ব্ল্যাক বোর্ড থেকে ক্লাসরুমের দেওয়াল। সর্বত্রই ফাটলে ভরা। ওপর থেকে যে কোনও সময়ে খসে পড়তে পারে সিমেন্টের চাঁই। এ সবের মধ্যেই পঠন-পাঠন চালছে মন্তেশ্বরের এমএস শিক্ষা নিকেতনে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৫৮ সালে ভাগরামূলগ্রাম পঞ্চায়েতের বসন্তপুর গ্রামে স্থানীয় মানুষের উদ্যোগে স্কুলটি তৈরি হয়। আশপাশের মালম্বা, সিজনে, উজনা, মূলগ্রাম-সহ দশটি গ্রাম থেকে আসা প্রায় ৬২৭ জন ছাত্রছাত্রী ওই স্কুলে পড়াশোনা করে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ছাত্র-ছাত্রীর চাপ বাড়তে থাকায় ১২ বছর আগে দোতলা গড়ে তোলা হয়। ঘরগুলির নিরাপত্তার জন্য বেশ কয়েকটি বিমও তৈরি করা হয়। সাংসদ তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্যও মিলেছিল সেই সময়ে। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় বছরখানেক আগে থেকে। দোতলায় সপ্তম শ্রেণির দু’টি ঘরে, অষ্টম ও নবম শ্রেণির একটি ঘরের দেওয়ালে ফাটল দেখা দেয়। এমনকী বিমেও দেখা দিয়েছে ফাটল। ইতিমধ্যেই নড়তে শুরু করেছে সেগুলি। যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন দে বলেন, “যে কোনও সময়ে ফাটল থেকে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা সবাই আতঙ্কিত।” তিনি জানান, জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, বিডিও, সর্বশিক্ষা অভিযান-সহ বিভিন্ন দফতরে এই পরিস্থিতির কথা জানানো হয়েছে। |
এমন পরিস্থিতিতে স্কুলে কাজ করা বিপজ্জনক বলে মনে করছে ছাত্র-ছাত্রীরাও। বসন্তপুর গ্রামের নবম শ্রেণির ছাত্র জুলহাস শেখ বলে, “ক্লাসরুমে বসে থাকার সময়ে মনে হয় এই বুঝি মাথায় সিমেন্টের চাঙড় ভেঙে পড়ল। এত ভয়ের মধ্যে পড়াশোনাতে মন বসে না!” মালম্বা গ্রামের বাসিন্দা নবম শ্রেণির ছাত্রী অঙ্কিতা ঘোষের কথায়, “আমাদের ক্লাসরুমে দেওয়াল থেকে ব্ল্যাক বোর্ড, সর্বত্র ফাটল। দেখে মনে হয়, ঘর জুড়ে যেন মানচিত্র আঁকা রয়েছে। এই পরিবেশ না বদলালে হতাশা বাড়বে।” স্কুলের এক প্রবীণ শিক্ষক স্বপন ঘোষের কথায়, ‘‘এই স্কুলে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার ছেলেমেয়েরাই বেশি। দ্রুত সরকারি অর্থ বরাদ্দ না করলে স্কুলকে সমস্যায় পড়তে হবে।” প্রধান শিক্ষক চন্দন দে জানান, কয়েক দিন আগে কালনার পুরশ্রী মঞ্চে মহকুমার স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে যে আলোচনাচক্রের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানে বিষয়টি সবিস্তার জানানো হলেও কোনও অর্থ সাহায্য মেলেনি এখনও। মহকুমা প্রশাসনের তরফে অবশ্য ওই স্কুলকে অর্থ সাহায্যের ব্যাপারে আশ্বাস মিলেছে। মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি বলেন, “স্কুলের আবেদনপত্রটি দেখে শীঘ্রই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |