দু’জনের সম্পর্কটা যে ঠিক কতটা ‘মধুর’, সেটা ভারতীয় ক্রিকেটমহলে কারও অজানা নেই। এক জন বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক। অন্য জন সেই বিশ্বকাপের ফাইনালে ৯৭ করেও উপযুক্ত মর্যাদা থেকে কোথাও যেন বঞ্চিত। তার উপর আবার মাস কয়েক আগে জাতীয় দলের সহ অধিনায়কের পদ থেকে বহিষ্কৃত। এই আইপিএলে অধিনায়ক হিসেবে সাফল্য যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে নির্বাচকদের খাতায় তাঁকে সসম্মানে পুরোনো সিংহাসনে ফিরিয়ে আনতে পারে, গৌতম গম্ভীর জানেন। উল্টো দিকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিও জানেন, সোমবার ইডেন থেকে না জিতে ফেরা মানে গত দু’বারের চ্যাম্পিয়নদের প্লে অফের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা।
রবিবার দু’জনের মুখোমুখি হওয়ার কোনও ‘কাহানি’ ছিল না। বিকেল পাঁচটায় হলুদ ব্রিগেড নিয়ে সস্ত্রীক ধোনি যখন বাইপাসের হোটেলে ঢুকছেন, গম্ভীর তখন ‘প্লে স্টেশন’ নিয়ে ব্যস্ত। ম্যাচের আগের দিন অযথা টেনশন কাটানোর দাওয়াই হিসেবে নাইট অধিনায়ক বেছেছেন কম্পিউটার গেমস। ব্রেট লি-র যেমন মনে ধরল বিলিয়ার্ডস টেবলকে। স্বাভাবিক। ‘প্লে অফ’-এর স্টেশন নিয়ে সামান্য হলেও জটিলতার আবির্ভাব। রোহিত ঝড় নাইটদের দুই থেকে নামায়নি, কিন্তু একেবারে ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে’ ঠোঁট চাটছে চেন্নাই। ফারাক কিন্তু এক পয়েন্টের। |
কেন কেকেআর শনিবারের ম্যাচকে ‘দ্য ম্যাচ’ ধরছে, এর পর নিশ্চয়ই আন্দাজ করা যায়। গম্ভীর যতই বলুন, “প্লে অফের এখনও তিন ম্যাচ বাকি। চেন্নাই ম্যাচটা নিয়েই ভাবছি শুধু।” কিন্তু সে যুক্তি খুব জোরালো শোনাচ্ছে না। টিমের কেউ কেউ বলেই দিচ্ছেন, সোমবারও হারলে পরে বিস্তর ঝামেলা পোহাতে হবে। চেন্নাইয়ের পরেই যেতে হবে মুম্বই। ওয়াংখেড়েতে সচিনদের হারানো শুধু কঠিন নয়, বেশ কঠিন। বিশেষ করে রোহিত শর্মা যদি ইডেনের মতো ফর্মে থাকেন। তা হলে পড়ে থাকে পুণে। লিগের শেষ ম্যাচ। কে ঝুঁকি নেবে? যতই পুণে লিগ টেবিলের তলানিতে পড়ে থাকুক, ওই ম্যাচে ‘দাদা অ্যান্ড কোং’ মরণকামড় দিতে চাইবেই। টিমটার তো কিছুই হারানোর নেই।
সোজা বাংলায়, লিগ টেবিলে তিন বা চার হয়ে ফাইনালের রাস্তা কোনও ভাবেই কঠিন করতে চাইছে না কেকেআর। নইলে রাত পর্যন্ত ফিজিও পড়ে থাকবেন কেন ব্রেন্ডন ম্যাকালামকে নিয়ে? দেখা গেল, আঙুলের ‘স্টিচ’ এখনও খোলেনি, তবু চেষ্টা চলছে ম্যাকালামকে সারিয়ে তোলার। মুম্বই ম্যাচে বেধড়ক মার খাওয়া লি-ও আর সুযোগ পাচ্ছেন না সম্ভবত। ঢুকে পড়তে পারেন ফর্মে থাকা ডি’ল্যাঞ্জ।
এক দিনের ফারাকে ম্যাচ, দু’দলের কেউই এ দিন আর ইডেনমুখো হয়নি। টিম চেন্নাই হোটেলে ঢুকেই দৌড়ল ‘পুল’ সেশনে। রাতের দিকে স্পনসরদের অনুষ্ঠান আছে। কিন্তু তর্জন-গর্জনে তো বাধা নেই। শনিবার রাতে দিল্লির দর্পচূর্ণ একার হাতে করেছেন যিনি, সেই বেন হিলফেনহস শুনিয়ে রাখলেন, “প্রতি ম্যাচেই ভাল বল করার চেষ্টা করছি। কাল আরও করব।” অর্থাৎ, বিপক্ষকে চাপে রাখার চতুর কৌশল। আসলে ধোনির টিমের ফলাফল বিচার করলে পরিষ্কার, প্রতি বার প্রথম দিকে চাপে থেকে লিগের শেষ বেলায় জ্বলে ওঠা। গত দু’বছর ধরে যা হচ্ছে, এ বারও তাই। কোনও পরিবর্তন নেই। আইপিএলের শেষ ‘ল্যাপে’ পৌঁছে ফের ছুটছে চেন্নাই। কোনও দিন রায়নার ব্যাট ঝলসে উঠছে। কখনও জেতাচ্ছেন অ্যালবি মর্কেল। তা-ও অধিনায়ক এখনও ধোনিসুলভ কিছু করেননি। ১৪ ম্যাচ খেলে রান মাত্র ২৩৫, স্ট্রাইকরেট ১১৬। সৌরভেরও পরে। সেখানে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের যুদ্ধে ভারত অধিনায়কের চেয়ে কয়েক মাইল এগিয়ে নাইট নেতা। ১৩ ম্যাচে গম্ভীরের রান ৪৫৭, স্ট্রাইকরেট বেশ আকর্ষণীয়। ১৪৬। সঙ্গে যোগ করতে হবে নারিন-মন্ত্র। যা সব টিমকে ভোগাচ্ছে, ভোগাতে পারে চেন্নাইকেও।
স্ট্যাটিসটিক্সের যুদ্ধে পিছিয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু জনপ্রিয়তার যুদ্ধে চেন্নাই অধিনায়ক পাল্লা দিচ্ছেন গম্ভীরের সঙ্গে। রাত সওয়া আটটাতেও টিম হোটেলের লবিতে হাতে অটোগ্রাফের খাতা সমেত সাত থেকে সতেরোর দঙ্গল। অপেক্ষা, যদি এক বার দেখা মেলে ভারত অধিনায়কের। ‘ক্যাপ্টেন কুল’ নামেননি।
হোটেলের ঘরে ‘বদলা’র প্রস্তুতি? হতে পারে। চিপকের ‘ফার্স্ট রাউন্ডে’ হেরেছেন ধোনি। আজ ইডেনে গম্ভীরের বিরুদ্ধে ‘সেকেন্ড রাউন্ড’। আর বারবার ‘নকআউট পাঞ্চ’ কার-ই বা সহ্য হয়? |