|
|
|
|
|
|
|
বিষয়: রসনা-বিহার |
আমি একবারেই রান্নাবান্না করতে পারি না। কিন্তু এটা জোর গলায় বলতে পারি যে আমি খেতে ভীষণ ভালবাসি, আর তাই, আমি হলাম এক জন স্বঘোষিত খাদ্যরসিক। এবং অন্যান্য খাদ্যরসিকদের মতো আমিও দেখাতে চাই যে খাবারদাবার সম্পর্কে আমি কত কী জানি। তা হলে শুরু করা যাক। প্রথমেই আসি আমার পছন্দের খাবারের প্রসঙ্গে। সেটি কিন্তু কোনও চিনা, বাঙালি, ভারতীয় বা কন্টিনেন্টাল খাবার নয়। পদটি হল বর্মার, যাকে ইংরেজিতে মায়ানমার বলে। ডিসটির নাম ‘খো সুই’ (khoy suey)। এটি এক ধরনের ঘন সুপ, যেটি একটি পাত্রে নুডলস্ ও মুরগির মাংস সহযোগে পরিবেশন করা হয়। কলকাতায় খুব কম জায়গাতেই এটা পাওয়া যায়। আমি রাসমণিকে দিয়ে এটা অনেক বার বানাবার চেষ্টা করেছি কিন্তু এ পর্যন্ত ও এটা শিখে উঠতে পারেনি। ওহো, রাসমণি কে সেটাই তো বলিনি। ও আমাদের বাড়িতে বহু বছর ধরে রান্না করছে। তাই প্রতি মাসেই অন্তত এক বার করে আমি এটা খেয়ে আসি অন্য জায়গা থেকে। ঢাকুরিয়া ব্রিজ এবং যাদবপুর থানার মধ্যে একটি ছোট্ট রেস্তোরাঁয় এই খাবার পাওয়া যায়। এর নিরামিষ সংস্করণটিও রয়েছে। তবে আমি সেটা কোনও দিন চেখে দেখিনি।
আমার পছন্দের দ্বিতীয় অভারতীয় বা অবাঙালি রান্না হল কী হতে পারে বলো তো? সম্ভবত সুসি। এটি একটি নামকরা জাপানি খাবার। তুমি যদি খাবার নিয়ে বেশি পরীক্ষানিরীক্ষা করতে না ভালবাস তা হলে কখনওই সুসি খেতে যেয়ো না। ভাতের রোলের মধ্যে সামুদ্রিক আগাছায় মোড়া কাঁচা মাছের রান্নাকে বলে সুসি। এক বার কয়েক জন ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে সুসি খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিলাম। খাবারটা দেখে তারা মোটেই খিশি হয়নি, আমাকে অনুযাগের সুরে বলেছিল, ‘ডেরেক, তুমি আমাদের কাঁচা মাছ খেতে দিচ্ছ? অসম্ভব! পারব না ভাই।’
তবে এগুলো ছাড়াও আরও অনেক রান্নাই আমি ভালবাসি। যেমন, পারশে বা পাবদা মাছের ঝোল, যা রাসমণি সপ্তাহের পর সপ্তাহ আমাদের রেঁধে দেয়। কিংবা ধরো প্রতি রবিবার মায়ের হাতের মুরগির মাংস। অথবা কয়েক মাস অন্তর আমার বন্ধুর স্ত্রী-এর টিফিন বাক্সে করে পাঠানো চিতল মুইঠ্যা। আমি নিশ্চিত, যে এই সব শোনার পর নিশ্চয়ই তোমাদের জিভে জল চলে আসছে। |
|
|
লঙ্কার মতো চা-ও কিন্তু ভারতে জন্মায়নি প্রথমে। যদিও এর উৎপত্তি সম্পর্কে তেমন নিশ্চিত তথ্য
মেলে না।
প্রায় দশ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চিনে প্রথম চা খাওয়ার ব্যাপারে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। ব্রিটিশরা
ভারতে দার্জিলিং
এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চায়ের চাষ করে। এই সমস্ত অঞ্চলের আবহাওয়া
বছরের
বেশির ভাগ সময়টাই মোটামুটি ঠাণ্ডা থাকে, যা চা চাষের পক্ষে
আদর্শ। |
|
|
জানো কি |
• আদিম মানুষ এ দিক-ও দিক থেকে কুড়িয়ে-বাড়িয়ে খাদ্য সংগ্রহ করত। তারা নিজেরা সে ভাবে বড় জীবজন্তু তেমন শিকার-টিকার করত না। বরং যখন অন্যান্য শিকারজীবী প্রাণী কোনও শিকার ধরত বা কোনও প্রাণী এমনিই মারা যেত, তখন তারা সেখান থেকে নিজেদের খাবার জোগাড় করত। এ ছাড়া ফলমূল, বাদাম, জীবজন্তুর ডিম প্রকৃতিতে যা পাওয়া যেত, সেগুলিও তারা খেত।
•
আজ থেকে প্রায় কুড়ি লক্ষ বছর আগে শুধু সংগ্রাহক থেকে মানুষ ধীরে ধীরে শিকারি ও সংগ্রাহক সম্প্রদায়ে বিবর্তিত হয়। তত দিনে তারা শিকারের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তৈরি করতে শিখে গিয়েছে। সময় যত এগিয়েছে, ধীরে হলেও ক্রমে ক্রমে আরও উন্নত হতে থেকেছে মানুষ। মোটামুটি আশি হাজার বছর আগের কথাই ধরা যাক। এই সময় মানুষ আরও কিছুটা উন্নত শিকার সরঞ্জাম তৈরি করতে শিখে গিয়েছিল। যেমন, মাছ ধরার জাল, ছিপ, হারপুন ইত্যাদি। এর ফলে তারা আরও নিপুণ ভাবে শিকার ধরতে সক্ষম হত। এতে খাদ্যের বৈচিত্র্যও বেড়েছিল।
•
নব্য প্রস্তর যুগে, অর্থাৎ প্রায় দশ হাজার বছর আগে মানুষ আস্তে আস্তে ফল, ফুল, শাকসবজি ফলানো ও বিভিন্ন ধরনের কৃষির গুরুত্ব বুঝতে শুরু করে। যদিও চাল কিংবা গমের মতো শস্যের চাষ করা শিখতে বা জানতে তাদের আরও কয়েক হাজার বছর সময় লেগেছিল। প্রায় ৫৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সুমেরীয়রাই (দক্ষিণ মেসোপটেমিয়া বা বর্তমান ইরাক অঞ্চলে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল তার নিবাসীরা) নাকি প্রথম জমিতে চাষ করা শুরু করে। সেটা মোটামুটি ভাবে ব্রোঞ্জ যুগের প্রথম দিক। তবে শুধু চাষ নয়, বড় মাপের নিবিড় চাষাবাদ, সংগঠিত সেচব্যবস্থা ও প্রশিক্ষিত শ্রমিক ব্যবহারের মতো কৃষি কৌশলও তাদের উদ্যোগেই শুরু হয়। এই সময় থেকেই চাষবাষের প্রাধান্য বাড়তে থাকে।
•
ভারত বিশাল দেশ। আর এখানকার রন্ধনপ্রণালীতেও রয়েছে হরেক বৈচিত্র্য। আমাদের কতগুলো রাজ্য বলো তো? ফলে ভৌগোলিক কারণেই বলো বা সংস্কৃতিক পার্থক্যেই জন্যেই বলো, রান্নার বৈচিত্র্য তো থাকবেই। সংক্ষেপে বলতে গেলে এই বৈচিত্র্যই হল আমাদের ভারতীয় রান্নার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক। তোমরাই বলো, তা হলে ‘ইন্ডিয়ান কুইজিন’ অর্থাৎ ‘ভারতীয় রান্না’ কথাটি কি সেই অর্থে ঠিক? ভাতের কথাই ধরো। ভাত তো সেই অর্থে আমাদের প্রধান খাদ্য। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষই প্রতি দিন ভাত খায়। অথচ আমাদের দেশে সাধারণ ভাতই কত জায়গায় কত রকম ভাবে রান্না করে খাওয়া হয়।
• ভাত ছাড়াও ভারতীয়রা নানা ধরনের শুঁটিজাতীয় খাবার প্রচুর খায়। যেমন, কাবুলি ছোলা, তুর ডাল, মুগ ডাল, অহড়র ডাল ইত্যাদি। তা ছাড়া, সারা বিশ্বে মোট যতটা শুঁটিজাতীয় দানা উৎপাদন হয় তার এক চতুর্থাংশই আসে ভারত থেকে।
• একটি নামকরা ব্রিটিশ ইংরেজি অভিধান অনুসারে ‘roti’ কথাটির অর্থ হল ‘bread, especially a flat round bread cooked in a griddle’. অর্থাৎ গোলাকার রুটি যা কোনও তাওয়া বা চাটুতে সেঁকে তৈরি করা হয়। অর্থটা ঠিকই। কিন্তু সারা ভারত ঘুরলে কয়েকশো রকমের রুটি পাওয়া যাবে! আর, এই তালিকা থেকে রুটিরই জাতভাই, পরোটাকেই বা বাদ দিই কেন?
• ভারতীয় রান্নার বৈচিত্র্যের আর একটি বড় ব্যাপার কী জানো? মশলা। এক এক জায়গায় এক এক রান্নার এক এক রকম মশলা লাগে। শুকনো লঙ্কা থেকে শুরু করে সরষে দানা, জিরে, হলুদ, মেথি, হিং, আদা, ধনে, রসুন, গরম মশলার গুঁড়ো, তেজপাতা, কারি পাতা, জাফরান, জায়ফল রান্না অনুসারে মশলা পড়ে। আর সেই থেকেই আসে এই ভিন্ন স্বাদ। এই সূত্রে বলে রাখি, লঙ্কার জন্ম কিন্তু আমেরিকায়। ১৪৯৩ সালে কলম্বাস যখন দ্বিতীয় বার ওয়েস্ট ইন্ডিজ-এ নৌসফরে যান তখন তাদেরই এক ডাক্তার অভিযাত্রী এটি সেখান থেকে প্রথম স্পেন-এ নিয়ে আসেন। এর ঔষধিক গুণের কথাও তিনিই প্রথম উল্লেখ করেন। পর্তুগিজরা যখন ভারতে আসে তখন তারা এর গাছ ভারতে আনে, এর চাষ করে। এই ভাবেই ভারতের মাটিতে লঙ্কার আবির্ভাব।
• ভারতীয় রন্ধনপ্রণালীতে কিন্তু অনেক অভারতীয় রান্নার ঐতিহ্যও মিশে আছে। মোগলরা এক কালে আমাদের দেশ শাসন করত। তাদের থেকেই তো শিক কাবাব, মুর্গ মশলা, শামি কাবাব, বিরিয়ানি বাদশাহির মতো মোগলাই খাবারের চল শুরু হয়েছে। তার পর ধরো পর্তুগিজ। তারা এক সময় ভারতে আসে এবং উপনিবেশ গড়ে তোলে গোয়ার মতো বেশ কয়েকটি জায়গায়। তারাও তাদের রান্নার ধরন তৈরি করে এখানে। নিজাম, যারা মধ্য এশিয়া থেকে এসে হায়দরাবাদে বসবাস শুরু করে তাদেরও বিশেষ ধরনের রান্নার প্রণালী রয়েছে আমাদের ভারতীয় খাবারে। অ্যাংলো ইন্ডিয়ানরা সংখ্যায় কম হলে কী হবে, তাদের কিছু বিশেষ রান্নাও পেয়ে যাবে বৈচিত্র্যময় খাদ্য প্রণালীতে। আর বাঙালিদের মধ্যে ‘ঘটি না বাঙাল’ কার রান্না বেশি সুস্বাদু সেই নিয়ে তো আজও ঝগড়ার শেষ নেই।
• শেষ পাতে মিষ্টি। মূল খাবারের মতোই এই শেষ পাতটাও এক অঞ্চল থেকে আর এক অঞ্চলে আলাদা হয়। যেমন ধরো, পূর্ব ভারতে লোকে খাওয়ার শেষে এক গ্লাস করে দুধ খায়। কুলফি ভারতীয়দের পছন্দের এক প্রকারের আইসক্রিম। উত্তর ভারতে এই গরমে কিন্তু খাওয়ার শেষে কুলফি চাই-ই চাই। তেমনই অন্ধ্রপ্রদেশের বেঙ্কটেশ্বর ঠাকুরের মন্দিরের বিখ্যাত প্রসাদ হল তিরুপতি লাড্ডু। এই লাড্ডুর এমনই অভিনব বৈশিষ্ট্য রয়েছে যে এর ‘জিয়োগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন’ তকমা রয়েছে। ‘জি আই’ রাইট থাকলে একমাত্র ওই অঞ্চলেই জিনিসটি তৈরি ও বিক্রি করা যাবে। ও হ্যাঁ, চাটনি বাদ পড়ে গেলে চলবে কেন? বাঙালির নেমন্তন্ন শেষ হয় চাটনি সহযোগে কমপক্ষে দু’তিন রকম মিষ্টি দিয়ে। |
|
বলো তো |
১ দেশি মাহোবা, মঘাই এবং জগন্নাথ কীসের বিভিন্ন প্রকার?
২ প্রাক্তন ব্রিটিশ বিদেশ সচিব রবিন কুক-এর মতে, ব্রিটেনের সত্যিকারের জাতীয় খাবার কী?
৩ কোন ধরনের পানীয় বাজারে ‘মাইসোর নাগেটস’ নামে
বিক্রি হয়?
৪ কোন ভারতীয় খাদ্য প্রথম জিয়োগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন পেটেন্ট রাইট লাভ করে?
৫ কনকচূড় ধান দিয়ে কোন সুস্বাদু খাবার তৈরি করা হয়? |
|
উত্তর |
১) পান পাতা ২) চিকেন টিক্কা মসালা ৩) কফি বিন ৪) দার্জিলিং চা ৫) জয়নগরের মোয়া। |
|
|
|
|
|
|