এক ঝটকায় মুছে গেল লগ্নিকারীদের ৭৭ হাজার কোটি টাকা। কাউন্টারগুলিতে প্রতি দশটি শেয়ারের মধ্যে পড়ল ছ’টিরই দাম। ইউরোপীয় সঙ্কটের জের, বিদেশি লগ্নিকারীদের ভারতের বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা, টাকার ফের নজির ভেঙে নীচে নেমে আসা, এই ত্র্যহস্পর্শই বুধবার সেনসেক্সকে টেনে নামায় ১৫ হাজারের ঘরে।
পাঁচ দিন বাদে মঙ্গলবারই সেনসেক্স সামান্য বাড়লেও এ দিন ইউরোপ, বিশেষ করে গ্রিসের সঙ্কটের জেরে আতঙ্ক গ্রাস করে শেয়ার বাজারকে। দুপুর ১২টার পরেই হুড়মুড়িয়ে প্রায় ৩৫০ পয়েন্ট পড়ে যায় সেনসেক্স। বিদেশি লগ্নিকারীদের শেয়ার বিক্রির হিড়িকে পাল্লা দিয়ে পড়ে ডলারে টাকা নেমে আসে ঐতিহাসিক নীচে, ৫৪.৫৬ টাকায়। ডলার বিক্রির মাধ্যমে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাজারে হস্তক্ষেপ করলেও, তা হয় ভস্মে ঘি ঢালারই সামিল।
এ দিকে, এই ২.১৪% পতনের ফলে সূচক নেমে আসে ১৫ হাজারের ঘরে, ১৫,৯৭৮.৩৫ অঙ্কে। গত ১২ জানুয়ারির পর এই প্রথম। তবে আতঙ্ক না-ছড়াতে রাজ্যসভায় প্রণববাবুর আর্জি পরে বাজারের উপর লগ্নিকারীদের আস্থা কিছুটা ফেরাতে সাহায্য করে। প্রয়োজনে সরকার ব্যয়সঙ্কোচের পথে হেঁটে কড়া ব্যবস্থা নেবে, তাঁর এই মন্তব্যেও লগ্নিকারীরা আশ্বস্ত হন। কারণ তাঁরা মনে করেন, সরকার বিষয়টিতে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। এর জেরেই বাজার বন্ধ হওয়ার আগে সেনসেক্স বেড়ে যায় ৫০ পয়েন্টের মতো। এতেই শেষরক্ষা হয়। সেনসেক্স ফের ১৬ হাজারের সামান্য উপরে উঠে বন্ধ হয় ১৬,০৩০.০৯ পয়েন্টে, যা মঙ্গলবারের তুলনায় ২৯৮.১৬ পয়েন্ট কম। সবচেয়ে বেশি (৭.৩৪%) পড়েছে টাটা মোটরস শেয়ারের দর। জাগুয়ার-ল্যান্ড রোভারের বিক্রি এপ্রিলে ২৯% পড়ার খবরই এই পতন ডেকে আনে। ২০১২-র ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে হিসেব করলে ভারতে শেয়ার সূচক ১৩% পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। বাজার বন্ধের সময়ে টাকাও কিছুটা উপরে ওঠে। তা সত্ত্বেও প্রায় ৭০ পয়সা পড়ে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৫৪.৫০ টাকা।
রাজনৈতিক সঙ্কটে গ্রিস সরকার গড়তে ব্যর্থ হওয়ায় নতুন করে সেখানে ভোটের সিদ্ধান্তে ওই ইউরোপীয় রাষ্ট্রটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়তে থাকে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁকোয়া হল্যান্ডস এবং জার্মান চান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেল অবশ্য গ্রিসকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ধরে রাখার অঙ্গীকার করেন। সঙ্কট কাটাতে সাহায্যের হাত তাঁরা বাড়িয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু এর জেরে ইউরোর দর পড়ে গেলে গোটা এশীয় বাজারকেই গ্রাস করে অনিশ্চয়তা। এশিয়া জুড়ে পতনের ঢেউ এসে পড়ে সেনসেক্সের উপর।
বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্কটে বিদেশিরা এ দিনও লগ্নি ফিরিয়ে নিতে থাকেন ভারতের বাজার থেকে। তাঁদের শেয়ার বিক্রি বেড়ে যাওয়া, আমদানিকারীদের ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি, সব মিলিয়ে পড়তে থাকে টাকা। লেনদেনকারীরা জানান, ফাটকাবাজি ঠেকাতে বৈদেশিক মুদ্রার আগাম লেনদেনের বাজারেও নিয়ন্ত্রণ আনতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তবে রয়টার্সের সমীক্ষায় ইঙ্গিত, ২০১৩-র মার্চের মধ্যে টাকার দাম বেশ কিছুটা বাড়বে। ফলে প্রতি ডলারে তার দাম ছোঁবে ৫০ টাকা। |