সূর্যোদয় থেকেই শুরু গরমের অসহ্য তাত। তাই সারা শহরই অপেক্ষায় থাকে, কখন সূর্যাস্ত হবে।
কেন? ছোট্ট একটি পরিসংখ্যান, জঙ্গিপুর ৪৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, লালবাগ ৪১.৬ বহরমপুর ৩৯.৬ ডিগ্রি, কান্দি ৩৭.৮ ডিগ্রি কিংবা কৃষ্ণনগর ৩৮.৫ । প্রায় দশ দিন ধরে ঝড়-বৃষ্টির দেখা নেই। রোদের তাপ আর বাতাসের আর্দ্রতার যৌথ আক্রমণে দমবন্ধ অবস্থা। অবস্থা এমনই যে, অনেকেই দৈনন্দিনের রুটিনই বদলে ফেলেছেন। নবদ্বীপ-কৃষ্ণনগরের মতো মফস্সল থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ কলকাতা যাতায়াত করেন। এই গরমের হাত থেকে রেহাই পেতে তাঁরাও বদলে ফেলেছেন ট্রেন। নবদ্বীপধাম স্টেশন থেকে ৭.৩৩ বা ৮.১৩-র কাটোয়া লোকালের ভিড় পাতলা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ভোরের ট্রেনে ভিড় বাড়ছে। সকাল ৫.২৬-এর ট্রেন আগে ফাঁকা থাকত। এখন বসার জায়গা পাওয়া শক্ত। কৃষ্ণনগর স্টেশনে ৫.৫৮-র ট্রেনে যাত্রীদের ভিড় থাকছে। ভোর ৪.২০-র ট্রেনেও লোক থাকছে যথেষ্ট। নিত্যযাত্রীদের কথায়, সকাল সাড়ে ন’টার মধ্যে কলকাতা চলে যেতে চান তাঁরা। তারপরে আবার বিকেলে ফেরা। |
এই গরমে মোট ১০৫ কিলোমিটার ট্রেন যাত্রার ধকলে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। যাঁদের যেতেই হবে, তাঁরা ভোরে পৌঁছে বিকেলের পরে বেরোচ্ছেন। দুপুরের ট্রেন থাকছে ফাঁকা। শুধু ট্রেন নয়। বাজার-হাট, স্কুল-কলেজও ফাঁকা। বেলা ১২টা থেকে ৪টে পর্যন্ত রাস্তায় লোক মেলা ভার। নবদ্বীপের মতো বাণিজ্যপ্রধান শহরে গরমের দাপটে এক বেলার কেনাকেটা কার্যত লাটে উঠেছে। ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম সাহা বলেন, “কেনাবেচার অবস্থা খুব খারাপ। এখানকার পাইকারি বাজার অনেকটাই সংলগ্ন বর্ধমান জেলার গ্রামগুলির উপরে নির্ভর করে। তাঁদের কেনাকেটার সময়টা প্রধানত দুপুরই। কিন্তু এই গরমে সেখান থেকে ক্রেতারা আসছেন না।” তিনি বলেন, ‘‘পর্যটকেরাও আসছেন না। তাই বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ।” দুপুরে মানুষ যে বাইরে বেরোচ্ছেন না, প্রমাণ বাসের সংখ্যাই কমে যাওয়ায়। যাত্রীর অভাবে দুপুরের বেসরকারি বাসের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমছে। নদিয়া জেলা বাসমালিক সমিতির সহ সম্পাদক অসীম দত্ত বলেন, “বাসযাত্রী কমেছে, বাসকর্মীরাও দুপুরে বেরোতে চাইছেন না। তাই বাসও কম। ভোর সাড়ে চারটে থেকে বড়জোর এগারোটা। যা কিছু ভিড় থাকছে এই সময়টা। একটা দেড়টা থেকে সাড়ে চারটে পর্যন্ত রাস্তাঘাটে লোকজনই নেই।” বাসের ছবিটাও যেন বদলে গিয়েছে। ছাদে ভিড় যেখানে স্বাভাবিক চিত্র, সেখানে কৃষ্ণনগর-করিমপুর রুট ছাড়া বেশিরভাগ রাস্তাতেই ছাদ খালি। |