নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ইপিএল শেষ হওয়ার পর দিনই ফয়সলা হবে কেপিএলের।
কলকাতা লিগের ইতিহাসে যা কখনও হয়নি তাই হয়েছে এ বার। আই এফ এ-র ব্যর্থতায় নয় মাস ধরে চলেছে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের খেলা! শুধু তাই নয় দেশের সব টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যাওয়ার পর মরসুমের শেষ ম্যাচ খেলতে নামতে হচ্ছে চারটি দলকে। আজ সোমবার কলকাতা এবং শিলিগুড়িতে তিন প্রধান এবং প্রয়াগ ইউনাইটেড খেলতে নামছে দু’টি ম্যাচে। যুবভারতীতে ইস্টবেঙ্গল বনাম মহমেডান, কাঞ্চনজঙ্ঘায় মোহনবাগান মুখোমুখি প্রয়াগ।
লিগ টেবিলের যা পরিস্থিতি তাতে ই পি এলের দুই ম্যাঞ্চেস্টারের মতোই অবস্থা ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের। তবে আজ ট্রেভর মর্গ্যানের ইস্টবেঙ্গলরই অ্যাডভান্টেজ। লাল-হলুদের কোচ রবিবার অনুশীনের পর বলেই দিয়েছেন, “আমরা নিজেরা যদি না হারি কেউ আমাদের হারাতে পারবে না। লিগের রাশ আমাদেরই হাতে।” টোলগে-পেনরা জিতলেই মরসুমের দু’নম্বর খেতাব ঢুকে যাবে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে। কিন্তু ড্র করলে বা হারলেই উল্টে যাবে সব অঙ্ক। তখন মর্গ্যানকে তাকিয়ে থাকতে হবে সুব্রত ভট্টাচার্যের টিমের দিকে। ইস্টবেঙ্গল পয়েন্ট নষ্ট করলে এবং মোহনবাগান জিতলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবেন ওডাফা ওকোলিরা। সেক্ষেত্রে দু’বছর পর কোনও খেতাব ঢুকবে গঙ্গাপারের তাঁবুতে। সে সম্ভাবনা অবশ্য খুবই ক্ষীণ। |
লাল-হলুদে টোলগের শেষ প্র্যাক্টিস। রবিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
নেপাল থেকে অনেক ঝামেলার পর বিকেলের দিকে শিলিগুড়ি পৌঁছেছে মোহনবাগান। নেপালের বিভিন্ন জায়গায় বনধ চলায় দলের সঙ্গে যাওয়া দুই বিদেশি হাদসন লিমা এবং ফিজিও জোনাথনের ইমিগ্রেশান নিয়ে বিস্তর ঝামেলা হয়। তিনটি মোটবাইকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে পানিট্যাঙ্কি থেকে তাদের ভারতে ঢোকার ছাড়পত্র জোগাড় করেন সুনীল ছেত্রী। ফলে কোনও অনুশীলন হয়নি। তাও ম্যাচটা জিততে চাইছেন সুব্রত। ফোনে ধরা হলে বলে মোহন টিডি বলে দিলেন, “আমরা তো জিতি। তারপর যা হয় হোক।” কিন্তু মজার ব্যাপার হল মর্গ্যান এবং সুব্রত যাদের হারানোর জন্য মরণপণ যুদ্ধে নামছেন তাদের মরসুমে একবারও হারাতে পারেননি। ফেড কাপে ইস্টবেঙ্গল ড্র করেছিল মহমেডানের সঙ্গে। আর আই লিগের দু’টো ম্যাচেই ইউনাইটেড হারিয়েছিল ব্যারেটো-ওডাফাদের।
পুরানো অঙ্কের সঙ্গে অবশ্য বর্তমানের কোনও মিল নেই। ম্যাচটি জিততে মরিয়া ইস্টবেঙ্গল কোচ কোনও ঝুঁকিই নিতে রাজি নন। তিন বিদেশি তো আছেই, ৪-৩-৩ ফর্মেশনেও টিম নামিয়ে দিচ্ছেন ব্রিটিশ কোচ। সামনে টোলগে-রবিন-লেন। মাঝমাঠে খাবরা, মেহতাব, পেন। ডিফেন্সে নির্মল, ওপারা, রাজু, রবিন্দর। গোলে সন্দীপ। মর্গ্যানের প্রতিদ্বন্দ্বী মহমেডান অবশ্য নামছে এক বিদেশি আলফ্রেডকে নিয়ে। মাইনে দিতে হবে বলে অন্য দুই বিদেশি হাসান এবং স্ট্যানলিকে ছেড়ে দিয়েছেন কর্তারা। কোচ অলোক মুখোপাধ্যায় বললেন, “তিন বিদেশি থাকলে লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি হত। অন্য ছেলেরা খুব ভাল ফর্মে আছে।” আলফ্রেডকে সামনে রেখে পাঁচ মিডিও নিয়েই যুদ্ধে নামছে মহমেডান।
আজ সোমবার খেলার পর রাতেই ছুটি কাটাতে দেশে ফিরে যাচ্ছেন মর্গ্যান। বিমানে ওঠার আগে কলকাতা লিগ পকেটে পুরে নিয়ে যেতে চান তিনি। ফুটবলারদের বলে দিয়েছেন, “যে করেই হোক ম্যাচটা জিততে হবে। চ্যাম্পিয়ন হতে হবে। মর্গ্যান দেশ থেকে ফিরবেন মাস খানেক পরে। তাঁর স্বদেশীয় টোলগে ওজবের অবশ্য লাল-হলুদ জার্সি পরে আজই শেষ ম্যাচ।
মোহনবাগানে চলে যাওয়া নির্মল ছেত্রী এ দিন ড্রেসিংরুমে এসে সব সতীর্থ ফুটবলারকে সই করিয়েছেন জার্সিতে। ফেসবুকে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের ভালবাসা চেয়েছেন পরের বছরের জন্যও। পেশাদার টোলগে অবশ্য কিছুই বুঝতে দেননি। দুই লাল-হলুদ সমর্থক তাঁকে ক্লাবের লোগো দেওয়া স্মারক উপহার দিতে গেলে তিনি অবশ্য বলে দিয়েছেন, “আমি তো কলকাতাতেই থাকছি!” ঘনিষ্ঠ সতীর্থদের অবশ্য টোলগে ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউরোপে ছুটি কাটানোর পর কলকাতায় ফিরলেও ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুমে ফিরছেন না। বলে দিলেন, “লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। সমর্থকদের আনন্দ দিতে চাই।”
সঞ্জয় সেনের দলের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে অবশ্য মোহনবাগানে নানা ঝামেলা। কাঠমান্ডু থেকে ঘুরপথে গোলগোলিয়া সীমান্ত দিয়ে ফেরার পথে ইমিগ্রেশন সমস্যায় পড়েন লিমা এবং জোনাথন। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা যায় তা মেটাতে। সকাল ন’টায় রওনা দিয়ে দুপুর সাড়ে তিনটেয় শিলিগুড়ি পৌঁছন সংগ্রাম, সুরকুমাররা। তার আগেই অবশ্য কলকাতা থেকে হোটেলে পৌছে যান ওডাফা ওকোলি। অনুশীলন না হওয়ার চেয়েও দলের চোট আঘাত নিয়ে চিন্তিত সুব্রত। কার্ডের জন্য কিংশুক আসেননি। আনোয়ারের চোট। ব্যারেটো নেই। মোহন টিডি বললেন, “যারা আছে তাদের নিয়েই জেতার চেষ্টা করতে হবে।” মোহনবাগানের প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনাইটেড অবশ্য পুরো শক্তি নিয়েই নামছে। কোনও চোট নেই। কোনও আঘাত নেই। কোচ সঞ্জয় সেন বললেন, “আমাদের হারানোর কিছু নেই। চাপ মোহনবাগানের। লিগে কবে শেষ ম্যাচ খেলেছি, ভুলে গিয়েছি। এই ম্যাচটি জিতে মরসুম শেষ করতে চাই।” ইয়াকুবুর সঙ্গে কেন ভিনসেন্টকে সামনে রেখেই যুদ্ধে নামছেন তিনি।
|
সোমবারে
কলকাতা লিগ
ইস্টবেঙ্গল: মহমেডান (যুবভারতী, ৩-৩০),
মোহনবাগান: প্রয়াগ ইউনাইটেড (কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম, ৩-৩০)। |