বাঁশের মাচায় বেড়ে চলা লতা থেকে শসা ছিড়ে বাজারে পাঠাতে শুরু করেছিলেন ময়নাগুড়ির বার্নিশ গ্রামের বিপিন দাস। ব্যবসায়ীরা ৭ টাকা কেজি দরে লুফে নিয়েছেন। সাপ্টিবাড়ি গ্রামের কেশব সরকার ১৭ টাকা কেজি দামে বিক্রি করেছেন মাচার পটল। আশা ছিল এ বার গরমে ভাল রোজগার হবে। আচমকা ঝড় ও শিলাবৃষ্টি বিপিনবাবু ও কেশবাবুর খেতের মতো পাল্টে দিয়েছে বাজারের ছবি। খেতে সবজি নেই। বিপন্ন চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। ফলে বাজারেও টান পড়তে শুরু করেছে বিশেষ কিছু সবজি আমদানিতে। শুধু ময়নাগুড়ি নয়। জলপাইগুড়ি মহকুমার জুড়ে একই ছবি। জলপাইগুড়ি মহকুমা কৃষি আধিকারিক হরিশ্চন্দ্র রায় বলেন, “সাম্প্রতিক ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে কৃষিতে যে ক্ষতি হয়েছে তা বর্ষার আগে সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ, এখন আর নতুন করে চাষ করা সময় নেই। তাই কয়েকদিন বাজারে সবজির টান চলবে।” গত ৩ মে রাতে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবজি বলয় নামে পরিচিত ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি, রাজগঞ্জ ও জলপাইগুড়ি সদর ব্লক। মাটিতে মিশেছে সবজির খেত। বেশিরভাগ বাঁশের মাচা উড়ে গিয়েছে। ছিড়ে যাওয়া শসা, উচ্ছে ও পটল লতা পড়ে আছে খেতে। একটিও ফল নেই লেবু বাগানে। শিলের ঘায়ে থেতলে মাটিতে মিশেছে লঙ্কা ও বেগুন। তিস্তা ও জলঢাকার মতো যে সমস্ত নদী চর এলাকা থেকে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি সহ বিভিন্ন শহরের নতুন সবজি যায় সেখানে কিছুই রক্ষা পায়নি। নষ্ট হয়েছে বিঘার পর বিঘা বেগুন খেত। তিস্তার মতিয়ার চর এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার রহমান বলেন, “এ বার সবজির ফলন ভাল হয়েছিল। কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে কিছুই রক্ষা পায়নি। নতুন করে চাষ করা সময়ও নেই।” একই পরিস্থিতি হয়েছে ময়নাগুড়ি ব্লকের উন্নত সবজি চাষের এলাকা বার্নিশ, পানবাড়ি ও আমগুড়ি গ্রামের। ফলন্ত গাছ সহ মাচা উড়ে গিয়েছে বার্নিশে। রামসাই এলাকায় বিঘার পর বিঘা লঙ্কা, বেগুন খেত বিধ্বস্ত পড়ে। নষ্ট লবু বাগান। স্থানীয় চাষি কেশব রায় জানান, ময়নাগুড়ি থেকে শুধু উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বাজারে নয়। ভুটান, সিকিম, কলকাতা, বিহার, দিল্লিতে ট্রাক বোঝাই করে উচ্ছে, শসা, পটল, লাউ পাঠানো শুরু হয়েছিল। ঝড়ের পর থেকে আর সবজি মিলছে না। |