প্রথিতযশা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত গায়ক, প্রয়াত গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী ‘গীত-সরস্বতী’ গৌরীদেবীর জীবনাবসান হয়েছে বুধবার। সঙ্গীত মহলের মতে, গৌরীদেবীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে অবসান হল বিষ্ণুপুর ঘরানার স্বর্ণযুগের।
স্বামীর মৃত্যুর পরে একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে ১৯৮৪ সালে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল ওস্তাদপাড়ার বসত বাড়িটি।
|
গৌরীদেবী |
পরে স্বামী-বিচ্ছিন্না কন্যাকে নিয়ে খুব অর্থ সঙ্কটে পড়েছিলেন তিনি। সংবাদ মাধ্যমে সে কথা জানাজানির পর ২০০১ সালে রাজ্য সরকার বিষ্ণুপুর বৈলাপাড়ায় সরকারি আবাসনে বিনা ভাড়ায় গৌরীদেবীকে একটি ফ্ল্যাট দিয়েছিল। তথ্য-সংস্কৃতি দফতর মাসিক পেনশনের ব্যবস্থা করেছিল।
বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ সেই সরকারি আবাসনেই হৃদরোগে মারা যান এই কিংবদন্তি ধ্রুপদ শিল্পী। বয়স হয়েছিল ৮৩। রেখে গেলেন একমাত্র কন্যা স্বপ্না বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভিড় জমান বিষ্ণুপুরের সংস্কৃতি ও সঙ্গীত জগতের মানুষজন। মহকুমা প্রশাসনের পক্ষে মরদেহে মালা দেন বিষ্ণুপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ফাল্গুনী রায়, বিষ্ণুপুরের উপ-পুরপ্রধান বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়। ম্যাটাডরে গৌরীদেবীর মরদেহ বিষ্ণুপুর রামশরণ সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়, বিষ্ণুপুর সংগ্রহশালা হয়ে নতুন মহল শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। আবাসন থেকে শ্মশান পর্যন্ত গৌরীদেবীর শেষযাত্রায় সর্বক্ষণ ছিলেন রামশরণ সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সুজিত গঙ্গোপাধ্যায়। |
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন গৌরীদেবীর মেয়ে। ছবি: শুভ্র মিত্র। |
তাঁর কথায়, “গত ১৫ বছরের বেশি আমাদের কলেজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই বয়সেও ধ্রুপদ-ধামারে কী সুরেলা গলা! বিষ্ণুপুরের স্বর্ণযুগের শেষ শিল্পী চলে গেলেন! আমরা আক্ষরিক ভাবেই অভিভাবকহীন হয়ে গেলাম।”
স্বামী স্বনামখ্যাত। তাঁর সঙ্গে তো বটেই, নিজেও একা-একা অনুষ্ঠান করে এসেছেন দিল্লির সঙ্গীত-নাটক অ্যাকাডেমিতে, কলকাতার বঙ্গ-সংস্কৃতি সম্মেলনে, বার্নপুর ভারতী ভবনে এবং দূরদর্শনে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পেয়েছেন স্বর্ণ পদক। ‘গীত-সরস্বতী’ উপাধি ও সম্মান-স্মারক নিয়েছেন প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেনের হাত থেকে। বছর পনেরো আগে বাংলা সঙ্গীত মেলায় রাজ্য সরকার তাঁকে সংবর্ধনা জানায়। উপ-পুরপ্রধান বলেন, “বিষ্ণুপুরের সঙ্গীত জগতে একটি যুগের অবসান হল।” শোকপ্রকাশ করেছেন জেলা তথ্য-সংস্কৃতি আধিকারিক গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিশিষ্টজনেরা। |