পুলিশের বিরুদ্ধে ছাপোষা মানুষের অভিযোগের অন্ত নেই। এ বার একই অভিযোগে সরব হলেন এক সন্ন্যাসী। পুলিশের ‘নিষ্ক্রিয়তা’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তিনিও।
স্বামী অশেষানন্দ। কার্শিয়াং রামকৃষ্ণ বেদান্ত আশ্রমের প্রাক্তন সম্পাদক। কলকাতা রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠেরও প্রাণপুরুষ। বর্তমানে বয়স সত্তর অতিক্রান্ত। শরীরের তেমন জোর নেই। সাধনা, ভক্তি এবং ঈশ্বর-আরাধনাই তাঁর জীবনের একমাত্র দিশা। কলকাতা হাইকোর্টে পেশ করা আবেদনে তিনি নিজেকে বলেছেন সন্ন্যাসী। তবু বাস্তব পৃথিবীকে তো আর অস্বীকার করা যায় না। তাই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে তিনি হাইকোর্টেরই দ্বারস্থ। তাঁর বক্তব্য, পুলিশ নিষ্ক্রিয়। তাই এই বয়সে তাঁকে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে হাইকোর্টে আসতে হয়েছে।
বিচারপতি কনোয়ালজিৎ সিংহ অহলুওয়ালিয়া এই সন্ন্যাসীর আবেদন পড়ে বলেন, “আপনি কার কাছে এসেছেন বিচারের জন্য! আমি বিচারপতি হলেও সামান্য এক জন মানুষ।” সন্ন্যাসী অশেষানন্দজির বক্তব্য, শরীর অশক্ত হয়ে পড়ায় তিনিই পরিচিত এক জনকে দায়িত্বভার দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ব্যক্তি কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছে। তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। কোনও ভাবেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। মোবাইলে ফোন করলেও ধরছে না সে।
বিচারপতি আবার জানিয়ে দেন, তিনি বিচারপতি। তিনি বিচার করতে পারেন। কিন্তু তিনি তো সাধারণ মানুষই। মানুষ আর কতটা করতে পারে!
বিচারপতি আবেদনকারী সন্ন্যাসীর আইনজীবীকে বলেন, উনি তো সর্বময় কর্তার কাছে জানালেই সমস্যা মিটে যাবে। সাধনা ও ভক্তিকে সম্বল করে যিনি এত বছর ঈশ্বরের আরাধনা করেছেন, তাঁর কাছে অপ্রাপ্তি বলে তো কিছু থাকতে পারে না।
আইনজীবী বলেন, দেখুন, তাঁর মক্কেল যাঁর নামে অভিযোগ করেছেন, পুলিশ তার টিআই (শনাক্তকরণ) প্যারেড করায়নি। গুরুত্ব দিয়ে তদন্তেরও ব্যবস্থা করেনি। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তি আবেদনকারীর দীর্ঘদিনের পরিচিত। এ ক্ষেত্রে টিআই প্যারেড করানো যায় না। এমন তো নয় যে, উনি তাঁকে এক বার দেখেছেন! অভিযোগ অনুযায়ী তদন্ত এগোচ্ছে।
তদন্ত যে-ভাবে এগোচ্ছে, তাতে সন্তোষ প্রকাশ করে নিম্ন আদালতেই মামলা দ্রুত চালু করার নির্দেশ দেন বিচারপতি। তবে বিচারপতির বক্তব্য, আবেদনকারী সন্ন্যাসী। পার্থিব বিষয়ে তাঁর কোনও আকর্ষণ থাকার কথা নয়। এই কয়েক লক্ষ টাকা উধাওয়ের ঘটনা নিয়ে তিনি বিচার চাইছেন, ভাল কথা। কিন্তু নিশ্চয় ওঁর কাছে টাকার কোনও মূল্য নেই। |