আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতিতে বছর কাটছে। ডাম্পিং গ্রাউণ্ড আজও অধরা। নোংরা আবর্জনায় কদর্য চেহারা নিয়েছে ময়নাগুড়ি। সড়ক থেকে পাড়া সর্বত্র একই ছবি। পুঁতিগন্ধময় পরিবেশে চলছে বাজার। নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ও থার্মোকলের জঞ্জালে মুখ ঢেকেছে জরদা নদী। উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও গ্রাম পঞ্চায়েত বা প্রশাসন মহলে তেমন কোনও হেলদোল নেই বলে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতি ও ব্লক প্রশাসনের কর্তারা উদাসীনতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁরা জানান, ডাম্পিং গ্রাউণ্ডের জমি দেখা হলেও এলাকার বাসিন্দাদের আপত্তির জন্য কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দুলালী আধিকারী বলেন, “উদাসীনতার অভিযোগ ঠিক নয়। ভূমি দফতরের কর্তাদের নিয়ে হঠাৎ কলোনিতে ডাম্পিং গ্রাউণ্ডের জন্য জমি দেখা হয়েছে। কিন্তু ওই এলাকার বাসিন্দারা আপত্তি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে। তাই এখন আবার নতুন করে জমি দেখতে হচ্ছে।” ময়নাগুড়ির বিডিও কল্যাণ বড়ুয়া বলেন, “জল্পেশ এলাকাতেও জমি দেখা হয়েছিল। কিন্তু বাসিন্দাদের আপত্তির জন্য সেখানেও ডাম্পিং গ্রাউণ্ড করা সম্ভব হয়নি। জমির খোঁজ করা হচ্ছে। দ্রুত সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চলছে।” যদিও ওই আশ্বাসে জনপদের বাসিন্দারা ভরসা রাখতে পারছেন না। পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক সমরেশ দাস বলেন, “দেড় দশক থেকে একই কথা শুনে আসছি। পঞ্চায়েত সমিতি ও প্রশাসনের কর্তারা দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু হচ্ছে কোথায়! দূষণের প্রকোপ বেড়ে চলায় এলাকা বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়ছে।” একই অভিযোগ আইনজীবী বীণা চৌধুরীর। অভিযোগ উঠেছে, ডাম্পিং গ্রাউণ্ডের দাবি আজকের নতুন নয়। গ্রাম পঞ্চায়েত ও প্রশাসনিক স্তরে দীর্ঘদিন থেকে আলোচনা চলছে। কিন্তু মাস গড়িয়ে বছর গেলেও বাস্তবে কিছু হচ্ছে না। ফলে নিকাশি নালা থেকে নদী সবই আবর্জনা বুঁজে যেতে বসেছে। ডাম্পিং গ্রাউণ্ড না থাকায় শহর এলাকায় বেড়ে চলা দূষণের সমস্যা অস্বীকার করেননি প্রশাসন ও পঞ্চায়েত কর্তারা। ব্লক প্রশাসনের যুগ্ম বিডিও রাজীব দত্ত চৌধুরী বলেন, “দূষণের সমস্যা বাড়ছে। বিশেষ করে জরদা নদী সংস্কার করা হলেও সেখানে যে ভাবে থার্মোকল জমছে তা খুবই উদ্বেগের।” ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়নাগুড়ি, খাগরাবাড়ি-১ এবং মাধবডাঙা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ময়নাগুড়ি শহর সম্প্রসারিত হয়েছে। এলাকার জনসংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। এখানে রয়েছে তিনটি বাজার, হাসপাতাল, কমিউনিটি হল, জেলা পরিষদের বাংলো, ছয়টি ব্যাঙ্ক, পাঁচটি হাই স্কুল এবং প্রচুর সরকারি বেসরকারি দফতর। এছাড়াও বিডিও অফিস মোড় থেকে অসম মোড়, ট্রাফিক মোড় থেকে ওভার ব্রিজ, দুর্গাবাড়ি থেকে ইন্দিরা মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু’পাড়ে প্রচুর দোকান, শোরুম, গ্যারেজ গড়ে উঠেছে। ওই সমস্ত এলাকার জঞ্জাল কোথায় ফেলা হবে তার কোনও ব্যবস্থা ডুয়ার্সের ওই জনপদে নেই। হোটেল ও রেস্টুরেন্টের জঞ্জাল ফেলা হচ্ছে জরদা নদীতে। বাজারের আবর্জনাও জমছে সেখানে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ডাম্পিং গ্রাউণ্ডের ব্যবস্থা না থাকায় ওই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। |