রাজ্যের মারোয়াড়ি সমাজকে কাছে টানতে ফের উদ্যোগী হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার টাউন হলে বিভিন্ন ভাষাভাষী অতিথির সামনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি কোনও দিন মারোয়াড়ি বা অন্য ভাষার মানুষদের আলাদা চোখে দেখিনি। এ শহরের মারোয়াড়িদের মধ্যে অনেকেই কোনও অংশে কম বাঙালি নন।”
এসইজেড ও জমি সংক্রান্ত নীতির জেরে ইতিমধ্যে শিল্প-মহলে মমতাকে নিয়ে কিছু প্রশ্ন দানা বেঁধেছে। এই শিল্পপতিদের একটা বড় অংশই মারোয়াড়ি বা অবাঙালি। আমরি হাসপাতালের কর্তাদের বিরুদ্ধে রাজ্য প্রশাসনের কড়া আইনি ব্যবস্থাতেও বণিক সমাজের একাংশ কিছুটা ‘আহত’ হয়েছিল। আমরি-কর্তারাও বেশির ভাগই মারোয়াড়ি তথা অবাঙালি। কিন্তু রাজ্যের অবাঙালি সমাজ তথা ব্যবসায়ীদের প্রতি রাজ্য সরকারের মনোভাব যে এতটুকু বিরূপ নয়, তা বোঝাতে এর পরে নানা ভাবে সক্রিয় হয়েছেন মমতা।
যেমন গত ২৮ এপ্রিল বিড়লা পরিবারের প্রবীণ কর্তা বসন্তকুমার বিড়লা ও তাঁর স্ত্রী সরলা বিড়লার ৭০তম বিবাহ-বার্ষিকীতে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন মারোয়াড়ি সমাজের উদ্দেশে মমতার ‘আহ্বান’-এর মধ্যেও অনেকেই সামগ্রিক ভাবে ব্যবসায়ী সমাজের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ বার্তা খুঁজে পাচ্ছেন। যেখানে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে সঙ্গে নিয়ে মমতা বলেছেন, “আমার কাছে সবাই এক। কিন্তু কেউ কেউ একটা নোংরা খেলা (ডার্টি গেম) খেলেন। বিভেদের রাজনীতি করেন। সেটা অন্যায়।” সরাসরি আমরি-কাণ্ডের প্রসঙ্গ না টেনেও মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “এক জন বাঙালি যদি খুন করেন, তাঁকে শাস্তি পেতে হবে। অন্য কেউ করলেও শাস্তি পেতে হবে। আইনের চোখে ভেদ নেই।” |
এ দিনের অনুষ্ঠানের উপলক্ষ অবশ্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। রাজস্থানি ভাষায় ‘গীতাঞ্জলি’-র অনুবাদ ‘অঞ্জলি গীতান রি’-র আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করতেই গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশিষ্টদের অনেকের সামনে অনুষ্ঠানটিকে মারোয়াড়িদের প্রতি তাঁর আন্তরিক মনোভাব প্রকাশের মঞ্চ হিসেবে কার্যত ব্যবহার করেন মমতা। প্রবল হাততালির মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত চিত্রতারকা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে রাজস্থানি ভাষায় ছবি করতে বলেন। সঙ্গীতশিল্পী স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্তকে বলেন, রাজস্থানি ভাষায় গান করতে। বস্তুত জয়পুরের ইক্রাম রাজস্থানি-র এই অনুবাদ প্রয়াসও কলকাতার মারোয়াড়ি সমাজের কয়েক জনেরই উৎসাহে। কাজটিকে তারিফ করে মমতা মনে করিয়ে দেন, রাজ্য সরকারও বিভিন্ন ভাষায় রবীন্দ্রনাথের লেখা অনুবাদে উদ্যোগী হয়েছে।
অনুষ্ঠানের আয়োজক সংস্থার তরফে সন্দীপ ভুতোড়ীয়া রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথের লেখায় রাজপুতানার বীরগাথার প্রসঙ্গ ফিরে ফিরে আসার কথা উল্লেখ করেছিলেন। মমতাও বিভিন্ন ভাষাভাষী-গোষ্ঠীকে সংস্কৃতির মাধ্যমে কাছাকাছি আনার গুরুত্বকে তুলে ধরেন। তাঁর কথায়, “বেশির ভাগ ভারতীয় ভাষার মধ্যেই বেশ মিল। ভাষা একটা সেতুর মতো।” সম্ভবত অ-বাংলাভাষী অতিথিদের কথা ভেবেই নিজে বলার আগে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে হিন্দিতে কিছু বলার নির্দেশ দেন মমতা। ইক্রাম সাহেবকে মঞ্চে ডেকে তাঁর অনূদিত দোহা-র লাইন নিয়ে আলোচনা করেন। এর পরে নিজে বলতে উঠে একসঙ্গে বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি মিশিয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, “আজকাল অনেকেই একসঙ্গে অনেকগুলো ভাষা মিশিয়ে বলেন। বিজ্ঞাপনে যেমন দেখা যায়। এটাও এক ধরনের আর্ট!” |