দু’টিই রাজ্য সরকারের দফতর। এবং দু’টি দফতরই কাজ করে জল নিয়ে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মূল লক্ষ্য পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করা। আর কৃষকদের জন্য সেচের জলের ব্যবস্থা করাই ক্ষুদ্রসেচ দফতরের কাজ। জলের সংস্থান নিয়েই বিরোধ বেধে গিয়েছে দুই দফতরের মধ্যে।
সেচের কাজে ঢালাও ভাবে নলকূপ ব্যবহারের জন্য ক্ষুদ্রসেচ দফতর সম্প্রতি যে-অনুমতি দিয়েছে, সরাসরি তার বিরোধিতায় নেমেছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। তাদের বক্তব্য, ক্ষুদ্রসেচ দফতরের ওই নির্দেশিকার ফলে ভূগর্ভস্থ পানীয় জল দূষিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে।
রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ক্ষুদ্রসেচ দফতরের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বুধবার বলেন, “এই ধরনের ছাড়পত্র দিয়ে বেপরোয়া ভাবে মাটির নীচের জল তুলে নিলে অদূর ভবিষ্যতে বিশাল সামাজিক সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।” কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের জল সংক্রান্ত সব দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন সুব্রতবাবু। তাঁর মন্তব্য, “সবুজ বিপ্লবের স্নোগান দিয়ে ১৯৭২ সাল থেকে ঢালাও ভাবে গভীর নলকূপ, অগভীর নলকূপ বসিয়ে মাটির জল তোলা হয়েছে। এক-ফসলি জমিকে দো-ফসলি, তিন-ফসলি করে তোলা হয়েছে জোর করে। তাতে বিস্তীর্ণ এলাকায় মাটির নীচের জলস্তর হুহু করে কমে গিয়েছে।”
অতীতের সেই ভুলের খেসারত এখনও দিতে হচ্ছে বলে জানান সুব্রতবাবু। তাঁর বক্তব্য, বৃষ্টির জল কিংবা নদীর জল ধরে ভূস্তরে তা ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা না-হওয়ায় তার ফল ভুগতে হচ্ছে। মাটির নীচের জল থেকে আর্সেনিক, ফ্লুওরাইডের মতো বিষ উঠে এসে মানুষের মারাত্মক ক্ষতি করছে। বিশেষজ্ঞদের সুরেই জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী বলেন, “বিষাক্ত জল সেচের কাজে ব্যবহার করার ফলে ফসলেও বিষের প্রভাব পড়ছে। রাজ্যের এই পরিস্থিতি জানা সত্ত্বেও আবার যদি ভূগর্ভের জল তোলার ঢালাও অনুমতি দেওয়া হয়, তাতে অদূর ভবিষ্যতে রাজ্যে সামাজিক সমস্যা দেখা দেবে।”
নতুন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সবুজ বিপ্লবের স্লোগান তুলেছেন। সে-ক্ষেত্রে কি ফের ভূগর্ভের জলের উপরে চাপ পড়বে না?
সুব্রতবাবু অবশ্য এই বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি।
ক্ষুদ্রসেচ দফতর থেকে এ দিন বলা হয়, রাজ্যের কোথায় কী ধরনের নলকূপ বসানো হবে, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় জল অনুসন্ধান দফতর। এ ক্ষেত্রেও তারাই অনুমতি দিয়েছে।
রাজ্যের জল অনুসন্ধান দফতর এমন ‘বিতর্কিত’ বিষয়ে অনুমোদন দিল কী ভাবে?
ওই দফতরের অধিকর্তা সুরজিৎ দাশ জানান, কিছু দিন আগে যোজনা কমিশন থেকে চিঠি দিয়ে তাঁদের জানানো হয়, হঠাৎই পশ্চিমবঙ্গে কৃষিপণ্যের উৎপাদন কমে গিয়েছে। মূলত সেচের জলের সমস্যার জন্যই কৃষি উৎপাদন কমেছে বলে তাদের ধারনা। তাই কৃষকদের জন্য ভূগর্ভ থেকে জল তোলার ব্যবস্থা করা হোক। তারই ভিত্তিতে
বিনা অনুমোদনেই চাষিদের ভূগর্ভস্থ জল তোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু সেই অনুমতি দেওয়ার আগে জেলাগুলিতে ভূগর্ভে জলস্তরের অবস্থা কী, তা খতিয়ে দেখা উচিত ছিল বলে মনে করেন জল অনুসন্ধান দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ। এক ইঞ্জিনিয়ার এ দিন বলেন, বিনা অনুমতিতে ভূগর্ভস্থ জল তোলার ফলে রাজ্যের কোথায় কী সমস্যা হয়েছে, সেই বিষয়ে জুনের মধ্যেই রিপোর্ট চেয়েছেন ক্ষুদ্রসেচ মন্ত্রী। শুধু রিপোর্ট দেওয়াই নয়, বাস্তব পরিস্থিতির উপরে দাঁড়িয়ে এ ব্যাপারে সরকার কী করা উচিত, সেই বিষয়ে মতামত দিতে হবে সংশ্লিষ্ট অফিসারকে। জল অনুসন্ধান দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ চান, আগাম অনুমতি ছাড়া ভূগর্ভস্থ জল তোলার উপরে আগের নিষেধাজ্ঞা ফের বলবৎ হোক। |