ফের বিতর্কে মালদহের জেলাশাসক শ্রীমতি অর্চনা। এ বার তাঁর অফিসে সাংবাদিকদের ঢোকা ‘বন্ধ’ করতে পুলিশ মোতায়েন করানোর অভিযোগ উঠেছে জেলাশাসকের বিরুদ্ধে। যে অভিযোগ বুধবার দুপুরেই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে অস্বীকার করেছেন শ্রীমতি অর্চনা।
কিন্তু, জেলাশাসকই তাঁকে ওই ‘ফরমান’ জারির নির্দেশ দিয়েছেন বলে পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক ডেকে দাবি করেছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) নুরুল ইসলাম। বলেছেন, “আমার মাথায় কি শিং গজিয়েছে, যে আমি ডিএমের নির্দেশ ছাড়া পুলিশ দাঁড় করিয়ে সাংবাদিকদের ঢোকা আটকানোর কথা বলব?” শুধু তাই নয়, তাঁর আরও ক্ষোভ, “এই জেলায় কাজ করা যায় না! তাই এই জেলা থেকে বদলি চেয়ে স্বরাষ্ট্র দফতরের (কর্মীবর্গ) কাছে আবেদন করেছি।”
ডিএম-এডিএমের এই ‘বেনজির’ চাপানউতোর উস্কে দিচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুরের অভিজ্ঞতা। ওই জেলার ডিএম থাকাকালীনও শ্রীমতি অর্চনার সঙ্গে প্রশাসনিক কর্তাদের বিরোধ বেধেছিল। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) রামকৃষ্ণ মণ্ডল-সহ জেলা প্রশাসনের একাধিক আধিকারিক রাজ্য স্বরাষ্ট্র (কর্মীবর্গ) দফতরে অভিযোগ করেন, ডিএম অধস্তন কর্মীদের সামনেও তাঁদের সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার’ করেন। |
গত ৯ মে দুপুরে তাঁর বাংলোয় কর্তব্যরত মহিলা এনভিএফ কর্মী পার্বতী হালদারকে শৌচাগারে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছিল শ্রীমতি অর্চনার বিরুদ্ধে। তা নিয়ে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়। এর পরেই জেলাশাসক তাঁর অফিসে সাংবাদিকদের গতিবিধি ‘নিয়ন্ত্রণের’ নির্দেশ দেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। এ দিন সকাল থেকে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা সাংবাদিকদের ডিএম অফিসে ঢুকতে বাধা দেয়। ঘটনার কথা জেনে একাধিক মন্ত্রীও খোঁজখবর শুরু করেন।
এর পরেই বেলা ১২টায় সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন জেলাশাসক। সেখানে বলেন, “ডিএম অফিসে সাংবাদিকেরা ঢুকতে পারবেন না, এমন কোনও ফতোয়া আমি দিইনি। আমার নামে মিথ্যে রটনা করা হয়েছে।” শুধু তা-ই নয়, সাংবাদিকদের সামনেই তিনি কর্তব্যরত পুলিশকর্মী সিরাজুল ইসলামকে ডেকে জানতে চান, সাংবাদিকদের আটকানোর নির্দেশ তাঁকে কে দিয়েছেন? ওই পুলিশকর্মী তাঁকে জানান, অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) ওই নির্দেশ দিয়েছেন। এর পরে জেলাশাসক বলেন, “এডিএম ওই নির্দেশ দিয়েছেন বলে যা শুনলাম, তা বিশদে খোঁজ নেব।”
এ কথা জেনেই এডিএম নুরুল ইসলাম তাঁর অফিসে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে দাবি করেন, “মঙ্গলবার এক সাংবাদিক ডিএম অফিসের অতিথি কক্ষে বসেছিলেন। তা জানতে পেরে ডিএম ম্যাডাম আমাকে ডেকে বলেন, গেটে পুলিশ দিয়ে সাংবাদিকদের তাঁর অফিসে ঢোকা বন্ধ করাতে হবে। সেই নির্দেশ মেনেই আমি কাজ করেছি।”
তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, জেলাশাসকের অফিস সরকারি জায়গা। সেখানে সকলেরই ঢোকার অধিকার রয়েছে। লিখিত নির্দেশ না পেয়ে কেন সাংবাদিক আটকানোর জন্য পুলিশকে বললেন? এডিএমের জবাব, “ভয়ে এটা করেছি! ডিএমের মুখের কথাই তো সরকারি নির্দেশ! এখন আমার ঘাড়ে দায় চাপিয়ে উনি বাঁচতে চাইছেন।” এ প্রসঙ্গে জেলাশাসকের প্রতিক্রিয়া, “কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে মনে হচ্ছে। দেখছি কী করা যায়।”
নির্দেশ নিয়ে যতই চাপানউতোর থাকুক, এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এই জেলারই বিধায়ক তথা রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। তিনি বলেন, “জেলাশাসক যদি সাংবাদিকদের ডিএম অফিসে ঢোকার উপরে ফতোয়া জারি করে থাকেন, তবে উনি ঠিক কাজ করেননি।জেলা প্রশাসনের কর্তাদের বলব, সাংবাদিকদের সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়ে উন্নয়নে মন দিন।” সাংসদ তথা প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি মৌসম বেনজির নুর বলেন, “অনেক সাংবাদিক তো আমাদের বিরুদ্ধে লিখছেন। তা হলে কি আমি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেব? আমার বাড়িতে, অফিসে ঢুকতে দেব না? জেলাশাসক ঠিক কাজ করেননি।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্রের অভিযোগ, “এই ফতোয়া জারি করে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করতে চাইছেন জেলাশাসক।” |