কোনও সাপকে লোকালয় থেকে উদ্ধার করে বন দফতর বা বিভিন্ন পরিবেশপ্রেমী সংস্থার কর্মীরা সাধারণত সেই সাপটিকে দূরের কোনও জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে আসেন। এই প্রবণতাকে অত্যন্ত ক্ষতিকারক বলে দাবি করলেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এতে সাপটির মৃত্যুর আশঙ্কা তৈরি হয়। দূরবর্তী এলাকায় সাপ ছেড়ে আসার প্রবণতাকেই নস্যাৎ করে দিয়েছেন সর্প এবং সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ রেজি মার্টিন। বেঙালুরুর এই সর্প বিশেষঞ্জ তাঁর এক ব্রিটিশ সঙ্গীকে নিয়ে সম্প্রতি অরুণাচলে সমীক্ষার কাজ করেছেন। সেখান থেকে তাঁরা জলপাইগুড়ি জেলায় এসেছেন। বুধবার জলপাইগুড়ির প্রয়াস হলে বিভিন্ন পরিবেশপ্রেমী, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, স্কুলের ছাত্রছাত্রী, এনসিসি সদস্যদের নিয়ে একটি কর্মশালা করেন রেজি মার্টিন। কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন আইএএস অফিসার বালাগোপাল। আশির দশকে তিনি জলপাইগুড়ির জেলাশাসকও ছিলেন। মূলত বালাগোপালের উদ্যোগেই বিশেষজ্ঞরা জলপাইগুড়িতে এসেছেন। এদিন বালাগোপাল জানান, সাপ ধরা, সাপে কামড়ালে কী ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন সেই সব নিয়ে মানুষের মনে চিরাচরিত কিছু ধারণা রয়েছে। যেগুলি সঠিক নয়। কোনও এলাকায় সাপ ধরা হলে তাকে কখনোই সেই এলাকা থেকেছে ১৫-২০ কিলোমিটার দূরের কোনও এলাকায় বা জঙ্গলে ছেড়ে আসা উচিত নয়। তা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে বিশেষজ্ঞরা জলপাইগুড়িতে এসেছেন। কর্মশালায় বিশেষজ্ঞ রেজি মার্টিন জানান, সাধারণত দেখা যায় লোকালয়ে সাপ বার হলে হইচই শুরু হয়ে যায়। তারপরে সেই সাপ ধরে দূরের কোনও এলাকায় ছেড়ে দিয়ে আসা হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে সাপকে দূরের এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হলে আশি শতাংশ ক্ষেত্রেই সাপের মৃত্যু হয়। যারফলে পরিবেশগত বাস্তুতন্ত্রে খারাপ প্রভাব পড়ছে। সাপকে দূরবর্তী এলাকায় ছেড়ে দিয়ে এলে তার কী প্রভাব পড়তে পাড়ে তা বিস্তারিত বুঝতে সাপের গায়ে রেডিও কলার জাতীয় যন্ত্র লাগিয়ে দিয়ে দেখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, একটি সাপ লোকালয়ে ধরা পড়লে সেটিকে এলাকার জনবিরল বা ফাঁকা জায়গায় ছেড়ে দেওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশিরভাগ জনবহুল এলাকাতেই সাপ থাকে। তারা সাধারণত প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করে না। কখনও মানুষের আঘাত পেয়ে বা অন্য কোনও বিশেষ কারণে সাপ বার হয়ে পড়ে। সেই সাপকে ধরে দূরের কোনও এলাকায় ছেড়ে আসলে সে তার মানানসই পরিবেশ পায় না। তার সঙ্গীদেরও খুঁজে পায় না। নতুন এলাকায় খাবারের সঙ্গেও তার স্বাভাবিক পরিচিত ঘটে না। তাই তাদের মৃত্যুর আশঙ্কা বেড়ে যায়। |