‘ঘুরে দাঁড়াতে’ দাসপুরে জিততে মরিয়া সিপিএম
‘পরিবর্তিত’ রাজ্যপাটে দলের ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র বার্তা দিতে দাসপুর বিধানসভা উপ-নির্বাচনে জিততে মরিয়া পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। তাই প্রচারের ক্ষেত্রেও বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে দাসপুরে। দাসপুরের আসন দখলে আনতে পারলে এক দিকে যেমন এ জেলায় সিপিএম ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র অক্সিজেন পাবে, তেমনই দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতেও ‘গুরুত্ব’ বাড়বে জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের। দলীয় সূত্রের খবর, উপ-নির্বাচনের এই বাড়তি ‘গুরুত্ব’ বুঝেই দাসপুরের প্রচার-কর্মসূচি দেখভালের জন্য শনিবারের বৈঠকে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর চার-চার জন সদস্যকে ‘বিশেষ’ দায়িত্ব দিয়েছেন দীপকবাবু। তাঁদের সঙ্গে নিজেও জোর-কদমে মাঠে নেমেছেন। দলীয় সূত্রে খবর, দাসপুরের উপ-নির্বাচনের জন্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুভাষ দে, সুবোধ রায়, অশোক সাঁতরা ও মেঘনাদ ভুঁইয়াকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, প্রার্থী সমর মুখোপাধ্যায়ও সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীরই সদস্য।
একটা উপ-নির্বাচনের জন্য কেন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর চার-চার জন সদস্যকে ‘বিশেষ’ দায়িত্ব দেওয়া হল? দলের এক জেলা নেতা বলেন, “পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত। আমাদের দলে প্রতিটি নির্বাচনের ক্ষেত্রেই এ ভাবে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন হয়।” ২০১১-এর নির্বাচনে দাসপুর থেকে ৫৪.৭৬ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রায় ২৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী অজিত ভুঁইয়া। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও জেলার মধ্যে একমাত্র দাসপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছিল তৃণমূল। তবুও এ বার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী সিপিএম। দলের ‘তরুণ’ প্রার্থী সমরবাবুর দাবি, “প্রচারে বেরিয়ে ভাল সাড়া পাচ্ছি। মানুষ সঙ্গে আছেন। আমরা জিতবই।” সিপিএমের জেলা নেতৃত্বও মনে করছেন, গত এক বছরে রাজ্যের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ভোটারদের একাংশ আর তৃণমূলকে সমর্থন করছেন না। তা ছাড়া, দাসপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির কাছ থেকেও এলাকাবাসীর প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। গরিব মানুষ তাঁদের ন্যূনতম প্রাপ্যের ক্ষেত্রে বঞ্চিত। বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জল, সেচের সমস্যা রয়েছে। এই পরিস্থিতির প্রভাবও ভোটবাক্সেও পড়বে বলে দাবি সিপিএম নেতৃত্বের। সেই সঙ্গে তৃণমূলের গোষ্ঠী-কোন্দলের সুযোগ নিতেও হিসাব কষছেন সিপিএম নেতারা।
দলের এক জেলা নেতা বলেন, “ভুললে চলবে না, ২০০৬-এর নির্বাচনে দাসপুর থেকে আমরাই জিতেছিলাম। এ বারই বা না-জেতার কী আছে! কিছু মানুষ ভুল বুঝে আমাদের থেকে সরে গিয়েছিলেন। রাজ্যের ক্ষমতায় তৃণমূলকে দেখতে চেয়েছিলেন। এখন তাঁদের ভুল ভাঙছে।” পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০০৪-এর লোকসভা নির্বাচনেও দাসপুর থেকে ৬৯.৯১ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন বাম-প্রার্থীই। তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছিলেন মোটে ২৯. ৯৬ শতাংশ ভোট। ২০০৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্য বিজয়ী সিপিএম প্রার্থীর প্রাপ্তি ছিল ৪৯.৩ শতাংশ ভোট। তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছিলেন ৪৬.৮ শতাংশ ভোট। গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী পান ৫৪ ৭৬ শতাংশ ভোট। সিপিএম প্রার্থী ৪২.২৪ শতাংশ। সিপিএমের এক জেলা নেতার হিসাব, “২০১১-র নির্বাচনে তৃণমূলকে সমর্থন করেছিলেন, এমন ৫ শতাংশ ভোটারও যদি এ বার আমাদের প্রার্থীকে সমর্থন করেন, তা হলেই জয় নিশ্চিত।”
সিপিএম দাসপুরের উপ-নির্বাচনকে কতটা ‘গুরুত্ব’ দিচ্ছে, তা দলের জেলা নেতৃত্বের কয়েকটি পদক্ষেপেই স্পষ্ট। ইতিমধ্যে জেলা সম্পাদক দীপক সরকার নিজে এলাকায় গিয়ে বেশ কিছু কর্মিসভা করেছেন। বাড়ি বাড়ি প্রচার শুরু হয়েছে। শনিবার দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক হয়। বৈঠকে রাজ্যের নির্দেশ মেনে সম্পাদকমণ্ডলীতে কোনও মহিলা নেত্রীকে ‘সংযুক্ত’ করা নিয়ে আলোচনা পিছিয়ে উপ-নির্বাচনে প্রচারের ‘রণকৌশল’ নিয়েই কথা হয়। ‘প্রতিকূল’ পরিস্থিতিতেও জেলায় দল ‘ঘুরে দাঁড়াচ্ছে’ দাবি করে সদ্য-প্রচারিত জেলা-পার্টি চিঠিতে বলা হয়েছিল, ‘নজিরবিহীন প্রতিকূলতার মধ্যেই প্রাথমিক বিহ্বলতা কাটিয়ে অন্যান্য এলাকার মতই জেলার কমরেডরা ধৈর্য্য সহকারে রাজনৈতিক পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায়ী কার্যক্রম চালিয়ে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। ঘুরে দাঁড়ানোর এই প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রেখে এগিয়ে যেতে হবে। সন্ত্রাসের বাতাবরণকে সুকৌশলে অতিক্রম করে প্রতিকূলতার মধ্যেও কাজ চালিয়ে যেতে হবে’।
দল কতটা ‘ঘুরে দাঁড়াচ্ছে’, আদৌ ‘ঘুরে দাঁড়াচ্ছে’ কি না--দাসপুরের উপ-নির্বাচনই তার পরীক্ষা। আর তা বুঝেই জিততে মরিয়া সিপিএম।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.