|
|
|
|
এক মঞ্চেই অমিতাভকে ‘কড়া বার্তা’ বুদ্ধদেবের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সরাসরি তাঁকে কিছু বললেন না। দলের কর্মীদের বললেন। কিন্তু তাতেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের ‘দাপুটে’ নেতা অমিতাভ নন্দীকে ‘কড়া বার্তা’ দিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য!
দমদমে রবিবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের আয়োজনে জনসভায় হাজির ছিলেন অমিতাভবাবু। অন্যতম বক্তাও ছিলেন তিনি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু পৌঁছতেই মঞ্চের আসন ছেড়ে প্রথামাফিক উঠে দাঁড়ালেন প্রাক্তন সাংসদ। কিন্তু বুদ্ধবাবু তাঁর দিকে এক বার ফিরেও তাকালেন না! জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে বসে পড়লেন অমিতাভবাবুর থেকে দু’টি আসন দূরে! তখনই মঞ্চে উঠলেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক গৌতম দেব। গিয়ে বসলেন বুদ্ধবাবুর ডান দিকের আসনে। ডান দিক ফিরে বুদ্ধবাবু তাঁর সঙ্গে কথা বললেন। বাঁ দিকে অমিতাভবাবু তখন একাই বসে! |
|
এ ভাবেই বজায় থাকল ‘দূরত্ব’। দমদমের সভায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও অমিতাভ নন্দী।
রয়েছেন গৌতম দেবও। রবিবার রাজীব বসুর তোলা ছবি। |
বুদ্ধ-গৌতম যুগলবন্দির ‘অভিযানে’ই রাজ্য সম্মেলনে সিপিএমের রাজ্য কমিটি থেকে বাদ পড়েছিলেন অমিতাভবাবু। কেন তাঁকে ছেঁটে ফেলা হল, সেই কারণ জানানোর দাবি করে তখন থেকেই রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরব প্রাক্তন সাংসদ। কিন্তু তার ‘ফল’ ফলেছে অন্য ভাবে! উত্তর ২৪ পরগনার নতুন জেলা সম্পাদকমণ্ডলী থেকে বাদ পড়েছেন অমিতাভ-ঘনিষ্ঠ কয়েক জন নেতা-নেত্রী। ‘ক্ষুব্ধ’ অমিতাভবাবু নিজেও জেলা সম্পাদকমণ্ডলী থেকে ‘অব্যাহতি’ চেয়েছেন। তবে জেলায় দলের ‘ঐক্য’ ধরে রাখতে অমিতাভবাবুকে ‘দায়িত্ব’ পালন করে যাওয়ার আর্জি জানিয়েছেন গৌতমবাবু। খোদ জেলা সম্পাদকের উপস্থিতিতে এ দিন উত্তরের ‘গোষ্ঠী-ভারসাম্য’ যথাসম্ভব বজায় রাখার চেষ্টা হল। অমিতাভবাবু বক্তা, তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ এবং জেলা সম্পাদকমণ্ডলী থেকে সদ্য বাদ-পড়া পল্টু দাশগুপ্ত সভাপতি। আবার গৌতমবাবু যাঁদের এ বার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে এনেছেন, ‘তরুণ ব্রিগেডে’র দুই নেতা সোমনাথ ভট্টাচার্য, পলাশ দাসও মঞ্চে! আবার অমিতাভবাবু বক্তৃতা করার সময় তাঁর ছেড়ে-যাওয়া আসনে গিয়ে বসলেন জেলা কমিটির সদস্য রমলা চক্রবর্তী। যাঁর প্রয়াত স্বামী সুভাষ চক্রবর্তীর জীবদ্দশায় অমিতাভবাবুর সঙ্গে ‘দ্বন্দ্ব’ জেলা সিপিএমে সুবিদিত ছিল! অমিতাভবাবুর বক্তৃতা শেষে তাঁর সঙ্গে বুদ্ধবাবুর ‘দূরত্ব’ যে এক আসন কমে গেল, তার সৌজন্যে রমলাদেবীই!
দলের কর্মীদের উদ্দেশে বুদ্ধবাবুর এ দিন সাফ ‘বার্তা’ “আমরা মানুষের সেবা করতে চাই, মাতব্বরি করতে চাই না! যেখানে মাতব্বরির প্রবণতা দেখা দিয়েছিল, মানুষ পছন্দ করেননি। সেই মানুষের কাছেই আমাদের আবার যেতে হবে মাথা নিচু করে!” প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর আরও ঘোষণা, “মানুষ আমাদের যে ভাবে দেখতে চান, সেই ভাবেই পার্টিকে তৈরি করছি। আপনারা সমর্থন করুন।” বুদ্ধবাবু যখন এই আহ্বান জানাচ্ছেন, মঞ্চে বসেই অমিতাভবাবু অন্য দিকে তাাকিয়ে! দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা, বুদ্ধবাবুর এই স্পষ্ট বার্তা অমিতাভবাবুর মতো নেতা-কর্মীদের একাংশের প্রতি ইঙ্গিত করেই। দল সরকারে থাকার সময় যাঁদের ‘ভাবমূর্তি’ নিয়ে জনমানসে প্রশ্ন ছিল।
জেলা সম্পাদক গৌতমবাবুর সঙ্গেও এ দিন বিশেষ কথাবার্তায় যাননি অমিতাভবাবু। মঞ্চে ঠিক দু’বার একটি প্রসঙ্গে সামান্য বাক্যালাপ ছাড়া। গৌতমবাবুও তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন, “আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে। সংশোধিত হতে হবে।” একই দিনে উত্তর ২৪ পরগনা জেলাতেই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকার বলেছেন, দলের এক শ্রেণির নেতা-কর্মীর আচরণের জন্যও মানুষ বামফ্রন্টের প্রতি বিরূপ হয়েছিলেন।
শীর্ষ নেতৃত্বের এই মনোভাব বুঝে অমিতাভবাবু এর পরে কোন পথে হাঁটেন, তা-ই দেখতে চায় সিপিএমের জেলা রাজনীতি! |
|
|
|
|
|