|
|
|
|
|
নতুন নিম্নচাপ ছাড়া আশা নেই বৃষ্টির |
উত্তরের টানে উধাও মেঘ,
দক্ষিণে বাড়বে দহন
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে দড়ি টানাটানির খেলায় শেষ পর্যন্ত জিতে গেল উত্তর!
গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে থাকা নিম্নচাপ অক্ষরেখা নিয়ে একটানা সাত দিন ধরে লড়াই চলছিল দুই বঙ্গের মধ্যে। প্রথম থেকেই উত্তরের দিকে ঝুঁকে ছিল পাল্লা। রবিবার তা পুরোপুরি ঢলে পড়ল সে-দিকেই। নিট ফল, কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা কমে গেল। অবশ্য সাত দিনের দড়ি টানাটানিতে নিম্নচাপ অক্ষরেখা অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ায় উত্তরবঙ্গ আর কতটা বৃষ্টি পাবে, তা নিয়েও সংশয় আছে আবহবিদদের।
আর দক্ষিণবঙ্গে?
চূড়ান্ত অস্বস্তি থেকে আপাতত রেহাই নেই। রবিবার কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। আবহবিদেরা বলছেন, নিম্নচাপ অক্ষরেখা দুর্বল হয়ে উত্তরবঙ্গের দিকে সরে যাওয়ায় আজ, সোমবার থেকে মহানগর এবং সংলগ্ন এলাকায় মেঘের আনাগোনা
কমে যাবে। তাই পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকবে তাপমাত্রা। বাড়বে দহন।
অথচ গত মাসেও পরিস্থিতি এমনটা ছিল না। দক্ষিণবঙ্গ এপ্রিলে পাঁচ-পাঁচটি কালবৈশাখী পেয়েছে। ওই মাসের প্রথম ২০ দিনে স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছিল দক্ষিণবঙ্গে। কিন্তু মে মাসে এ-পর্যন্ত মাত্র একটি কালবৈশাখী হয়েছে। তার জেরে কলকাতায় শেষ বৃষ্টি হয়েছে ৪ মে। তার পরে টানা ন’দিন মহানগরী ও সংলগ্ন এলাকায় আদৌ বৃষ্টি নেই। সাত দিন আগে বৃষ্টির সম্ভাবনা জাগিয়ে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হয়েছিল গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু তার লাভটা পুরো নিয়ে গেল উত্তরবঙ্গ। অক্ষরেখাটিকে নিয়ে দুই বঙ্গের লড়াইয়ে বাঁকুড়া আর পুরুলিয়া কিছুটা বৃষ্টি পেলেও কলকাতার ভাগ্যে ছিটেফোঁটাও জোটেনি।
মে মাসের প্রথম চার দিন ঘূর্ণাবর্ত এবং নিম্নচাপ অক্ষরেখার যুগলবন্দিতে আকাশে ঘন মেঘ থাকায় দক্ষিণবঙ্গে তাপমাত্রা তেমন বাড়তে পারেনি। তার পরে ঘূর্ণাবর্তটি দুর্বল হয়ে পড়লেও নিম্নচাপ অক্ষরেখাটি রয়েই গিয়েছিল।
আর সেটাকে নিয়েই শুরু হয়েছিল টানাপোড়েন। উত্তরের টানটাই ছিল শক্তিশালী। তার ফলে গত কয়েক দিন ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হয়েছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়।
উত্তরবঙ্গে যে-মেঘ বৃষ্টি নামিয়েছে, তা উড়ে গিয়েছে কলকাতার উপর দিয়েই। নিম্নচাপ অক্ষরেখা মেঘ টেনে এনেছে বঙ্গোপসাগর থেকে। উত্তর দিকে যাওয়ার পথে সেই মেঘ কলকাতায় কিছুটা ছায়া দিয়ে গিয়েছে
মাত্র। তা থেকে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টিরও আশা জেগেছিল। কিন্তু বৃষ্টি হয়নি। কেন?
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, ঝড়বৃষ্টি নামাতে গেলে মেঘের ঘনত্ব যতটা হওয়া দরকার, ওই নিম্নচাপ অক্ষরেখার মেঘ কলকাতা তথা দক্ষিণবঙ্গের উপরে থাকাকালীন ততটা জমাট, তেমন পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেনি। সেই মেঘই বৃষ্টি নামানোর মতো পরিপূর্ণতা পেয়েছে উত্তরবঙ্গের শেষ সীমানায় পৌঁছে। ওই মেঘের
কিছুটা অংশ উত্তরবঙ্গে ঢোকার মুখে জলভারে ভেঙে গিয়েছিল। তাই সামান্য হলেও ঝড়বৃষ্টি হয়েছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া আর বীরভূমে।
দুর্বল নিম্নচাপ অক্ষরেখাটি উত্তরবঙ্গে চলে যাওয়ায় দক্ষিণে সেটির আর সক্রিয় হওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না আবহবিদেরা। তা হলে কলকাতায় বৃষ্টির কী হবে?
হাওয়া অফিস বলছে, কলকাতায় বৃষ্টির জন্য নতুন কোনও ঘূর্ণাবর্ত কিংবা নতুন নিম্নচাপ অক্ষরেখা দরকার। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের এক আবহবিদের ব্যাখ্যা, এ বছর নির্দিষ্ট সময়েই দেশে বর্ষা ঢোকার কথা। সেই অনুসারে ৮ জুন নাগাদ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে তার ঢুকে পড়ার কথা। বর্ষাকে কেরল থেকে দক্ষিণবঙ্গে নিয়ে আসার জন্য বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ কিংবা সক্রিয় ঘূর্ণাবর্তের প্রয়োজন হয়। ওই নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্ত তৈরির পরিস্থিতি শুরু হয়ে যায় মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই।
তাই হাওয়া অফিসের চোখ এখন উপগ্রহ-চিত্রের দিকে। এক আবহবিদ রবিবার জানান, এ মাসের শেষ সপ্তাহ নাগাদ বর্ষা ঢুকবে পড়বে আন্দামানে। তখন থেকেই অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু হবে। প্রাক্বর্ষার বৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হবে দক্ষিণবঙ্গে। আপাতত সেই পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু তার আগে কি কোনও আশাই নেই বৃষ্টির?
ওই আবহবিদের আশ্বাস, “এর মধ্যে যদি শক্তিশালী কোনও ঘূর্ণাবর্ত অথবা নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হয়ে যায়, সে-ক্ষেত্রে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকা তার সুফল পেতে পারে।” |
|
|
|
|
|