আইপিএল সমাজে স্টিং অপারেশনের পরিপ্রেক্ষিতে তোলপাড় পড়ে যাওয়া অলিখিত নতুন বিধিনিষেধ জারি হল বুধবার। একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজি নতুন করে হুঁশিয়ার করে দিল তাদের ক্রিকেটারদের যে, অপরিচিত ব্যক্তিবিশেষের সঙ্গে কেউ পারতপক্ষে কথা বলবে না। অত্যন্ত কাছের না হলে কাউকে ঘরে ডাকবে না। বাড়ির লোককেও টিম কী নামছে, জানাবে না। আর বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকবে ফ্যান সেজে আসা সুন্দরী মহিলাদের সান্নিধ্য সম্পর্কে। পোড়খাওয়া বুকিরা এখন নাকি গোপন খবর জানার জন্য মহিলাদেরই টোপ হিসেবে ব্যবহার করছে।
আর পাঁচটা ফ্র্যাঞ্চাইজির মতো কেকেআরও তার ক্রিকেটারদের জন্য সতর্কবার্তা জারি করল। নতুন করে বলে দেওয়া হল, খুব সচেতন থাকতে। এ দিকে দুই নাইট ক্রিকেটার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, তাঁদের ঘরেও টিভি রিপোর্টার গোপন ক্যামেরা নিয়ে ঢুকেছিলেন। দু’জনেই উত্তরাঞ্চলের ক্রিকেটার। রিপোর্টার ঢুকে বাথরুমে যান। এর পর বেরিয়ে আসার পর কথাবার্তা আর গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় দুই ক্রিকেটারই চুপ করে যান।
প্রশ্ন হল, রিপোর্টারটি ঘর অবধি গেলেন কী করে? জানা গেল, বিসিসিআইয়ের কাল সাসপেন্ড করা পাঁচ ক্রিকেটারের মধ্যে এক জনই নাকি ফোন করে বলেছিলেন একটা বাণিজ্যিক চুক্তির ব্যাপারে কথা বলতে এক জনকে পাঠাচ্ছি।
এ দিন ভারতীয় ক্রিকেটের রাজধানীতে অবশ্য কথা বলে বোর্ডের সাসপেনশন সম্পর্কে পরিষ্কার দু’ভাগে বিভক্ত গোষ্ঠীকে পাওয়া গেল। এক দল, যাঁরা মনে করেন দুর্নীতি ক্রমবর্ধমান হচ্ছে ক্রিকেটে। চরম ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া বোর্ডের উপায় ছিল না। ক্রিকেটে দুর্নীতির প্রকোপ দেখে এঁরা ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ছেন। আর এক দল মনে করেন, ইন্ডিয়া টিভি-র স্কুপ-এ মোটেও বিলেতের নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড-এর কামড় নেই। এ পর্যন্ত যা বেরিয়েছে নিছকই মামুলি। স্থানীয় ম্যাচে স্পটফিক্সিংয়ের কাহিনি বাদ দিলে যা আছে তা হল, চুক্তির বাইরে টেবিলের তলা দিয়ে অর্থ লাভ। দ্বিতীয় গোষ্ঠীর বক্তব্য হল, এটা বহু বছর ধরেই আইপিএলে চলে আসছে। অনামী পাঁচ ক্রিকেটার কেন, মহাতারকাদের ক্ষেত্রেও হয়। এর জন্য বাচ্চা-বাচ্চা ক্রিকেটারদের দায়ী করে কী হবে? দোষী ফ্র্যাঞ্চাইজিদেরও শাস্তি দেওয়া হোক। টেবিলের তলা দিয়ে যারা চুক্তিবহির্ভূত টাকা পাচ্ছে তারা যদি অপরাধী হয়, যারা দিচ্ছে তারা তো সমান অপরাধী।
প্রশ্ন হল, বড় বড় ফ্র্যাঞ্চাইজিদের ক্ষেত্রে নিবিড় অনুসন্ধান চালিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হবে বোর্ডের?
এ দিন আইপিএল পরিচালন কমিটির এক সদস্য অবশ্য দাবি করলেন, বোর্ড এ বার বজ্রকঠোর হবে। এ বার ক্রিকেট বোর্ডের ভাবমূর্তির প্রশ্ন এসে গিয়েছে। তা ছাড়া এই সদস্যটির মতে গত কাল টেলিকনফারেন্সের সময় শীর্ষ বোর্ডকর্তা জোর দিয়ে বলেছেন, চ্যানেলের পুরো টেপ দেখে তিনি নিশ্চিত, অবিলম্বে কঠিন ব্যবস্থা নিতে হবে।
সচিন তেন্ডুলকরের ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু বলছিলেন, সচিনের মনোভাব এই কেলেঙ্কারির পরেও বরাবরের মতোই থাকবে। তিনি নিজে মাথা উঁচু করে খেলবেন। বিতর্কে জড়াবেন না। তাঁর কাঁধে কাউকে বন্দুক রাখতে দেবেন না। নিজে সাচ্চা ক্রিকেট খেলে বরাবরের মতো বার্তা দেবেন হবু ক্রিকেটারকে। কী হতে চাও, সৎ পথে থেকে আমার মতো শ্রদ্ধা চাও? নাকি লোভে পড়ে নিজের মুখ কালো করতে চাও ওই সাসপেন্ড হওয়া ছেলেগুলোর মতো! |