনশুভ্র মন্ডলের অভিযোগ, রাস্তা চওড়ার প্রকল্পে একটি গাছ কাটার বদলে পাঁচটি লাগানোর শর্ত ছিল। ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে যাওয়া রাস্তায় বন দফতরের তরফে আজও বৃক্ষরোপণের পদক্ষেপ করা হয়নি।” ইতিমধ্যে বালুরঘাটের ওই সংস্থা বিষয়টি জানিয়ে বনমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে। বালুরঘাটের বিধায়ক তথা কারামন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী ঘটনার কথা শুনে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “রাস্তা চওড়ার কাজ শেষ হওয়া সত্বেও কেন এখনও গাছ লাগানো হয়নি খোঁজ নিচ্ছি।” রাস্তা চওড়ার কাজে নিযুক্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রকল্প ম্যানেজার অরুপ রায় বলেন, “পঞ্চায়েতের অধীনে থাকা গাছ কেটে তাঁরা নিলামে বিক্রি করে বনসৃজনের প্রক্রিয়া চালাবে বলেছিল। পাশাপাশি পূর্ত দফতরের কয়েক হাজার গাছ কাটার পরে চুক্তি অনুযায়ী বন দফতরকে একটির বদলে পাঁচটি গাছ লাগানোর জন্য প্রায় ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়।” কেন তাঁরা এখনও গাছ লাগাননি জানতে চাইলে বালুরঘাটের রেঞ্জ অফিসার দিবাকর আচার্য বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নেব।” বিভাগীয় বনাধিকারিক অপূর্ব সেন বলেন, “গাছ লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” তার দাবি, “গত বছর জেলায় ২৭ হেক্টর জমিতে বনসৃজন হয়েছে। এ বছর ৩০ হেক্টর জমিতে গাছ লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে কবে থেকে তা শুরু হবে সে সম্পর্কে তিনি স্পষ্ট করে বলতে পারেননি।” কৃষি দফতরের পরিসংখ্যান থেকেও জানা গিয়েছে, গত কয়েক বছরে জেলার গড় বৃষ্টিপাতে ব্যাপক হেরফের ঘটে গিয়েছে। ২০১০ সালের এপ্রিলে বৃষ্টি হয়েছিল ৬০ মিলিমিটার। মে মাসে ১৪৫ মিলিমিটার। ২০১১ সালে এপ্রিলে ৫৯.৩১ মিলিমিটার এবং মে মাসে ২২১ মিলিমিটার। এ বছর সেখানে এপ্রিল মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩০ মিলিমিটার। মে মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৩৪ মিলিমিটার। ব্যাপক হারে গাছ কাটার ফলে গত ৬ বছরে দক্ষিণ দিনাজপুরে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতেও ব্যাপক অদল বদল ঘটে গিয়েছে। যেমন, ২০০৬ সালে জেলায় গড় বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১১২৬ মিলিমিটার। ২০০৭ সালে ১৪৯১ মিলিমিটার। ২০০৮ সালে ১৩৭১ মিলিমিটার। ২০০৯ সালে ১১৯৬ মিলিমিটার। ২০১০ সালে ১৬০০ মিলিমিটার। ২০১১ সালে বার্ষিক গড় বৃষ্টির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৪৭১ মিলিমিটার। |