ছোট আঙারিয়ায় নতুন করে চার্জগঠন
গারো বছর আগের ছোট আঙারিয়া মামলায় সোমবার ফের চার্জগঠন হল গড়বেতার সিপিএম কর্মী দিল মহম্মদের বিরুদ্ধে। সাক্ষীরা প্রায় সবাই ‘বিরূপ’ হওয়ায় এক দফা নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছিল মামলার। তপন ঘোষ, সুকুর আলি-সহ ৮ সিপিএম নেতা-কর্মী খালাসও পেয়ে যান। প্রায় এক দশকেরও বেশি ‘ফেরার’ ছিলেন অন্য ৫ অভিযুক্ত। তাঁদেরই অন্যতম দিল মহম্মদ ধরা পড়েন গত বছর ১৫ মে, রাজ্যে পারালবদলের ঠিক পরে পরেই। নতুন করে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। একাধিক সাক্ষীর জবানবন্দিও নতুন করে নথিভুক্ত করা হয়। গত বছর ১৫ জুলাই দিলের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। সোমবার চার্জগঠন হল মেদিনীপুরের পঞ্চম অতিরিক্ত জেলা-দায়রা বিচারক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্যের এজলাসে, দিলের ধরা পড়ার ঠিক এক বছরের মাথায়। মামলার পরবর্তী দিন ধার্য হয়েছে আগামী ২ জুন। কবে থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে, ওই দিনই তা চূড়ান্ত হবে।
২০০১-এর ৪ জানুয়ারি গড়বেতার ছোট আঙারিয়া গ্রামে তৃণমূল কর্মী বক্তার মণ্ডলের বাড়িতে বৈঠক চলাকালীন সিপিএমের লোকজন হামলা চালায় বলে অভিযোগ। অগ্নি-সংযোগ, গুলি-চালনায় অন্তত ৫ জন নিহত হন এবং তাঁদের দেহ লোপাট করা হয় বলে দাবি তৃণমূলের। সিবিআই তদন্তে তপন ঘোষ, সুকুর আলি-সহ ১৪ জন সিপিএম নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়। বেশির ভাগ সাক্ষীই ‘বিরূপ’ হওয়ায় তপন, সুকুর-সহ ৮ অভিযুক্ত ২০০৯-এর ২৮ মে খালাস পেয়ে যান। গোলাপ মল্লিক নামে এক অভিযুক্ত খুন হন। গত বছর ১৫ মে গড়বেতার খড়কুসুমা থেকে ৫ ‘ফেরারে’র অন্যতম দিল মহম্মদ ধরা পড়ার পরেই মোড় নেয় মামলা। তদন্ত শুরু করে সিবিআই। মামলার প্রধান অভিযোগকারী বক্তার মণ্ডল-সহ একাধিক সাক্ষীর বক্তব্য নতুন করে নথিভুক্ত করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। সোমবার ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২, ১২০-বি, ১৪৮, ১৪৯, ২০১, ৪৩৬ ধারা ও অস্ত্র আইনের ২৫ ও ২৭ ধারায় দিলের বিরুদ্ধে চার্জগঠন হয়।
ছোট আঙারিয়া মামলায় অভিযুক্ত দিল মহম্মদ। নিজস্ব চিত্র।
ফের নতুন করে এই মামলার বিচার শুরু হতে চলায় খুশি বক্তার। যিনি নিজেও এক দফা এই মামলায় ‘বিরূপ সাক্ষী’ হয়েছিলেন। তিনি বলেন, “সত্যি কথা বললে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল সিপিএম। তাই আগে সত্যি বলতে পারিনি। এখন আর ওদের (সিপিএমের) দাপাদাপি নেই। আদালতের কাছে সত্যিই বলব। এখন আর সিপিএমের লোকজন মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে সাক্ষীদের মিথ্যে বলাতে পারবে না। গড়বেতার মানুষ অভিযুক্তদের শাস্তি চায়।” সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে তপন-সুকুরের মতো অভিযুক্তেরা এর আগে খালাস পেলেও ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি’তে সাক্ষ্য-প্রমাণের সমস্যা হবে না বলে আশাবাদী কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাও। সিবিআইয়ের তরফে দাবি করা হয়েছে, পুনর্তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। শুধু দিল নয়, এক দফা খালাস পাওয়া অভিযুক্তদেরও ফের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে বলে ধারণা আইনজীবীদের একাংশের।
তবে, সোমবারের চার্জগঠন প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভাবছেন দিলের আইনজীবী বিশ্বনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, “ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা (হত্যা) এবং অস্ত্র-আইনের ২৫ ও ২৭ ধারায় এ ক্ষেত্রে কোনও ভাবেই চার্জগঠন করা যায় না। কেননা হত্যার কথা বলা হলেও কোনও দেহ উদ্ধার হয়নি। তাই চার্জগঠনের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যাওয়ার কথা ভাবছি।’’ সিবিআইয়ের আইনজীবী তাপস বসুর অবশ্য দাবি, “খুন করার পর লাশ গায়েব করা হয়েছিল। ঘটনাস্থল থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে নিখোঁজদের নিকটাত্মীয়দের যে ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছিল, তাতেই স্পষ্ট ৫ জন খুন হয়েছিলেন। ব্যালিস্টিক রিপোর্টে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারেরও প্রমাণ মিলেছে। তাই ৩০২ ধারা বা অস্ত্র আইনের ধারায় চার্জগঠনে কোনও সমস্যা নেই।” এই মামলায় আরও ৪ অভিযুক্তসিপিএম কর্মী মোক্তার শেখ, আজিজুল মিদ্যা, আবদুল খান ও প্রশান্ত পাল এখনও ‘ফেরার’। সিবিআই সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই ৪ জনের খোঁজেও তল্লাশি চলছে। প্রশান্ত পালকে অবশ্য ২০০২-এর ২৫ সেপ্টেম্বর সিবিআইয়ের একটি দল সানমুড়া গ্রামের বাড়ি থেকে এক বার পাকড়াও করেছিল। কিন্তু সিপিএমের লোকজনই তাঁকে ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। সে সময়ে গড়বেতা থানা বন্দি-ছিনতাই সংক্রান্ত অভিযোগ পর্যন্ত নিতে চায়নি বলে আদালতে জানায় সিবিআই। এই প্রশান্তই ২০০১-এর ৪ জানুয়ারি রাতে ছোট আঙারিয়ায় তৃণমূল-কর্মী বক্তার মণ্ডলের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, গুলিবর্ষণে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
সেই রাতের পর থেকেই বেপাত্তা হয়ে যান হায়দার আলি মণ্ডল, মোক্তার খান, রবিয়াল ভাঙ্গি, শ্যাম পাত্র এবং উমেশ। হায়দারের বাড়ি বাকুঁড়ার জয়পুরে। বাকিদের বাড়ি গড়বেতা থানা এলাকাতেই। অভিযোগ ছিল, তাঁদের সবাইকে খুন করে দেহ গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মৃত ধরেই বাড়ির লোকেরাও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করে ফেলেছেন ইতিমধ্যেই। এখন তাঁদের অপেক্ষা শুধুই ন্যায়বিচারের।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.