পুরুলিয়ার রেখা কালিন্দী, বীণা কালিন্দীদের পরে মালদহের রূপালি দেবনাথ। এই নাবালিকাও রুখে দাঁড়াল বিয়ের বিরুদ্ধে। বাবাকে বারবার বলেও যখন কাজ হয়নি, সোজা ফোন করে ডেকে আনল পুলিশকে। যদিও বিয়ে আটকাতে গিয়ে প্রথমে প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুলিশ। স্থানীয় গ্রামবাসীদের হাতে তাদের মারও খেতে হয়। ভাঙচুর হয় গাড়ি। কিন্তু তাতে দমে না গিয়ে বিয়ে আটকে দেয় তারা। তত ক্ষণে অবশ্য পুলিশের ভয়ে চম্পট দিয়েছে পাত্রপক্ষ।
|
রূপালি দেবনাথ।
ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায় |
রেখা-বীণাদের হাত ধরে এই প্রতিবাদ এ রাজ্যে সামাজিক আন্দোলনের চেহারা পাচ্ছে। রূপালিও হাঁটল সেই পথে। কেন? কারণ, তার মতো নাবালিকাকে বিয়ে দিতে গেলে তার বাবা বিপদে পড়তে পারেন, সেই ভয় পাচ্ছিল সে। পড়াশোনা করে প্রাপ্তবয়স্ক হয়েই বিয়ে করতে চায় সে, তার আগে নয়। তাই, “বাবাকে বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও তিনি শুনছিলেন না বলে নিজেই থানায় ফোন করি,” জানাল সে।
মালদহের বামনগোলা থানার গোলাইডাঙা গ্রামের মা মরা মেয়ে রূপালি। পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে। বাবা কৃষ্ণ দেবনাথ কৃষিজীবী। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে রূপালিই সব থেকে বড়। তার জন্য নদিয়ার এক পাত্রকে পছন্দ করা হয়। শনিবার ছিল বিয়ের দিন। নানাগোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী বলে, “সময়মতো পুলিশ না এলে বিয়ে হয়ে যেত।” ভেঙে যাওয়া বিয়ে নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই। বরং দৃঢ়স্বরে সে বলে, “আমি আরও পড়াশোনা করতে চাই। প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে তবেই বিয়ে করব।” প্রথমে মেয়ের কথা না শুনলেও পুলিশ বিয়ে রুখে দেওয়ার পরে ‘হুঁশ’ ফিরেছে কৃষ্ণবাবুর। বলেন, “গ্রামের একটি ছেলে মেয়েকে খুব বিরক্ত করছিল। তাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। তবে কাজটা ভুলই হয়েছিল। মেয়ে এখন পড়ুক।”
কী ঘটেছিল শনিবার? বামনগোলা থানার ওসি পূর্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় জানান, পুলিশ দেখে ছাদনাতলা থেকে বরকে নিয়ে বরযাত্রীরা পালিয়ে গেলেও গ্রামের কিছু লোক হামলা করে। রবিবার ভোরে ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয় গোবিন্দনগর-মহেশপুর পঞ্চায়েতের কংগ্রেস সদস্য প্রিয়লাল দেবনাথ-সহ ৬ জনকে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। মালদহ জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দেবপ্রিয় সাহা বলেন, “পঞ্চায়েত সদস্য অন্যায় করেছেন।”
তবে শনিবারের ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। গত ২ মে মালদহেরই হরিশচন্দ্রপুরে দুই নাবালিকার বিয়ে রুখতে গিয়ে কনেপক্ষ ও গ্রামবাসীদের হাতে আক্রান্ত হয় পুলিশ। শনিবারও মালদহেই চাঁচল থানার নুরগঞ্জে পারভিন খাতুন নামে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে ঠেকায় পুলিশ। পারভিনের বিয়ে হচ্ছিল চাঁচলেরই হারোহাজরায়। পাত্র ভিনরাজ্যে দর্জির কাজ করেন। সন্ধ্যায় বিয়ের খবর পেলেও ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া পুলিশ গ্রামে ঢুকতে চায়নি। শেষে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অশোক সরকারকে নিয়ে গ্রামে যায় তারা। শুরু হয় বাবা-মেয়েকে বোঝানো। বন্ধ হয়ে যায় বিয়ে। ১৮ বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দেবেন না বলে মুচলেকা দেন পারভিনের বাবা আব্দুল রহমান। বলেছেন, “মেয়ে মাধ্যমিক পাশ করার পরেই বিয়ের কথা ভাবব।” পারভিন বলে, “লেখাপড়া করে স্বাবলম্বী হতে চাই।”
শনিবার রাতে বাঁকুড়ার তালড্যাংরাতেও ১৬ বছরের এক স্কুলছাত্রীর বিয়ে ঠেকিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার স্থানীয় এক বাসিন্দা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগে ওই বিয়ের কথা জানান। |