শিক্ষকদের কথা মন দিয়ে শুনলেন ‘বদলে’ যাওয়া আরাবুল
প্তাহ তিনেক আগের ঘটনা। আঙুল উঁচিয়ে শিক্ষকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসেবে তিনি যে তাঁর ‘ক্ষমতা’ প্রয়োগ করতে পারেন, তেমন শাসানির অভিযোগও তাঁর বিরুদ্ধে তুলেছিলেন ভাঙড় কলেজের শিক্ষক-শিক্ষাকাদের একটি বড় অংশ।
সোমবার সেই তাঁকেই পরিচালন কমিটির বৈঠকে দেখে শিক্ষকদের অধিকাংশের অভিমত, মানুষটি যেন ‘বদলে’ গিয়েছেন। তিনি আরাবুল ইসলাম। ভাঙড়ের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক এবং ওই কলেজের পরিচালন কমিটির সভাপতি।
২৪ এপ্রিলের ওই ঘটনার পরে এ দিনই ছিল কলেজের পরিচালন কমিটির প্রথম বৈঠক। ইতিমধ্যেই অবশ্য জল গড়িয়েছে অনেক দূর। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে এ ধরনের আচরণ তিনি বরদাস্ত করবেন না। ভাঙড় কলেজের ঘটনার পরে সেখানে গিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতিও কার্যত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হুমকি দিয়েছিলেন। দলীয় সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন, কথাবার্তায়, আচার-আচরণে সংযত হতে হবে। এ দিন আরাবুল ইসলামের বদলে যাওয়া আচরণের পিছনে মুখ্যমন্ত্রীর ওই হুঁশিয়ারিই কাজ করেছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
সম্প্রতি সুরেন্দ্রনাথ কলেজে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদের জেরে সান্ধ্য কলেজটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। তখনও মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি থেকে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে টেলিফোন করে জরুরি ভিত্তিতে কলেজ খোলার ব্যবস্থা করতে বলেন। উচ্চশিক্ষা দফতরের আশ্বাস পেয়ে কলেজ কতৃর্পক্ষ কলেজ খোলা রাখার সিদ্ধান্তও জানিয়ে দেন।
রাজ্যের বিভিন্ন কলেজে দলীয় নেতা-কর্মীদের ‘দাদাগিরি’ যে তিনি মোটেই বরদাস্ত করবেন না, গত শুক্রবার মহারাষ্ট্র নিবাসে দলীয় অনুষ্ঠানেও তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। সে দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কলেজের মধ্যে ঢুকে হাঙ্গামা করা চলবে না।” তিনি জানান, কোথাও কোনও সমস্যা হলে সরকারকে জানাতে হবে। সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। মহারাষ্ট্র নিবাসে মুখ্যমন্ত্রী যখন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এ কথা বলছেন, তখন শ্রোতাদের মধ্যে আরাবুল ছিলেন, ছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি।
শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত অনেকেরই ধারণা, রায়গঞ্জ কলেজ অধ্যক্ষ-নিগ্রহ দিয়ে যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল, নানা চেহারায় তা রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ায় শিক্ষিত মানুষের মধ্যে রাজ্য সরকারের প্রতি কিছুটা বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হচ্ছিল। সেই পর্বে ইতি টেনে মমতা বোঝাতে চাইছেন, ভোটের আগের প্রতিশ্রুতি মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তিনি দলীয় রাজনীতির আওতার বাইরে রাখতে চান।
মুখ্যমন্ত্রীর এই কড়া বার্তার প্রভাব যে কার্যক্ষেত্রে পড়ছে, এ দিন ভাঙড় কলেজের সভাপতি আরাবুল ইসলামের বদলে যাওয়া আচরণেই তা স্পষ্ট বলে অনেকেই মনে করছেন। এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সদস্যের কথায়, আরাবুলকে এ দিন যথেষ্ট নমনীয়, সহনশীল ও শান্ত মনে হয়েছে। তিন সপ্তাহ আগের সেই উদ্ধত ভাব উধাও। সভায় আলোচ্য বিষয়ে শিক্ষকদের মতামত গুরুত্ব সহকারে শুনেছেন তিনি। তাঁর এই আচরণ মমতার ওই বক্তব্যেরই পরিপ্রেক্ষিতে বলেই অনুমান অনেকের।
বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে তিন সপ্তাহ আগের ওই ঘটনা নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও শিক্ষকদেরই একাংশ এ দিন সভাপতি আরাবুলকে স্মারকলিপি দিয়ে ওই প্রসঙ্গ না তুলতে অনুরোধ জানান। ফলে এ দিনের বৈঠকে ওই বিষয়ে আর আলোচনা হয়নি। তবে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের চাকরির স্থায়ীকরণ, ন্যাক-এর পরিদর্শনের প্রস্তুতি, কলেজে ভর্তি-সহ বাকি বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে নিয়মমাফিক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.