একে চাষের মোট এলাকার পরিমাণ কমেছে। তার ওপর ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এবার কোচবিহারে জেলার দুই মূল অর্থকরী ফসল বোরো ধান ও পাটের উৎপাদন কমে যাবার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ঝড় ও শিলাবৃষ্টি ফের হলে ওই উৎপাদন আরও মার খাওয়ার সম্ভবনাও রয়েছে। বোরো ধান ও পাটের মত অর্থকরী ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়ার এমন সম্ভাবনা ঘিরে জেলার কৃষক মহলে তো বটেই উদ্বেগ ছড়িয়েছে প্রশাসনিক মহলেও। কোচবিহার জেলা পরিষদের সভাধিপতি দিলীপ বিশ্বাস বলেন, “ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ইতিমধ্যে বোরো ধান ও পাট চাষের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এতে উৎপাদন তো মার খাওয়ার আশঙ্কা তো আছেই। তা ছাড়া ঝড়বৃষ্টির মরসুম এখনও চলছে। ফের একই রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে ওই দুইয়েরই ক্ষতি বাড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি ভাবে সাহায্য দেওয়ার ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। জেলা কৃষি দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, কোচবিহারে গত মরসুমে প্রায় ৪২ হাজার হেক্টর এলাকায় বোরো ধানের চাষ হয়েছিল। ফলন হয় প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার মেট্রিক টন। এবারে ওই চাষের এলাকা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৬ হাজার হেক্টর। তার মধ্যে গত এক মাসের মধ্যে চার দফায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্ত ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ৪০০ হেক্টর বোরো ধানের চাষ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে জেলায় গত বছর যেখানে ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার হেক্টর এলাকায়। তার মধ্যে ঝড়-শিলাবৃষ্টির জেরে ৭০০ হেক্টর এলাকার খেত লণ্ডভণ্ড হয়েছে। সব মিলিয়েই জেলার ওই দুই অর্থকরী ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়ার ব্যাপারে দুঃশ্চিন্তা বেড়েছে দফতরের কর্তাদের। ঝড়-শিলাবৃষ্টির মরসুম এখনও রয়েছে বলে ফের তেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। গত মরসুমে লেদা পোকার আক্রমণে জেলার বিভিন্ন এলাকায় আমন ধানের চাষ মার খেয়েছে। আলু চাষিরাও ধসার সংক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হন। ওই ক্ষতি মেটাতে কৃষকদের অনেকেই বোরো ধান কিংবা পাট চাষ করে ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। ঝড়-শিলাবৃষ্টির ক্ষতি ও চিন্তা তাদের ওই অঙ্ক পাল্টে দিয়েছে বলে কৃষকদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। কোচবিহারের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য কৃষি আধিকারিক নির্মল বর্মা বলেন, “চাষের এলাকা কমে কিছুটা কমেছে ঠিকই তবে বিঘা প্রতি উৎপাদন বাড়লে সমস্যা হত না। ঝড়-শিলাবৃষ্টি ওই হিসেব কিছুটা হলেও পালটে দিতে পারে এমন সম্ভবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।” জেলা কৃষি দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, কোচবিহার সদর, তুফানগঞ্জ, মাথাভাঙা ও দিনহাটা মহকুমায় চাষের ওই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি। তুফানগঞ্জের বাসিন্দা এক কৃষক খোকন বর্মন বলেন, ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে আমার ৫ বিঘা বোরো ধান খেতের প্রায় অর্ধেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকেরই একই অবস্থা। পাটের ক্ষেত তো প্রায় পুরোটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” কোচবিহারের নাটাবাড়ির তৃণমূল বিধায়ক তথা দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “বিকল্প চাষের মাধ্যমে ওই কৃষকেরা যাতে ক্ষতি এড়াতে পারেন সেই ব্যাপারে উদ্যোগের কথা রাজ্য সরকার নিশ্চয়ই ভাববে।’’ |