গত বছর এই দিনেই রাজ্যে ‘পরিবর্তন’ হয়েছিল। ২০১১ সালের ১৩ মে দুপুরের পরই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল দীর্ঘ ৩৪ বছর পরে বাম বিদায়ের ছবিটা। বিপুল জনসমর্থন নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল। সেই ‘সাফল্যে’র এক বছর পূর্তি উপলক্ষে রবিবার দুই মেদিনীপুর জেলা জুড়ে নানা কর্মসূচি পালন করল তৃণমূল ও তৃণমূলের বিভিন্ন শাখা সংগঠন। কোথাও পথচলতি মানুষকে মিষ্টিমুখ করানো হল। সঙ্গে প্রখর গ্রীষ্মে দেওয়া হল মাটির হাঁড়ির প্রাণ জুড়োনো ঠান্ডা জল। কোথাও হল মিছিল, পথসভা, কোথাও আবার রক্তদান শিবির। |
পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় রবিবার তৃণমূলের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান হয় হলদিয়ার দুর্গাচকে। কলোনি বাজারের ওই সভায় তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী ছাড়াও জেলা পরিষদের সভাধিপতি গান্ধী হাজরা, বিধায়ক রঞ্জিত মণ্ডল, অর্ধেন্দু মাইতি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বর্ষপূর্তি পালনের পাশাপাশি হলদিয়া পুরসভার দলীয় প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় সভায়। এক বছরে নিজেদের সাফল্যের খতিয়ান দিতে গিয়ে শুভেন্দু বলেন, “গত বছরও পাহাড়ে যাওয়া যেত না। জঙ্গলমহলে খুন ছিল রোজকার ঘটনা। মা-মাটি-মানুষের সরকার শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে।” আসন্ন পুরভোট প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “হলদিয়ায় এ বার ২৬-০ হবে। মানুষ লোকসভা, বিধানসভা ভোটে আমাদের পাশে ছিলেন। পুরভোটেও সকলকে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। এইচডিএ-র দায়িত্ব নিয়ে শহরকে আলোয় ভরিয়ে দিয়েছি।”
হলদিয়ার বিদায়ী পুরপ্রধান সিপিএমের তমালিকা পন্ডা শেঠকেও প্রসঙ্গক্রমে বিঁধেছেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, “ওরা পুরসভার ক্ষমতায়, আর আমরা হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের। কিন্তু তমালিকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়। ওর শাড়িতে নন্দীগ্রামের রক্ত লেগে রয়েছে।” প্রসঙ্গত, নন্দীগ্রাম নিখোঁজ-মামলায় অভিযুক্ত হয়েই আপাতত জেলবন্দি রয়েছেন সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ, তমালিকাদেবীর স্বামী লক্ষ্মণ শেঠ।
পুরভোটে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দিন কয়েক আগেই ‘অধিকারী পরিবারে’র বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন হলদিয়ার বিধায়ক শিউলি সাহা। এ দিন শিউলির নাম না-করে মামুদ হোসেন বলেন, “ভোটে জিতে কারও পাখনা গজিয়েছে। সিপিএম ও কংগ্রেসকে সুবিধা করে দিতে টিভিতে বক্তব্য রাখছে। এদের একমাত্র কাজ শুভেন্দু অধিকারীর বিরোধিতা করা। এরা নিজেদের জাতীয়তাবাদী বলে। এরা সিপিএমের থেকেও ভয়ঙ্কর।”
রবিবারই বালিঘাই ফকিরদাস হাইস্কুলে এগরা ২ ব্লক তৃণমূলের কর্মী সম্মেলনে রাজ্য সরকারের বর্ষপূর্তি উদ্যাপন হয়। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন তৃণমূল নেতা তথা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী শিশির অধিকারী। ছিলেন জেলার সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন, বিধায়ক সমরেশ দাস, অর্ধেন্দু মাইতি, দিব্যেন্দু অধিকারী, বনশ্রী মাইতি প্রমুখ। |
ডেবরার বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতি পথচলতি মানুষদের মিষ্টিমুখ করান
এ দিন। সঙ্গে ঠান্ডা জল। চন্দ্রকোনা রোড, শালবনি-সহ বিভিন্ন এলাকায় মিছিল হয়। ঘাটাল শহর, চন্দ্রকোনার ঝাঁকড়া, গোয়ালতোড়ে হয় আলোচনাসভা। সেখানে সরকারের এক বছরের ‘সাফল্যে’র খতিয়ান তুলে ধরেন তৃণমূল নেতারা। চন্দ্রকোনা রোডে দলের তরফে আয়োজন করা হয়েছিল ‘মহামিছিলে’র।
শুধু একটা দিন নয়, গোটা মাস জুড়েই বর্ষপূর্তি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “বর্ষপূর্তি পালনে কেবল রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, তার থেকেও বেশি সামাজিক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে রক্তদান শিবির, হাসপাতালে রোগীদের ফল বিতরণ, গরিব মেধাবী ছাত্রদের বই দিয়ে সাহায্য, রোগীদের চিকিৎসায় সাহায্য করা-সহ নানা কর্মসূচি। পাশাপাশি মিছিল, পথসভার মতো কিছু রাজনৈতিক কর্মসূচিও পালিত হবে।” সামাজিক কর্মসূচির মধ্যে রক্তদান শিবিরের উপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। তীব্র গরমে এমনিতেই রক্ত-সঙ্কট দেখা দেয়। বেড়ে যায় রক্তের চাহিদা। তাই জেলার ২৯টি ব্লকে ন্যূনতম একটি করে রক্তদান শিবির করার কথা বলা হয়েছে দলের তরফে। মনীষীদের নিয়ে আলোচনাসভাও করা হবে। জেলা সভাপতির কথায়, “যুবসমাজ তো মনীষীদের কথা ভুলতে বসেছে। মানুষের জন্য কিছু করলেই যে সমাজের জন্য করা হয়, দেশের জন্য করা হয়, তা তুলে ধরতে হবে।” |