ইন্দিরা আবাস যোজনা থেকে ‘কিসান ক্রেডিট কার্ড’ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা বাসিন্দাদের কাছে তুলে ধরতে দলীয় কর্মীদের পরামর্শ দিলেন রাজ্যের শ্রম দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। রবিবার ফাঁসিদেওয়ায় বেসিক প্রাথমিক স্কুলের মাঠে কংগ্রেসের ব্লক সম্মেলনে উপস্থিত থেকে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচনের লক্ষ্যে এই সম্মেলনে দলের কর্মীদের নিজেদের পায়ের তলার জমি শক্ত করার কথা জানান তিনি। সাবিনাদেবী বলেন, “কেন্দ্রে আমাদের ইউপিএ সরকার যে সমস্ত বিভিন্ন প্রকল্প নিয়েছে তার সুযোগ-সুবিধা বাসিন্দারা পাচ্ছেন কি না তা দেখার দায়িত্ব কংগ্রেস কর্মীদের। অন্য কোনও দলের নয়। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে যেখানে আমারা ক্ষমতায় নেই সেখানে বাসিন্দাদের কাছে অনেক ক্ষেত্রেই ভুল বার্তা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন বামেরা রাজ্যের মানুষকে সে ব্যাপারকে ভুল বুঝিয়েছে। এখন তৃণমূলের কিছু স্থানীয় নেতা ভুল বোঝাচ্ছেন। বাসিন্দাদের বোঝানো, তাঁরা সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন কি না তা দেখতে কংগ্রেস কর্মীদেরই এগিয়ে আসতে হবে। উত্তরবঙ্গে শিল্প কারখানা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যা দরকার তাঁর জন্য কর্মীরা একযোগে আন্দোলন করুন।” এ দিন সম্মেলনে উপস্থিত প্রদেশ এবং স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ যখন তৃণমূল কংগ্রেস তথা মুখ্যমন্ত্রীর কাজের সমালোচনা করেছেন তখন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন সাবিনাদেবী। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে দুর্নীতিমুক্ত করার, উন্নয়ন কাজের চেষ্টা করছেন সে জন্য তাঁকে ‘স্যালুট’। তবে তাঁর আশেপাশে অনেক আগাছা রয়েছে। তাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর মানসিকতা মিলছে না। এত দিন যে সমস্ত বাম নেতাদের কাজকর্ম নিয়ে আমরা সরব হয়েছি সেই সব দুর্নীতিগ্রস্ত লোকজন এখন তৃণমূলে আশ্রয় নিচ্ছে। তারা ওই জোট সরকারের ক্ষতি করতে চাইছে। তাদের সাবধান করছি দ্রুত এই মানসিকতা পরিবর্তন করুন।” সম্মেলনে উপস্থিত রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক সুনীলবাবু জানান, অনেকে প্রশ্ন করেন কংগ্রেস কী কাজ করছে? যে ক্ষেত্রে তাঁর উত্তর, কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারে থেকে কংগ্রেসই বিভিন্ন প্রকল্প নিচ্ছে। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই রাজ্য সরকার সে সব করছে বলে ভুল প্রচার করা হচ্ছে। সাবিনা দেবী, সুনীলবাবু ছাড়া এ দিন সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফাঁসিদেওয়ার বিধায়ক তথা ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী সুনীল তিরকি, শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত, প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কনক দেবনাথ, দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সভাপতি তথা বিধায়ক শঙ্কর মালাকার-সহ স্থানীয় নেতা, নেত্রীদের অনেকেই। তাঁদের একাংশ বিষমদ কাণ্ড থেকে পার্ক স্ট্রিটের ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেন। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা কনকবাবুর দাবি, সীমান্ত এলাকা উন্নয়ন খাতে রাজ্যকে কেন্দ্র ২০১১-২০১২ সালে প্রায় ১৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। অথচ রাজ্য খরচ করতে পেরেছে মাত্র ২২ কোটি টাকা। ইমামদের জন্য ভাতা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অথচ কংগ্রেসের ঘনিষ্ট বলে উত্তর দিনাজপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় অনেক ইমামরা সেই সুযোগ পাচ্ছেন না। বিষমদ কাণ্ডে মারা গেলে মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী, অথচ চাষিরা মারা গেলে তাঁর পরিবার কোনও সাহায্য পাচ্ছে না। রাজ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। কংগ্রেস নেতারা তার কৈফিয়ৎ চাইলে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্করবাবু এ দিন বলেন, “তৃণমূল বামেদের বিরুদ্ধে লড়াই ছেড়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নেমেছে। দল ভাঙানোর চেষ্টা করছে। এ ভাবে কংগ্রেসকে শেষ করা যায় না। তৃণমূল নেতাদের বলব সহনশীল হতে। জোট না থাকলে যে ক্ষমতায় থাকবেন না সেটা তাঁদের বুঝতে হবে।” |