নদীর জলে নেমে এক মনে স্নান সেরে নিচ্ছে সে। পাড়ে দাঁড়িয়ে গাঁয়ের বাসিন্দারা ভিড় করে ওই দৃশ্য উপভোগ করছেন। শহর থেকে যাওয়া লোকজন ক্যামেরা বন্দি করতে ভুলছেন না। কিন্তু যাকে ঘিরে ধূপগুড়ি ব্লকের গারোকুট্টা গ্রামে এত হইতই সেই বুনো দাঁতাল নির্বিকার। তেড়ে যাওয়া পরের কথা। দু’ফুট হেঁটে যাবে সেই ঝুঁকিও নিতে পারছে না। পারবে কেমন করে! ফুলে ঢোল একটি পা। কখনও খুঁড়িয়ে। কখনও মাটিতে ঘষ্টে হাঁটতে হচ্ছে। একটু ভাল লাগলে তবেই ১০ ফুট ১০ ইঞ্চি উঁচু বিশাল দেহ নিয়ে নোনাই নদীর জলে নামা। বনকর্তারা জানান, রাজ্যের অন্য কোনও জঙ্গলে এত বড় মাপের হাতি সচরাচর দেখা যায় না। বাঁ পায়ের সংক্রমণে সে এতটাই কাবু যে আশপাশে লোকজন দাঁড়িয়ে দেখে পিছু নেওয়ার কথা ভাবতে পারছে না। পরিবেশপ্রেমীদের আশঙ্কা যে ভাবে বুনোটি কষ্ট পাচ্ছে দ্রুত ভাল চিকিৎসার ব্যবস্থা করা না হলে খুব বেশিদিন টিকবে না। ঘটনার খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন বলেন, “এ ভাবে এত বড় একটি হাতিকে মরতে দেওয়া য়ায় না। অসুস্থ বুনোটির চিকিৎসার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেটা খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১২ মার্চ খুট্টিমারি জঙ্গলের তোতাপাড়া বিট এলাকায় প্রথম ওই অসুস্থ বুনোটির দেখা মেলে। এর পরে স্থানীয় পশু চিকিৎসকদের নিয়ে মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়। গরুমারা থেকে দুটি কুনকি এনে দাঁতালটিকে ঘুমপাড়িয়ে অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশনও দেওয়া হয়। কিন্তু ওই চিকিৎসায় তেমন সাড়া মেলেনি। পরে কলাপাতায় ভিটামিন ওষুধ খাওয়ানো শুরু হয়। কিছুদিন থেকে ওই ওষুধ নিচ্ছে না বুনোটি। সে সোনাখালি জঙ্গলের পাশে নোনাই নদীর ধারে ঠায় দাঁড়িয়ে দিন কাটাচ্ছে। কখনও খুঁড়িয়ে হাঁটছে। হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার সোসাইটির মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “বুনোটির ভাল চিকিৎসার জন্য বন দফতরের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” জলপাইগুড়ি বনবিভাগের ডিএফও কল্যাণ দাস বলেন, “চিকিৎসকরা বিষয়টি দেখছেন।” মার্চ মাসে গঠিত মেডিক্যাল টিমে থাকা জলদাপাড়ার পশু চিকিৎসক অশোক সিংহ বলেন, “মার্চ মাসে মেডিক্যাল টিম করে দাঁতালটির চিকিৎসা করা হয়। এর পরে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানি না।” ক্ষুব্ধ পরিবেশপ্রেমীরা প্রয়োজনে ভিনরাজ্য থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি তুলেছে। তাঁদের আশঙ্কা দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা না হলে বুনোটি মারা যেতে পারে।
|
বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হিঙ্গলগঞ্জে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বসিরহাট |
সুন্দরবনের জঙ্গলে মধু ভাঙতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে এক গ্রামবাসীর। বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের হেমনগর থানার আড়বেসে ওয়ান জঙ্গলে কেদারখালিতে। পুলিশ জানিয়েছে, হেমনগর গ্রামে বাড়ি মৃতের নাম শুভেন ওরফে যতীন মণ্ডল (৪০)। সন্ধ্যা নাগাদ গ্রামবাসীরা তাঁর দেহ উদ্ধার করে গ্রামে নিয়ে আসে। হেমনগর উপকূলবর্তী থানার ওসি অমলেশ বালা বলেন, “ন’নম্বর গ্রামের ৪-৫ জন বনকর্মীদের না জানিয়ে জঙ্গলে গিয়েছিলেন মধু ভাঙতে। দুপুরে হেতাল খালের কাছে তাদের মধ্যে শুভেনকে বাঘ আক্রমণ করে। সঙ্গীরা কোনও রকমে লাঠিসোটা নিয়ে এবং বাজি ফাটিয়ে বাঘটিকে তাড়িয়ে দেয়। পরে দেহটি উদ্ধার করে গ্রামে নিয়ে আসে।” দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর প্রশান্তকুমার পণ্ডিত বলেন, “একজনকে বাঘে মেরেছে বলে খবর পয়েছি। মৃতের কাছে সরকারি অনুমতি ছিল না। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।” |