ইরান থেকে তেল আমদানি কমানোর ফলে ভারত যাতে জ্বালানি সমস্যায় না ভোগে, সে জন্য কিছুটা সক্রিয় হল ওয়াশিংটন। গত দু’দিন ধরে ওবামা প্রশাসনের বিশেষ দূত (শক্তি) কার্লোস পাস্কাল দিল্লিতে সংশ্লিষ্ট ভারতীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আগামী কাল তিনি যাচ্ছেন মুম্বই। উদ্দেশ্য, ওএনজিসি-র কর্তাদের সঙ্গে তেল ও গ্যাসের আন্তর্জাতিক বাজার এবং এই ক্ষেত্রে ভারতের চাহিদা নিয়ে আলোচনা করা। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, আমেরিকার ‘শেল গ্যাস’ তরলীকৃত করে ভারতকে পাঠানো যায় কি না, তা গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পাস্কাল।
এক বিশেষ ধরনের পাললিক শিলা গঠনের সময়ে তার ভিতরে জমা প্রাকৃতিক গ্যাসকেই বলা হয় শেল গ্যাস, যার উৎপাদনে এক নম্বরে রয়েছে আমেরিকা। ভারতীয় তেল সংস্থাগুলি বেশ কিছু দিন ধরেই আমেরিকার কাছ থেকে শেল-গ্যাস কেনার জন্য দরবার করে আসছে। এত দিন কোনও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। মার্কিন বাণিজ্য কর্তারা বলে এসেছেন, ভারতের প্রস্তাব ‘খতিয়ে দেখা হচ্ছে’। ওবামা সরকারের পক্ষ থেকেও কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ করা হয়নি। কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টনের সফরের পরই ভারতের তেল-নীতি নিয়ে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে আমেরিকার।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সম্প্রতি হিলারির সঙ্গে বৈঠকে জানিয়েছেন, ভারত ইরান থেকে তেল আমদানি ক্রমশই কমাচ্ছে। আফ্রিকা, পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিকে শক্তির বিকল্প উৎস হিসাবে ভাবা হচ্ছে। গতকাল রাজ্যসভাতে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস প্রতিমন্ত্রী আর পি এন সিংহ ইরান থেকে তেল আমদানি ১১ শতাংশ কমানোর কথা (আগামী আর্থিক বছরে) ঘোষণা করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই ভারতের এই পদক্ষেপে খুশি হোয়াইট হাউস। হিলারির বক্তব্য ছিল, পরমাণু প্রশ্নে ইরানকে দরকষাকষির টেবিলে বসাতে হলে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। সেই ‘চাপ’ তৈরিতে ভারতকেও যে সদর্থক ভূমিকায় দেখতে চাইছে ওয়াশিংটন সে কথাও জানিয়েছিলেন তিনি।
কার্যত আমেরিকার নির্দেশিত পথে চললেও প্রকাশ্যে দিল্লি এমন কোনও বার্তা দিতে চাইছে না যাতে মনে হয়, মার্কিন চাপই তেহরান থেকে ভারতের তেল আমদানি কমানোর কারণ। বরং, আজ তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে ২০০৮ সাল থেকেই ধাপে ধাপে এই আমদানি কমানো হচ্ছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। |