|
|
|
|
লক্ষ্য গণবণ্টনে স্বচ্ছতা |
রেশন ব্যবস্থার হাল জানাতে এ বার ফর্ম ভরবেন গ্রাহকরাই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
গণবণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগ এ রাজ্যে নতুন নয়। একটা সময়ে রেশন-রোষ চরমে গিয়ে পৌঁছেছিল। বার বার নানা ব্যবস্থা নিয়েও সুরাহা হয়নি। গণবণ্টনে স্বচ্ছতা আনতে এ বার তাই এক নতুন ব্যবস্থা চালু করল খাদ্য দফতর। এ জন্য এক-পাতার একটি ফর্ম ছাপা হয়েছে। ওই ‘কাস্টমার ইন্টার্যাকশন ফর্মে’র মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকায় রেশন ব্যবস্থার হালহকিকত জানাতে পারবেন গ্রাহকরা। জেলায় জেলায় এই ফর্ম ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য দফতর।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা খাদ্য দফতর জানিয়েছে, দুর্বল পরিকাঠামো দিয়ে জেলার ৩ হাজার রেশন ডিলারের উপর নজরদারি চালানো সম্ভব নয়। তার উপর রয়েছে ১৭৮ জন ডিস্ট্রিবিউটর এবং কেরোসিনের বড় ডিলার। হাতেনাতে কারচুপি ধরতে যেমন কর্মী বা অফিসার প্রয়োজন তেমনই দরকার পর্যাপ্ত গাড়ির। কিন্তু খাদ্য দফতরে কর্মী ও গাড়ি কোনওটাই পর্যাপ্ত নেই। তা ছাড়া, রেশন ডিলার বা ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে দফতরের এক শ্রেণির কর্মী-অফিসারদের ঘনিষ্ঠতাও দুর্নীতির জন্য দায়ী। এই সব বন্ধ করতেই চালু হচ্ছে ফর্ম-ব্যবস্থা। জেলা খাদ্য নিয়ামক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “এক একটি এলাকা থেকে ১০০ জনকে দিয়ে এই ‘ফর্ম’ ভর্তি করা গেলেই এক জন রেশন বা কেরোসিন ডিলার সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে। সেখানে কোনও ডিলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেখলেই ব্যবস্থাও নেওয়া যাবে। সব দোকানে ঘুরে তল্লাশি চালানো খুব কঠিন। তাই এই ফর্ম চালুর উদ্যোগ।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের ২৯টি ব্লকের মধ্যে ১১টি মাওবাদী প্রভাবিত। এমনিতেও ‘পিছিয়ে পড়া’র তকমা রয়েছে এই জেলার। স্বাভাবিক ভাবেই এমন জেলায় গণবণ্টন ব্যবস্থাকে মজবুত করতে না পারলে নিয়মিতই ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা দেবে। তাই এ ক্ষেত্রে দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। সেই লক্ষ্যেই নজরদারি চালানোর পাশাপাশি এ বার ‘ফর্ম’ ভরার নতুন প্রক্রিয়া চালু করল খাদ্য দফতর। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, খাদ্য দফতরের প্রত্যেক ইন্সপেক্টরকে এই ‘ফর্ম’ দেওয়া হবে। তাঁরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গ্রাহকদের দিয়ে মাসে অন্তত ১০টি ফর্ম পূরণ করাবেন। খাদ্য দফতরের অন্য কর্মীদেরও ফর্ম দেওয়া হবে। তাঁরাও মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে ফর্ম ভরে নেবেন। বিডিও অফিস, মহকুমাশাসকের দফতর-সহ বিভিন্ন সরকারি অফিসেও ফর্ম রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফর্মে গ্রাহকের নাম, ঠিকানা, পরিবারের সদস্য সংখ্যা, নিয়মিত রেশন সামগ্রী তোলেন কি না, কোন কোন জিনিস কতটা পরিমাণে পান, ক’দিন দোকান খোলা থাকে, গণবণ্টন ব্যবস্থাকে আরও জনমুখী করতে কোনও পরামর্শ রয়েছে কি নাএই সব জানাতে হবে। গ্রাহকের ফোন থাকলে দিতে হবে নম্বর। তারিখ দিয়ে সই করার জায়গাও রয়েছে ফর্মে। ইতিমধ্যেই কিছু ফর্ম পূরণ হয়ে খাদ্য দফতরের হাতে এসেছে। তাতে গ্রাহকরা জানিয়েছেন, রেশন দোকান আড়াই, বড়জোর তিন দিন খোলা থাকে। বছরের বেশিরভাগ সময়ে চিনি পাওয়া যায় না, গমও নিয়মিত মেলে না। এই সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তল্লাশি চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে জেলা খাদ্য দফতর। |
|
|
|
|
|