অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় • নলহাটি |
আকাশে মেঘ জমলেই ঘরে ছুটতে হয়। আবার শীতের সকালে কুয়াশা কাটিয়ে কখন রোদ উঠবে তারও অপেক্ষা করতে হয়। এ রকম পরিস্থিতিতে দিনের পর দিন কাজ করে যেতে হচ্ছে নলহাটি পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাহুপাড়ার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের। এলাকার বাসিন্দাদের স্বার্থে সব ঋতুতে খোলা আকাশের নীচে কেন্দ্র চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
১৯৯৮ সালে চালু হওয়া কেন্দ্রের নিজস্ব ভবনের অভাবে প্রথম ৫ বছর মিলনী সঙ্ঘের ভবনে কেন্দ্র চলছিল। সেখানে বাধা পেয়ে ১০ বছর ধরে সাহুপাড়ায় খোলা আকাশের নীচে কাজ চলছে। অঙ্গনওয়াড়িকর্মী মিতালী দত্ত বলেন, “পুরসভাকে অনেকবার বলেছি। কিন্তু জায়গার অভাবে নিজস্ব ভবন হচ্ছে না। তাই রান্না এলাকার একটি বাড়িতে করতে হয়।” শুধু সাহুপাড়া নয়, সিংহবাহিনীপাড়ায় কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন নেই। স্থানীয় দুর্গামন্দিরে কেন্দ্রটি চলছে। সকলের একটাই জবাব, জায়গার অভাব। স্থানীয় কাউন্সিলর নির্মল মণ্ডল (সিপিআই ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন) বলেন, “জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। চেষ্টা চালানো হচ্ছে।” |
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র নিয়ে তো সমস্যা রয়েছে। পানীয় জল ও নিকাশি নিয়েও ক্ষোভের অন্ত নেই। সাহুপাড়ার বাসিন্দা রুহিদা বিবি, রাকিয়া বিবি, রুবিনা বিবিদের ক্ষোভ, “এলাকায় পানীয় জলের কল অনেক দূরে। একটি গভীর নলকূপ ছিল সেটাও খারাপ। অনেক দূরে একটি নলকূপ বসানো হলেও খুব কষ্টে জল তুলতে হয়। নিকাশি নালা খোলা অবস্থায় রয়েছে। দুটো গাড়ি পাশাপাশি গেলে খোলা নিকাশি নালায় মানুষ পড়ে যায়।” তাঁদের অভিযোগ, “খড়ের ছাউনি দেওয়া ছোট বাড়িতে কষ্ট করে থাকতে হয়। পুরসভায় অনেকে ১৬ হাজার টাকা জমা দিয়ে, কেউ আবার বিনা পয়সায় ৫০ হাজার টাকার বাড়ি পেয়ে গিয়েছেন।”
বাড়ি নিয়ে একই অভিযোগ করেছেন নাপিতপাড়ার জ্যোৎন্সা প্রামাণিক, রুনু ভান্ডারি, পুষ্প চক্রবর্তীরা। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, খড়ের ছাউনি বাড়ির উপরে ত্রিপল বাঁধা। পুরসভায় আবেদন করেও ঘর মেলেনি বলে তাঁদের দাবি। ওই সব বাসিন্দাদের অভিযোগ, “পুষ্প সাহু, মিষ্টু চন্দ্র, বাবলু শেখ, হোসনেহারা বিবিদের মতো অপেক্ষাকৃত অবস্থাপন্নদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। হোসনেহারা বিবি এক লাখি বাড়ি সংস্কার করে একই দেওয়ালে আরও দু’টি ঘর তৈরি করেছে।” এ প্রসঙ্গে কাউন্সিলর নির্মলবাবুর দাবি, “বিত্তবান জেনেও কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য কাউন্সিলরের অনুরোধে ঘর করে দিতে হয়েছে।”
এই সব অভাব অভিযোগ শোনার পাশাপাশি দেখা গেল, ওয়ার্ডের বেশিরভাগ রাস্তা সঙ্কীর্ণ। চলাচলের রাস্তা নেই বললেই চলে। কিছু কিছু জায়গায়। নিকাশি নালার উপরে স্ল্যাব দেওয়ায় মানুষ চলতে পারছেন। নিকাশি নালা সাফাই না হওয়া নিয়েও ক্ষোভের কথা শোনা গেল। কংগ্রেস প্রার্থী দুর্বা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “এক মাস ধরে নিকাশি নালা সাফাই হয়নি।” কাউন্সিলরের জবাব, “স্ল্যাব তৈরি আছে। খুব শীঘ্রই বসানো হবে। আর তিন জন সাফাই কর্মী আছে। এত বড় ওয়ার্ড। তাই প্রতি পাড়ায় পৌঁছতে সময় লাগবে।” |
নজরে নলহাটি ওয়ার্ড ৭ |
|
|
বর্তমান কাউন্সিলর আমার করে দেওয়া
কাজগুলি
ঘসামাজা করছেন। তবে নতুন তিনটি
নলকূপ
বসিয়েছেন।
নর্দমা সাফাই না করায়
দুর্গন্ধ
ছড়ায়, মশার উপদ্রব বাড়ে।
দুর্বা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিরোধী প্রার্থী, কংগ্রেস |
জল ও নিকাশি সমস্যা নেই। জঞ্জাল
ফেলার
তিনটি
ভ্যাট আছে। রাস্তাঘাট করে
দেওয়া
হয়েছে। বস্তি
উন্নয়নে
আরও
ঘর দেওয়া হবে।
নির্মল মণ্ডল, তৃণমূল কাউন্সিলর |
• দু’টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন নেই।
• কলের অভাব আছে।
• নিকাশি নালা খোলা, নিয়মিত সাফাই হয় না। |
|